◆সন্দীপ দে◆
শিলিগুড়ির প্রিমিয়ার ডিভিশনের খেলা মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গেল। আগামী ১২ ডিসেম্বর শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা। সেই কারণেই সভার আট দিন আগে থেকেই বন্ধ হয়ে গেল এই শহরের একমাত্র ফুটবল লিগ। এমন ঘটনায় শিলিগুড়ি ক্রীড়া মহলে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী খেলাধূলাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন, সেখানে তাঁর সভা কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে করে খেলা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এটাই মানতে পারছেন না শিলিগুড়ির ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা। অন্যদিকে এই ইস্যুতে আসরে নেমে পড়েছে বিজেপি ও DYFI.
প্রসঙ্গত, আগামী ৬ ডিসেম্বর পাহাড় এবং সমতল মিলিয়ে উত্তরবঙ্গ সফর করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াং দিয়ে শুরু করবেন সফর। আর ১২ ডিসেম্বর শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে সভা করে সফর শেষ করবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা কেন? কেন অরিজিৎ সিংয়ের অনুষ্ঠান হবে এই মাঠে? স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।
গত ২৬ নভেম্বর শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের ১০ দলীয় প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লিগ শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য,শিলিগুড়ি শহরে মাঠের অভাব থাকায় লিগের সব ম্যাচ হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে। সুষ্ঠুভাবে খেলা শুরুও হয়েছিল। সব ঠিকই চলছিল। কিন্তু গতকাল (শনিবার) আসন্ন সভার মঞ্চ তৈরির সরঞ্জাম স্টেডিয়ামে পৌঁছতে শুরু করে। আজ,রবিবার লিগের ম্যাচ হয়েছে। আগামীকাল,সোমবার থেকে লিগ বন্ধ। কারণ, সোমবার থেকে স্টেডিয়ামে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হবে। এমন ঘটনার ফলে মহা সমস্যায় পড়েছেন শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কর্তারা। সংস্থার সচিব কুন্তল গোস্বামী এই মুহুর্তে শিলিগুড়ির বাইরে আছেন। তাঁকে ফোন করলে তিনি “ইনসাইড স্পোর্টস”কে জানান,”লিগটা আমরা শুরু করেছিলাম। কিন্তু তা মাঝপথেই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। লিগে অংশ নেওয়া ক্লাব কর্তারা ভাড়া করে ফুটবলার নিয়ে আসেন। তাদের থাকা,খাওয়া সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আর্থিক চুক্তি করা হয়। লিগটা বন্ধ রাখার ফলে ক্লাবগুলি আর্থিক ক্ষতি হবে। এই সভাটা উত্তরকন্যা বা অন্য মাঠেও করতে পারত। তাহলে আমাদের ফুটবল লিগটা বন্ধ হত না।”
এই কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম তো শিলিগুড়ি কর্পোরেশেনর হাতে আছে। স্টেডিয়ামে সভা না করার জন্য আপনারা কি কর্পোরেশনকে আবেদন করেছেন? উত্তরে শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব কুন্তল গোস্বামী জানান,”দেখুন, সবাই জানেন এই স্টেডিয়ামে লিগ চলছে। স্টেডিয়াম এখন কর্পোরেশনের। সভার মঞ্চ তৈরির জন্য সরঞ্জাম পৌঁছে গিয়েছে। আবেদন করে আর কিছু হবে? মেয়র গৌতম দেব বলেছেন, সভার পর একদিনেই মাঠ খেলার উপযুক্ত করে দেবেন। এখন আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।”
এখন প্রশ্ন হল, মুখ্যমন্ত্রীর সভা মঞ্চ তৈরি করতে আট দিন আগে থেকে কাজ শুরু হচ্ছে। অর্থাৎ আগামীকাল,সোমবার থেকে কাজ শুরু হবে। সভার শেষে মাত্র একদিনে কি করে মাঠ খেলার উপযুক্ত করে তুলতে পারবেন গৌতম দেব? শিলিগুড়ির ক্রীড়া মহলের প্রশ্ন, বার বার কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামেই কেন সভা,জলসা হবে? গত ২১ ফ্রেব্রুয়ারি এই স্টেডিয়ামেই মুখ্যমন্ত্রীর সভা হয়েছিল। তাই নিয়ে শিলিগুড়িতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। পরে অবশ্য মাঠ নষ্ট হওয়ার কারণেই ভবিষ্যতে এই স্টেডিয়ামে এই ধরনের সভা করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়,গত ৪ এপ্রিল এই কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে আরিজিৎ সিংয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল। অবশ্য খেলার মাঠে এই ধরনের অনুষ্ঠান না করাই ভাল। খেলার মাঠে খেলাটাই হোক। সেই অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠে সংগঠকদের উদ্দেশ্যে কথাগুলি বলেছিলেন অরিজিৎ সিং। কিন্তু কোথায় কি? কেউ কথা রাখে না।
লিগ বন্ধ হওয়ার বিষয় নিয়েই আগামীকাল,সোমবার সন্ধ্যা সাতটার সময় লিগে অংশগ্রহণকারী ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কর্তারা। এদিকে, ফুটবল লিগ বন্ধ করে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম মুখ্যমন্ত্রীর সভা করার বিরুদ্ধে আসরে নেমে পড়েছেন বিজেপির স্থানীয় বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এবং DYFI. রবিবার স্টেডিয়ামের প্রধান গেটের সামনে বিক্ষোভ দেন DYFI এর কর্মীরা। অ্যাথলেটিক্সের সিন্থেটিক ট্র্যাক সহ পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়ামের দাবি নিয়ে রবিবার সকালে মিছিল করেন বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। মুখ্যমন্ত্রীর সভার দিন ধর্ণায় বসার হুমকি দিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক।
অন্যদিকে,শিলিগুড়ি কর্পোরেশনের মেয়র গৌতম দেব বলেন,”আমরা এই কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামটি সংস্করণ করতে চলেছি। খোলনোলচে পাল্টে ফেলা হবে। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এই কটা দিন ইউনিভার্সিটি মাঠ,কাওয়াখালি মাঠ বা জাভরাভিটার মাঠে লিগের ম্যাচ করতে পারে। প্রয়োজন হলে আমরা মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে কথা বলব। আর বিজেপির বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার আছে। সেই বিক্ষোভ কি ভাবে মোকাবেলা করতে হয় আমরা জানি। বিজেপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে হাত,পা ভেঙে দেব।”