◆প্রয়াত ক্রীড়া প্রশাসক প্রফুল্ল শেঠের স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখছেন সুব্রত দত্ত। বুধবার জর্জটেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাব তাঁবুতে◆
◆সন্দীপ দে◆
মন ভাল নেই সুব্রত দত্তর। ময়দানের পরিবেশ ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে বলেই কি তাঁর মোহভঙ্গ হচ্ছে? তিনি কিশোর বয়স থেকে বাবা-কাকার হাত ধরে ময়দানে এসেছিলেন। কিন্তু ফুটবল প্রশাসনে সক্রিয়ভাবে এসেছিলেন ১৯৯৪ সাল থেকে। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে যিনি ময়দানের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সেই সুব্রত দত্তর এখন আর মাঠ করতে ইচ্ছে করছে না। কারণ? পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগের মতো আর ভরসা করার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। ভরসার লোক ক্রমশ কমে যাচ্ছে। যাদের বিশ্বাস করে এগিয়ে যাওয়া যায়। এমন চাঞ্চল্যকর বিবৃতি সুব্রত দত্ত নিজেই দিয়েছেন।
বুধবার বিকেলে জর্জটেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাব তাঁবুতে সদ্য প্রয়াত ক্রীড়া প্রশাসক প্রফুল্ল শেঠের স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রায় ৭০ জন ক্লাব প্রতিনিধিদের সামনে নতুন করে মাঠ করতে না চাওয়ার হতাশা প্রকাশ করলেন এআইএফএফের প্রাক্তন সহসভাপতি ও আইএফএ-এর বর্তমান চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত।
এদিন, প্রয়াত প্রফুল্ল শেঠের অভাববোধ, প্রশংসা করতে গিয়ে সুব্রত দত্ত বলছিলেন,”আমি যখন বাবা-কাকার (বিশ্বনাথ দত্ত ও প্রদ্যোৎ দত্ত) হাত ধরে মাঠে আসি তখন থেকেই ময়দানের একাধিক কর্তাদের সঙ্গে আলাপ হয়। তাঁদের সঙ্গে মেলামেশা করতে গিয়ে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। যে সম্পর্ক একটা বিশ্বাস তৈরি করেছিল। তাঁদের একটা আদর্শ ছিল। যাদের উপর ভরসা করা যেত অনায়াসে। তাঁরা কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করতেন না। প্রফুল্ল শেঠ সেই রকমই একজন মানুষ। যাকে ভরসা করা যেত। আস্তে আস্তে সেই সব ভরসার মানুষ গুলো একে একে চলে যাচ্ছেন। আগের মতো সেই ভরসা করার মানুষ এখন কমে যাচ্ছে। সত্যি বলছি, এখন আমার আর মাঠ করতে ইচ্ছে করে না।”
এই সুব্রত দত্তকে ময়দানের ‘কিং মেকার’ বলা হত। যে সুব্রতবাবু গড়ের মাঠের নিয়ন্ত্রণটাই ধরে রাখতেন। তাহলে কি তিনি নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন? সংগঠন করতে হলে নিজস্ব দল করাটাই স্বাভাবিক ঘটনা। এখনও তিনি যে তথাকথিত ‘দল’ করেন না, তা বলা যাবে না। বরং সক্রিয়ভাবেই দল করেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের চরিত্র বদলে গিয়েছে।
‘মাঠ করতে ইচ্ছে করছে না’ – এমন মন্তব্য সুব্রত দত্ত আগে কখনও করেননি। তাঁর এই বক্তব্যর ফলে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। যেমন, (১) তিনি কি আবেগতারিত হয়ে নিছকই মাঠ না করতে চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলেন? (২)দলে যারা আছেন তাঁরা কি অতীতের কর্তাদের মতো ভরসাযোগ্য নয়? (৩) দলের কর্তাদের আদর্শ বলে কিছু নেই? (৪) তাঁরা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন? (৫) কর্তাদের চোখবন্ধ করে ভরসা করা যায় না? (৬) নাকি, মোক্ষম সময়ে নিজের দলেরই বিশেষ কোনও কোনও কর্তাদের সুকৌশলে বার্তা পাঠিয়ে রাখলেন? (৭) একযোগে বিরোধী পক্ষের কর্তাদেরও ইঙ্গিত করলেন? (৮)সুব্রত দত্ত, কাদের ইঙ্গিত করতে চাইলেন? কাদের বার্তা পাঠালেন? তাই নিয়ে ময়দানে জোর জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
এদিন অনুষ্ঠান শেষে সুব্রতবাবুকে তাঁর এই ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যর ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর এই প্রতিবেদককে বলেন,”আমি যা বক্তব্য রেখেছি সেটার আর কি ব্যাখ্যা দেবো? বাস্তবে যেটা আমার উপলব্ধি হয়েছে সেটাই বলেছি। আসলে এখন যারা মাঠে আসছে হয় তারা আমাকে বুঝতে পারছে না। অথবা আমি তাদের বুঝতে পারছি না। একটা কমিউনিকেশন গ্যাপ তো আছেই। ফলে একটা অবাঞ্জিত ভেদাভেদ তৈরি হচ্ছে। সেই কারণেই আর মাঠ করতে ইচ্ছে করছে না।”
সুব্রত দত্ত ধোঁয়াসাটা রেখেই দিলেন। এই মুহূর্তে আইএফএ-এর অন্দরমহলে তীব্র ভাবে ‘ওরা-আমরা’-র লড়াই চলছে। সেই খবর ময়দানের সমস্ত ক্লাব কর্তাদের কাছে এখন ‘ওপেন সিক্রেট।’ সামনে অনেক লম্বা পথ। ‘খেলা হবে’ – এটা নিশ্চিত।