◆বালির দুই প্রতিপক্ষ। প্রতিভা ও দেশবন্ধুর দুই শীর্ষ কর্তা অপূর্ব কুমার ঘোষ ও রবীন ঘোষ। বৃহস্পতিবার ডার্বি ম্যাচের শেষে,ইউনিভার্সিটি মাঠে◆
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : টাউন মাঠের বিপরীতে ইউনিভার্সিটির সবুজ ঘেরা সুন্দর মাঠ। আর সেই মাঠেই বৃহস্পতিবার নিঃশব্দে হয়ে গেল কলকাতা লিগের তৃতীয় ডিভিশনের ডার্বি ম্যাচ। শতাব্দী প্রাচীন বালি প্রতিভা বনাম বালি দেশবন্ধু এমএসএ। এই ডার্বি দেখার জন্য গড়ের মাঠের আম জনতার ভিড় ছিল না। ছিল দুই দলের কিছু দর্শক ও কর্তারাই। আর ছিলেন আইএফএ সহসচিব শুভাশিস সরকার,নজরুল ইসলাম, জোড়াবাগান কর্তা শঙ্কর দাস এবং কতিপয় অন্যান্য ক্লাব কর্তারা।
এই বালির দুই দলকে ঘিরে কলকাতা লিগের অন্য এক ডার্বির কঠিন লড়াই যেন মাঠের বাইরে করে যাচ্ছিলেন দুই দলের কর্তা রবীন ঘোষ ও অপূর্ব কুমার ঘোষ। পেশায় আইনজীবী অপূর্ববাবু বালি প্রতিভার সচিব। তিনি সারাক্ষন নিজেদের শিবিরে ডাগআউটে দাঁড়িয়ে ছিলেন টেনশন নিয়ে। আর বালি দেশবন্ধুর শীর্ষকর্তা, ময়দানের পোড় খাওয়া কর্তা রবীন ঘোষ ম্যাচের নব্বই মিনিট বালি প্রতিভার শিবিরের ডাগআউটে দাঁড়িয়ে থাকলেন। নিজেদের শিবির ছেড়ে প্রতিপক্ষের দিকে দাঁড়ানো কি রবীনবাবুর ময়দানি তুকতাক? জানা যায়নি।
ডার্বির প্রভাব পড়েছিল ফুটবলারদের মধ্যেও। ম্যাচের শুরু থেকেই টান টান উত্তেজনা, বল সহ এবং বল ছাড়া টাফ ফুটবল। দুই দলের কর্তাদের উভয় দলের ফুটবলারদের বয়স নিয়ে রেফারির কাছে গিয়ে প্রতিবাদ করা। মাঠের বাইরেও লড়াই জারি ছিল। ম্যাচের শুরুতেই অকারণে মেজাজ হারিয়ে ফাউল করলেন বালি দেশবন্ধুর সমরেশ বর্মন। সঙ্গে সঙ্গে লালকার্ড দেখে মাঠের বাইরে। এর পরেও আরও চারটি হলুদ কার্ড হলেছে। ম্যাচে উত্তেজনা ছিলই। ১৫ মিনিট পর দেশবন্ধুর খেলার ছন্দপতন। যদিও এর মধ্যে সৌমিক দে গোল করে বালি দেশবন্ধুকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন। বাকি ৭৫ মিনিট দাপটের সঙ্গে খেলেও গোল করতে পারেনি বালি প্রতিভা। দেশবন্ধু ক্লাব নিঃশব্দের ডার্বি জিতল ১-০ গোলে।
প্রসঙ্গত, বালির এই দুই ক্লাবের লড়াই আগে ছিল না। এই নতুন রেষারেষি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াই শুরু শুরু হয়েছে গত দুই মাস আগে। এই বালি এলাকায় মূলত লড়াই ছিল শতাব্দী প্রাচীন ও সুপরিচিত বালি প্রতিভা এবং বালি অ্যাথলেটিক ক্লাব। এই লড়াইটা তাদের ছিল নিজ এলাকার ক্রীড়া মহলে। এখন লড়াইয়ের মঞ্চটা বদলে গেছে। এই লড়াই পৌঁছে গেছে কলকাতার গড়ের মাঠে। কলকাতা ফুটবল লিগে বালির দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বালি প্রতিভা ও বালি দেশবন্ধু মানিকতলা স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশন। দুটি দলই তৃতীয় ডিভিশনের।
দুই মাস আগে ময়দানের অভিজ্ঞ কর্তা রবীন ঘোষ নিজের মানিকতলা স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বালির দেশবন্ধু ক্লাবের গাঁটছড়া বেঁধেছেন। মাস খানেক আগে আইএফএ সচিব, সভাপতি,সহসচিবদের নিয়ে গিয়ে ঘটা করে জার্সি উন্মোচনও করেন রবীনবাবু। লড়াইয়ের বার্তাটা যেন সেই তখন থেকেই দিয়ে রেখেছিলেন রবীন ঘোষ। নীরব ছিলেন বালি প্রতিভার কর্তারা। তাঁরা দেশবন্ধুকে মাঠে দেখে নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। কিন্তু ভাল খেলেও জিততে পারল না বালি প্রতিভা। চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে পৌঁছতে পারলে আবার দেখা হবার সম্ভাবনা।
ম্যাচের আগে দুই দলের কর্তাদের মধ্যে কোনও কথা বা সৌজন্য বিনিময় হয়নি। তবে ম্যাচের শেষে সৌজন্য বিনিময় হয়েছে। ম্যাচ শেষে হতাশ ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন বালি প্রতিভার সচিব অপূর্ব কুমার ঘোষ। তাঁর কাছে এসে করমর্দন করে বালি প্রতিভাকে শুভেচ্ছা জানালেন রবীনবাবু।
এই লড়াই, রেষারেষি কি সর্বাত্বক? জবাবে রবীন ঘোষ বলেন,”লড়াই অবশ্যই আছে,তবে তা ৯০ মিনিটে। ম্যাচের শেষে লড়াই নেই।” ৭৫ মিনিট দশজনে খেলেও জয় ছিনিয়ে নেওয়ার ‘ফিল গুড’ নিয়ে রবীন ঘোষ পঞ্জাব স্পোর্টস ক্লাব তাঁবুর দিকে রওনা দিলেন। আর অপূর্ববাবু,মলয়বাবুরা ডার্বির পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়লেন নিঃশব্দে। চোয়াল শক্ত, হারের জ্বালা নিয়ে অপূর্ববাবু শুধু বললেন, “ভাল খেলেও হারতে হল। চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে পৌঁছলে আবার দেখা হবে।” বোঝা গেল বালির এই দুই ক্লাবের লড়াই থামার নয়।