সন্দীপ দে
গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বাংলার টেবল টেনিস জগতের প্রখ্যাত কোচ ভারতী ঘোষ। গত কয়েকদিন ধরেই শরীর ভাল যাচ্ছিল না প্রায় ৮০ বছরের টিটি কোচ ভারতী ঘোষের।গতকাল (শনিবার) শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শিলিগুড়ির ‘কিনস’ বেসসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মাথায় সিটি স্ক্যান করা হয়। দেখা যায়,ভারতী দেবীর ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে। মাথায় রক্ত জমে গিয়েছে। কাল বিলম্ব না করে শনিবার বিকেলেই অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর স্থিতিশীল হলেও ভারতী দেবীকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
জীবনটাই খেলার প্রতি উৎসর্গ করেছেন শিলিগুড়ির ভারতী ঘোষ। টেবিল টেনিসের শহর নামে পরিচিত শিলিগুড়ি। এই শহর থেকে, ভারতী ঘোষের হাত ধরেই উঠে এসেছেন বহু কৃতি টেবল টেনিস খেলোয়াড়। যারা দেশের হয়ে মাথা উঁচু করে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁর হাতে গড়া গণেশ কুন্ডুর সফল আত্মপ্রকাশেই শিলিগুড়ি টেবল টেনিসের নবজাগরণ ঘটেছিল। ‘অর্জুন’ মান্তু ঘোষ তাঁরই হাতে তৈরি।
এই আশি ছুঁই ছুঁই বয়সেও তিনি ছোটদের নিয়ে কাজ করে চলেছেন ভারতী ঘোষ। আগে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে প্রতিভা তুলে আনতেন। তিনি টেবল টেনিস প্রশিক্ষণ দিয়ে কখনও ছেলে-মেয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনও টাকা নিতেন না।এখনও কোনও অর্থ নেন না।
প্রশিক্ষকের ডিগ্রি না থাকলেও ভারতী ঘোষ যে ভাবে খেলোয়াড় তুলে এনেছেন তা একজন সত্যিকারের খেলোয়াড় তৈরির কারিগর হিসেবে তাঁকে দেখা হয়।
শিলিগুড়ির টিকিয়াপাড়ার মোড় থেকে দু মিনিটের হাঁটা পথেই পৌঁছে যাওয়া যাবে তাঁর প্রাণপ্রিয় ‘দেশবন্ধু স্পোর্টিং ইউনিয়ন ক্লাব’। এই ক্লাবেই এখনও নিয়ম করেই কচি-কাঁচাদের টেবল টেনিসের অ আ ক খ শেখান ভারতী ঘোষ। এই ক্লাবের সামনের আবাসনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে দশ বাই দশ ফুটের এক কামরা ফ্ল্যাটে একাই থাকেন। এখনও পযর্ন্ত তাঁর হাত ধরে প্রায় দুই হাজার টেবল টেনিস খেলোয়াড় তৈরি হয়েছেন। বাংলা তথা ভারতীয় টেবল টেনিস নিয়ে ইতিহাস লিখলে ভারতী ঘোষের অবদানের কথা লিখতেই হবে।
প্রচার বিমুখ ভারতী দেবী দেরিতে হলেও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন ২০১৯ সালে। ওই বছর তাঁকে “বঙ্গরত্ন” এবং ২০২১ সালে ক্রীড়া দপ্তরের তরফে ‘ক্রীড়া গুরু’ সম্মানে ভূষিত করা হয়। তাঁর অসুস্থতার খবরে চিন্তিত বাংলার টেবল টেনিস মহল। বিশেষ করে দেশবন্ধু ক্লাবের শিক্ষার্থীরা তাঁর বাড়ি ফিরে আসার অপেক্ষায় আছে।