ব‍্যর্থ কোচ রঞ্জন চৌধুরীর বিরুদ্ধে আজ কড়া পদক্ষেপ করবে IFA?

0

◆সন্দীপ দে◆

কিছুদিন আগেই সন্তোষের চূড়ান্ত ব‍্যর্থ কোচ রঞ্জন চৌধুরী ও ম‍্যানেজার রাজীব বাগকে তলব করেছিল আইএফএ। অবশেষে আজ,বুধবার আইএফএ সচিব অনির্বান দত্তর সামনে গিয়ে বাংলার হারের কারণ বলবেন রঞ্জন। এখন প্রশ্ন হল,কোচ রঞ্জনের ব‍্যাখ‍্যায় সন্তুষ্ট হবে আইএফএ কর্তারা? নাকি ভবিষ্যতের কথা ভেবে কড়া পদক্ষেপ করবেন কর্তারা? নাকি বৈঠকে এবারের সন্তোষ ট্রফিতে বাংলা ব‍্যর্থতায় ইতি টানবেন আইএফএ কর্তারা?

এবারের সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার কোচ হতে চেয়ে দশজন কোচ আবেদন করেছিলেন। শোনা যায়, এই দশজনের মধ‍্যে জহর দাস ও সঞ্জয় সেনের নামও ছিল। তাঁদের মতো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোচদের বাদ দিয়ে ভবানীপুরের কোচ রঞ্জন চৌধুরীকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলা দলের কোচ নির্বাচনে যাতে স্বচ্ছতা থাকে তার জন‍্য নির্বাচক কমিটির সদস‍্যদের কোচ বাছার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত। তিনি বা আইএফএ-এর কোনও পদাধিকারী কোচ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেননি। কোচ হওয়ার পর সন্তোষে দল নিয়ে যাওয়ার আগে, পঞ্জাবে পৌঁছে এবং ব‍্যর্থ হওয়ার পর রঞ্জন যে সব অজুহাত দিয়েছেন তা শুনে প্রচন্ড বিরক্ত আইএফএ কর্তারা। দল হারতেই পারে। সেটা স্পোর্টিংলি নিতে হয়। এটাই দস্তুর। কিন্তু নিজের ভুল,ব‍্যর্থতাকে আড়াল করতে অযৌক্তিক ব‍্যাখ‍্যা বা ‘কাঁদুনি’ গাওয়ার চেষ্টা দেখে বাংলার ফুটবল মহল বিরক্ত।

বাংলার কোচ হয়ে রঞ্জন চৌধুরী যা যা চেয়েছেন আইএফএ তাই দিয়েছেন। কোচ রঞ্জনকে কি কি সুবিধা দিয়েছে আইএফএ? তার নমুনা এই রকম —
(১) বাংলা দল গঠনের জন‍্য কোচ রঞ্জন চৌধুরীকে ২৪ দিন সময় দিয়েছে।
(২) নির্দিষ্ট মাঠ এবং মাঠে অ‍্যাম্বুলেন্স দিয়েছে।
(৩) কোচের পছন্দ মতোই সাপোর্ট স্টাফ দেওয়া হয়েছে।
(৪) কোচ যে সব ফুটবলারদের ট্রায়ালে দেখে নিতে চেয়েছিলেন তাদের ডেকে আনার ব‍্যবস্থা করেছিলেন আইএফএ সচিব।
(৪) আইএফএ আবাশিক শিবির করতে চেয়েছিলেন। কোচ চাননি। কোচের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
(৫) অনুশীলনে ফুটবলার,কোচদের জন‍্য উন্নতমানের খাবার দিয়েছে।
(৬) সন্তোষে খেলতে যাওয়ার আগে কমজোরী দুটি দলের (ডালহৌসি ও পুলিশ) সঙ্গে ম‍্যাচ খেলতে চাওয়ায় সেই ব‍্যবস্থাও করেছিল আইএফএ।
(৭) কোচ বলে দিয়েছিলেন ট্রেনে নয়,দল ফ্লাইটে যাবে, ফ্লাইটেই আসবে। আইএফএ ফ্লাইটের ব‍্যবস্থা করেছিল।
(৮) নিজের পছন্দমতো দল গড়ার ক্ষেত্রে আইএফএ-এর কোনও কর্তার হস্তক্ষেপ মানবেন না। আইএফএ তাই দল গড়ার ক্ষেত্রে কোনও হস্তক্ষেপ করেননি।
(৯) পঞ্জাব যাওয়ার সময় দলের সঙ্গে তাঁর ইচ্ছেতেই ১৮টি বল,চার সেট বিফ (!) নিয়ে গিয়ে গিয়েছিলেন কোচ।

