◆সন্দীপ দে◆
আই এফ এতে নিজের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছিল সেটা বুঝতে পেরেছিলেন সচিব জয়দীপ মুখার্জি। তাই কালবিলম্ব না করে বৃহস্পতিবার আইএফএ-এর সচিব পদ থেকে পতদ্যাগ করলেন জয়দীপ মুখার্জি। পদত্যাগের কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন-ব্যক্তিগত। এটা তাঁর দ্বিতীয় বার পদত্যাগ। এক বছর আগে কৌশলে সভাপতি অজিত ব্যানার্জির বিরুদ্ধে তোপ দেগে প্রথমবার পদত্যাগ করেছিলেন জয়দীপ। তখন তাঁকে বুঝিয়ে পদত্যাগ পত্র ফেরানো গিয়েছিল। কিন্তু এবার কি “সাধিলে আর একবার থাকিবো” সম্ভব হবে? পরিবর্তিত পরিস্থিতি যা তৈরি হয়েছে তাতে জয়দীপকে কেউ অন্তর থেকে থাকার জন্য ‘সাধিবে’ বলা যাচ্ছে না। তিনি ময়দানের সকল স্তরে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন হয় না।
গতকাল,বুধবার বিকেলে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর এই উটকো সাংবাদিক আইএফএ অফিসে গিয়ে সচিব জয়দীপ মুখার্জিকে তাঁর পদত্যাগ করার ইচ্ছের কথা জানতে চান। খবরটা করার ইচ্ছা প্রকাশও করা হয়। আইএফএ অফিসের গেটের সামনে সহ সভাপতি পার্থসারথী গাঙ্গুলিকে পাশে নিয়ে জয়দীপ বলেছিলেন,”সন্দীপ,এখনই খবরটা করিস না। ২০ তারিখের পর করিস। ওই দিন বাংলা-ভারতের ম্যাচ আছে। তার আগে কোনও বিতর্ক হোক চাই না।তুই শনিবার অফিসে আসিস।” কিন্তু কেন আইএফএ থেকে চলে যাবেন? তার উত্তর জয়দীপ বুধবার দেননি। আশ্চর্যের বিষয় হল,২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করে বসলেন জয়দীপ। যদিও তিনি সভাপতি ও চেয়ারম্যানকে যে মেল করেছেন তাতে তিনি জানিয়েছেন, আগামী ১৭ জুন পযর্ন্ত আইএফএ সচিব হিসেবে কাজ করবেন।
বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করার পর জয়দীপ কারও ফোন ধরেননি। কেন তিনি আইএফএ থেকে চলে গেলেন? সূত্রের খবর, জয়দীপ যে সব উপর মহলের “মাথা” ধরে চলতেন সেই “মাথা” গুলির বেশির ভাগ জয়দীপের মাথা থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছেন। কারণ জয়দীপের “ফাঁকতালে বাজিমাৎ”করার চেষ্টা ধরা পড়ে গিয়েছে। ময়দানের ক্লাবগুলোকে কোনও দিনই গুরুত্ব দেননি জয়দীপ। অনির্বান দত্ত যখন মাঠে নামেন তখন ক্লাব প্রতিনিধিদের সঙ্গ পাওয়ার চেষ্টা করলেন। তখন বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। তাঁর “গোদের উপর বিষফোঁড়া” অনির্বান দত্তর কোষাধ্যক্ষ হওয়া। তিনি কিছুতেই অনির্বানকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে চাননি। আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। জয়দীপের গ্রহণযোগ্যতা এতটাই তলানিতে চলে গিয়েছে যে, ২০২৩ সালে সচিব পদের নির্বাচন হলে নিশ্চিত ভাবে জয়দীপ হারতেন। তিনি এত লোককে চটিয়ে রেখেছেন যে তাঁকে চলে যেতে হতোই। সুব্রত দত্ত তাঁকে সচিব পদে বসিয়েছেন। এটা হয়তো সুব্রতবাবুর জীবনে ‘ঐতিহাসিক ভুল’। এই মূহুর্তে প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য না করলেও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অন্তত নিজের কাছে “ঐতিহাসিক ভুল”-এর কথা স্বীকার করবেন। একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে সুব্রত দত্ত যে সুনাম অর্জন করেছিলেন তা আজ অনেকটাই নষ্ট হয়েছে শুধু জয়দীপের জন্য।
গত একবছর ধরে একাধিক ক্লাব কর্তা জয়দীপের বিরুদ্ধে সুব্রতবাবুর কাছে অভিযোগ করেছেন। “সস্তায় বাজিমাৎ করা”-র মানসিকতার এমন ব্যক্তিকে কেন সচিব পদে বসানো হয়েছে? এমন প্রশ্ন উঠেছে। স্বাভাবিক ভাবেই এবারের কোষাধ্যক্ষ পদের নির্বাচনের আগে সুব্রত দত্তর দলে বিশাল প্রভাব পড়েছে। কারণ ওই জয়দীপ।
জয়দীপের উপর প্রচন্ড বিরক্ত আইএফএ সভাপতি অজিত ব্যানার্জিও। এক বছর আগে যে ভাবে অজিতবাবুকে ছোট করে পদত্যাগ করেছিলেন সেই ঘটনা অজিতবাবু এখনও ভুলতে পারেননি। ভোলা সম্ভবও নয়। সহসভাপতি তনুময় বসুকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য জেলার অধিকাংশ কর্তারাও জয়দীপকে পছন্দ করতেন না। অর্থাৎ জেলাতেও জয়দীপ গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন।
বিরক্ত আইএফএ অফিসের অধিকাংশ কর্মীরাও। কোনও কাজ পছন্দ না হলেই শোকজ বা সাসপেন্ড করে দিতেন জয়দীপ। কর্মীদের প্রাপ্য সম্মান দিতেন না বলে একাধিক কর্মী আক্ষেপ করেছেন। একটা ভয়ের বাতাবরণ করে রেখেছিলেন। আইএফএ নয়, যেন নিজের আর্টেজ অফিস ভাবতে শুরু করেছিলেন। প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে জয়দীপের নিজের দোষেই। তাই সম্মান থাকতে থাকতে একরকম পালিয়েই যেতে চান জয়দীপ।
জয়দীপের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে পাওয়া খবর, তিনি চেয়েছিলেন, বাংলা সন্তোষ ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হলে সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ করতেন। সেটা হয়নি। পরে ঠিক হয়,২০ জুন পদত্যাগ করবেন। কিন্তু সেটাও হল না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারই পদত্যাগ করে বসলেন। এখন দেখার বিষয়, জয়দীপের পদত্যাগ পত্র “মাথা”রা কি ভাবে খেলবেন।