◆লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার হাতে তরুণ বসু। সঙ্গে ভাস্কর গাঙ্গুলি ও কল্যাণ চৌবে◆
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : বিশেষ সম্মান নেওয়ার জন্য যখন সঞ্চালক প্রয়াত ফুটবলার মোনেম মুন্নার পরিবারের সদস্যদের মঞ্চে আসার জন্য অনুরোধ করলেন তখন পুত্রকে নিয়ে আস্তে আস্তে মঞ্চের দিকে হাঁটলেন মুন্না পত্নী ইয়াসমিন মোনেম। মঞ্চে উঠতেই ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে হাততালির আওয়াজে তৈরি হল এক আবেগঘন পরিবেশ। মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং অরূপ বিশ্বাসও হাততালি দিয়ে বাংলাদেশের মেহমানকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
তিন দশক আগে বাংলাদেশের এই মুন্না ইস্টবেঙ্গলে খেলতে এসে এপার বাংলার ফুটবল প্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। ক্লাবে তাঁর অবদানের কথা ভুলে যাননি ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। আর ভুলে যাননি বলেই এদিন ইস্টবেঙ্গলের ১০৪ তম জন্মদিনে ইয়াসমিন,ঘাউস,আসলামদের সম্মানে,আবেগে ভাসালেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা।
একে একে ইয়াসমিন,ঘাউস,আসলাম, আবাহনি ক্লাবের প্রাক্তন সচিব হারুন রশিদ এবং সঙ্গীত শিল্পী মেহেরিনকে বিশেষ সম্মানে সম্মানিত করা হল। অবিভুত ওপার বাংলার এই পাঁচ ব্যক্তিত্ব।
এদিনের এই অনুষ্ঠানে আরও একটি ঘটনায় আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার নেওয়ার সময় প্রখ্যাত গোলরক্ষক তরুণ বসুকে ধরে মঞ্চে নিয়ে গেলেন আর এক বিখ্যাত গোলরক্ষক ভাস্কর গাঙ্গুলি। মঞ্চে তখন পুরস্কার তুলে দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছেন আর এক গোলরক্ষক এবং এআইএফএফের বর্তমান সভাপতি কল্যাণ চৌবে।
স্বনামধন্য তরুণ বসুকে প্রণাম করার পর মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ভাস্কর গাঙ্গুলি বলছিলেন,”ইস্টবেঙ্গলের কাছে মোহনবাগান যে পাঁচ গোল খেয়েছিল সেই পাঁচটির মধ্যে চারটি গোলই আমি খেয়েছিলাম। বড় ক্লাবের শুরুতেই আমার তখন কেরিয়ার শেষ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেল। কিন্তু পরের মরসুমে ইস্টবেঙ্গল আমাকে সই করায়। ইস্টবেঙ্গলে তখন এক নম্বর গোলরক্ষক তরুণদা। কিছুদিন যেতেই তিনি নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়ে আমাকে সুযোগ করে দিলেন। অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। তরুণদা যেমন অনেক বড় মাপের গোলরক্ষক তেমনি অনেক বড় মনের মানুষ।”
এদিনের ইস্টবেঙ্গলের ১০৪ তম জন্মদিনে বিকেল থেকেই প্রবল বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সামিল হলেন এক ঝাঁক প্রাক্তন ফুটবলার থেকে ক্রীড়া প্রশাসক, মন্ত্রীরা। কে আসেননি? মন্ত্রীদের মধ্যে হাজির ফিরহাদ হাকিম, সুজিত বসু, অরূপ বিশ্বাস,পার্থ ভৌমিক,চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, তাপস রায়।
এসেছিলেন অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবে,সচিব সাজি প্রভাকরণ সহ অন্যান্য পদাধিকারীরা। ছিলেন আইএফএ সচিব ও সভাপতি অনির্বান দত্ত,অজিত ব্যানার্জি। মোহনবাগান ও মহমেডান থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন স্বপন ব্যানার্জি,কামারউদ্দিন এবং ইসতিয়াক আহমেদ। ছিলেন আইপিএল কাউন্সিল কমিটির সদস্য অভিষেক ডালমিয়া, সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গাঙ্গুলি। আর ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের বর্তমান দুটি দলের ফুটবলার সহ কোচেরা।
অনুষ্ঠানে ক্লাবের তরফে ভারত গৌরব সম্মানে সম্মানিত করা হয় রতন টাটাকে। শারীরিক কারণে এদিন আসতে পারেননি। এদিন তরুণ বসুকে জীবনকৃতী সম্মান দেওয়ার পাশাপাশি প্রাক্তন ক্রিকেটার অরূপ ভট্টাচার্যকে একই সম্মান তুলে দেওয়া হয়। বিশেষ সাংবাদিক সম্মান পান প্রদীপ রায় এবং অরুণ সেনগুপ্ত। অরুণাভ দাস এবং মেহবুব হোসেনকে রেফারি হিসেবে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়। মরসুমের সেরা ফুটবলারের সম্মান পান ক্লেইটন সিলভা। তিনি এখনও ব্রাজিলে আছেন। আসতে পারেননি। উদীয়মান খেলোয়াড় হিসেবে বিশেষ সম্মান পান নাওরেম মহেশ সিং। আর গত মরসুমের সেরা ক্রিকেটারের সম্মান পেলেন অঙ্কুর পাল।
অনুষ্ঠানের শুরু ও শেষে গান গেয়ে আসর মাতালেন বাংলাদেশের সঙ্গীত শিল্পী মেহেরিন। পুরো অনুষ্ঠান ছিল জমজমাট। শুধু রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সচিব সুবীরানন্দজি মহারাজের অতি দীর্ঘ বক্তৃতা ছাড়া। তবে ইস্টবেঙ্গল কোচ কুয়াদ্রাত সহ ফুটবলাররা মঞ্চে উঠতেই লাল-হলুদ জনতা
উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে।
শুরু হয় ইস্টবেঙ্গলের জয়ধ্বনি। দর্শকদের এমন স্পিরিট দেখে কোচ কুয়াদ্রাত বলে গেলেন,”এই মরসুমটা ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের প্রিয় মরসুম করে রাখতে চাই।” কোচের এই কথা শুনে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে আওয়াজ উঠল “জয় ইস্টবেঙ্গল।”