এত কিছু পাওয়ার পরও দল নির্বাচনে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পারেননি কোচ রঞ্জন চৌধুরী। তাঁর বিরুদ্ধে উঠছে একাধিক অভিযোগ।
অভিযোগ – (১) কোটা সিস্টেমে দল গঠন।
অভিযোগ – (২) তিনি যে ক্লাবে কোচিং করান সেই দলের ৮ জন ফুটবলারকে বাংলা দলে জায়গা করে দিয়েছেন।
অভিযোগ – (৩) সুজিত সাধু,
নরহরি শ্রেষ্ঠা, শুভ ঘোষ, রানা ঘরামির মতো ‘বুড়ো’ প্লেয়ারদের কেন দলে নেওয়া হল?
অভিযোগ – (৪) এবছর কলকাতা লিগে নজর কাড়া এরিয়ানের অরিত্র ঘোষের কেন বাংলা দলে জায়গা হল না?
অভিযোগ – (৫) ট্রায়ালে দুদিন এক ফুটবলার খুব ভাল খেলছিল। পরের দিন সেই ফুটবলারকে আর ডাকা হয়নি। তাই দেখে আইএফএ-এর গভর্নিং বডির এক সদস‍্য (তিনি বাংলা দলের ট্রায়ালে প্রায়সই মাঠে যেতেন) কোচকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ফুটবলারটিকে ডাকা হবে না? উত্তরে কোচ রঞ্জন সেই গভর্নিং বডির সদস‍্যকে বলেছিলেন,”কে আসবে সেটা আপনার সাবজেক্ট নয়, ওটা আমার সাবজেক্ট।” অহঙ্কারী কোচ রঞ্জনের এহেন ব‍্যবহার দেখে সেই ব‍্যক্তি মাঠে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

অভিযোগ – (৬) ম‍্যাচ যখনই হারছে তখনই সংবাদ মাধ‍্যমে খারাপ মাঠের অজুহাত দিতেন। কাঁদুনি গায়তেন তিনি নাকি ভাল দল পাননি। খারাপ মাঠে কি শুধ বাংলা দল খেলেছে? বিপক্ষ দল খেলেনি?

অভিযোগ – (৭ ) পঞ্জাবে যখন ম‍্যাচের পর ম‍্যাচ হারছিলেন তখন আইএফএ-এর এক কর্মী ফোন করে মূলপর্বে যাওয়ার অঙ্কটা কি হতে পারে জানতে চেয়েছিলেন। মেজাজ হারিয়ে কোচ রঞ্জন তখন বলেছিলেন,”বাংলাকে চ‍্যাম্পিয়ন করার দাসখত লিখে দিয়ে দল নিয়ে এসেছি নাকি?” এই যদি কোচের মানসিকতা হয় তাহলে দলের করুন অবস্থায় হবে।

দলের অন্দর মহলে আরও অভিযোগ,কোচ রঞ্জন চৌধুরী ম‍্যান ম‍্যানেজমেন্টেও ভাল ফল করেননি। পঞ্জাবে যখন বাংলা ডুবছে তখন কয়েক জন ফুটবলার সন্ধ‍্যা হলে হোটেল থেকে বেরিয়ে কোথায় যেতেন? কখন হোটেলে ফিরতেন? কোচ রঞ্জন বা ম‍্যানেজার রাজীব বাগ জানতেন না? নাকি জেনেও না জানার ভান করতেন? কোনটা সত‍্যি? যদি ঘটনা সত‍্যিই হয় তাহলে তার দায় কি কোচ,ম‍্যানেজারের উপর পড়ে না? ম‍্যানেজার রাজীব বাগ রিপোর্টে সেই সব ঘটনা কি উল্লেখ করবেন? এই সব ঘটনা আইএফএ-র কর্তাদের কাছে পৌঁছেছে? আইএফএ কি কড়া পদক্ষেপ করবে? উঠছে নানান প্রশ্ন।

ময়দানের এক সিনিয়র কোচ রঞ্জন চৌধুরীর প্রসঙ্গ উঠতেই বলছিলেন,”বাঘছাল পড়লেই বাঘ যেমন হয় না,তেমনি লাইসেন্স থাকলেই ভাল কোচ হওয়া যায় না। রঞ্জনদের মতো কোচকে বাংলা দলের কোচ করলে সর্বভারতীয় ফুটবলের আসরে বাংলার ফুটবল শূন‍্য থেকে মহাশূন‍্যে পৌঁছে যাবে।”

কোচ হওয়ার পর দল গঠন থেকে শুরু করে যাবতীয় পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়ে বাংলা দলে রঞ্জন চৌধুরী যেন হয়ে উঠেছিলেন ‘কমল বনে মত্ত হস্তি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here