বাজিমাত করে সিআরএ সচিব পদে জয়ী উদয়ন হালদার

0

◆সন্দীপ দে◆

সবাইকে চমকে দিয়ে পাশার দান উল্টে দিয়ে কলকাতা রেফারিজ সংস্থার সচিব পদে বসলেন উদয়ন হালদার। প্রায় সাড়ে ছয় বছর পর প্রাক্তন ফিফা রেফারি সচিব পদে ফিরে আসতে পারবেন ময়দানের ভাবেননি কেউ। শনিবার কলকাতা রেফারিজ সংস্থার (সিআরএ) নির্বাচনে শাসকগোষ্ঠীকে কার্যত উড়িয়ে দিলেন উদয়ন হালদারের গোষ্ঠী। উদয়ন হালদার গোষ্ঠীর ১৫ জন প‍্যানেলের মধ‍্যে ১০ জন জিতলেন অনায়াসে।

সচিব পদে গোপীনাথ পাইনকে (৯৫) হারিয়ে জয়ী হয়েছেন উদয়ন হালদার। তিনি ভোট পেয়েছেন ১৭২টি। এবারের সিআরএ-এর নির্বাচনে উদয়ন সব থেকে বেশি ভোট পেয়েছেন। সহ সচিব পদের নির্বাচনে জয়ন্ত ব‍্যানার্জিকে (১১৯) হারিয়ে জয়ী হয়েছেন হরিসাধন ঘোষ (১৪৫)। সভাপতি পদের লড়াইয়ে ভোলানাথ দত্তকে (১০৭) হারিয়ে জয়ী হয়েছেন সুপ্রিয় ভট্টাচার্য (১৫৩)। সহ সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন অভিজিৎ কুন্ডু (১৫৭) ও অরিন্দম ভট্টাচার্য (১৪০)। শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এই সহ সভাপতির পদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন গতবারের সচিব সুকৃতি দত্ত ও চিত্তদাস মজুমদার। দুজনেই হেরে গিয়েছেন। চিত্তদাস মজুমদার ১২৬টি ও সুকৃতি দত্ত মাত্র ৮৫টি ভোট পেয়েছেন। কোষাধ‍্যক্ষ পদে কাশীনাথ সেনকে (১১১) হারিয়ে জয়ী হয়েছেন অজিত দত্ত (১৫১)। সহকারী সচিব কোষাধ‍্যক্ষ পদে জয়ী হয়েছেন অরবিন্দ বেড়া।

গোপীনাথ পাইন তখনও বুঝতে পারেননি হেরে যাবেন। শনিবার রাতে সিআরএ তাঁবুতে

এবারের রেফারিদের নির্বাচন ঘিরে ছিল চাপা উত্তেজনা। এমনিতেই শাসক গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস‍্যদের বিরুদ্ধে প্রচন্ড বিরক্ত ছিলেন সিআরএ-এর অধিকাংশ সদস‍্য। উঠছিল নানান অভিযোগও। বিশেষ করে কাশীনাথ সেন ও চিত্তদাস মজুমদারের উপর বিরক্ত ছিল অনেকেই। সিআরএ অন্দরেই অভিযোগ উঠেছিল, সুকৃতি দত্ত নামেই সচিব ছিলেন আসলে রেফারি সংস্থাটিকে নাকি নিয়ন্ত্রণ করতেন এই কাশীনাথ সেন ও চিত্ত দাস মজুমদার। এদিন এই দুই প্রাক্তন রেফারিই হেরে গেলেন। শনিবার সন্ধ‍্যায় ভোট দিতে এসে দুই প্রাক্তন রেফারি (নাম প্রকাশ‍্যে অনিচ্ছুক ) ‘ইনসাইড স্পোর্টস’ -এর এই প্রতিবেদককে বলছিলেন,”এবার নতুন কমিটি চাইছি। সবাই হয়তো চায়ছে। অপেক্ষা করুন। দেখবেন সিআরএতে তাজা বাতাস বইবে।”

অসুস্থ শরীর নিয়েও ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরছেন প্রবীন সদস‍্য লোকনাথ ব‍্যানার্জি। শনিবার সিআরএ তাঁবুতে

এমনটা যে সত‍্যি মিলে যাবে ভাবা যায়নি। ভেতরে ভেতরে শাসক গোষ্ঠীর কর্তারা যে নিজেদের গ্রহণযোগ‍্যতা হাড়িয়ে ফেলেছিলেন বুