ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : “ভারতীয় ফুটবল হল ঘুমন্ত দৈত্য। প্রতিভা আছে, ইতিহাস আছে, ঐতিহ্য আছে। সঠিক পরিচর্চার মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে।” ভারতে এসে ভারতীয় ফুটবল নিয়ে এই কথাগুলি বলেছিলেন ফিফার তৎকালীন সভাপতি শেপ ব্লাটার। ১৮ বছর পর ব্লাটারের করা মন্তব্যকে নিয়েই আজ,বুধবার নন্দন-৩ প্রেক্ষাগৃহে আলোচনাচক্রের আয়োজন করলেন সোসাল স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিশ্বরূপ দে। এই সংস্থা গত ২৪ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পযর্ন্ত নন্দনে ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছিল। আজ ছিল তার শেষ দিন। আর চলচ্চিত্র প্রদর্শনের শেষ লগ্নে ছিল “টক শো – ফুটবল, স্লিপিং জায়ান্ট -ইন্ডিয়া।”
এদিনের এই টক শোয়ের অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে ছিলেন, প্রাক্তন ফুটবলার সুকুমার সমাজপতি, কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার,আইনজীবী উষানাথ ব্যানার্জি, আইপিএলের কাউন্সিল মেম্বার অভিষেক ডালমিয়া এবং আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত।
“ভারতীয় ফুটবলে প্রতিভা আছে। কিন্তু সেই প্রতিভাদের সুষ্ঠুভাবে তুলে আনতে হলে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। আইএসএল ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি করেনি। বরং গ্রাসরুট থেকে কাজ করতে হবে। তবেই আমাদের ফুটবল জেগে উঠবে।” বলেছেন ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার। সুকুমার সমাজপতির গলায় একই সুর শোনা গেল। তবে আইনজীবী উষানাথ ব্যানার্জি বলেন,গুনগত মান অবশ্যই আছে। কিন্তু খেলায় রাজনীতিকরণ বন্ধ না করলে সমস্যা থেকেই যাবে।
অভিষেক ডালমিয়া ক্রিকেট প্রশাসক। তবে তিনি যে ভারতীয় ফুটবলের সব খবরই রাখেন তা তাঁর বক্তব্যের মধ্যেই স্পষ্ট হল। অভিষেকের কথায়,”শেপ ব্লাটার ভারতীয় ফুটবলকে ঘুমন্ত দৈত্য বলেছেন মানে আমাদের দেশের ফুটবলের প্রোটেনশিয়ালের কথা বলতে চেয়েছেন। এখন সময় পাল্টেছে। রিলায়েন্স বিরাট মাপের ফুটবল অ্যাকাডেমি করেছে। এআইএফএফ ২০৪৭ ভিশন নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে ভারতীয় ফুটবলের জন্য আইকন এবং বানিজ্যকরণের খুব প্রয়োজন। এটা করতেই হবে।”
আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত, অভিষেকের বক্তব্যকে সমর্থন করে বলতে থাকেন,”আমি শুনেছি, অতীতে যখন ইডেনে ফুটবল হত তখন মাঠ ভরে যেত। ক্রিকেট মাঠে লোক কম আসতো। কিন্তু ১৯৮৩ সালে কপিল দেবের নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জেতার পর ভারতীয় ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা পায়। সেই সময় ভারতীয় দলে কপিল-গাভাসকার সহ এক ঝাঁক তারকা। পরবর্তীকালে শচীন,সৌরভ, দ্রাবিড়দের পর ধোনি, বিরাট কোহলি এসেছেন। একদিকে ভারতীয় ক্রিকেট দলে তারকাদের উপস্থিতি পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতীয় ক্রিকেটের সাফল্যের ফলে ঘরে ঘরে ক্রিকেট ঢুকে পড়েছে। অন্যদিকে সৌরভ গাঙ্গুলি উঠে আসার পর বাংলার ক্রীড়া জগতে ক্রিকেটের দিকেই সবাই ঝুঁকেছে। আমাদের ফুটবলে শেষ তারকা ফুটবলার বলতে বিজয়ন, বাইচুং এবং সুনীল ছেত্রী। তারপর আর কোনও তারকা নেই। ফুটবল দশর্কদের আকৃষ্ট করার জন্য তারকা ফুটবলার দরকার। এখন যাদের নিয়ে মাতামাতি করা হয় তারা সবাই বিদেশি ফুটবলার। দেশীয় ফুটবল তারকা নেই। সেই সঙ্গে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সাফল্য। কোনও একটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট জিতলে ভারতীয় ফুটবল ঘিরে আবার উদ্দীপনা তৈরি হবে। এর পাশাপাশি দরকার ফুটবল বানিজ্যকরণ। আমরা আশাবাদী। ভারতীয় ফুটবল ফিরে আসবে।”
এদিনের টক শো’য়ে চমৎকার সঞ্চালন করলেন প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক দেবাশিস দত্ত। প্রেক্ষাগৃহ ছিল পরিপূর্ণ। শুধু টক শো’য়ের সময়টা ছিল বড্ড কম।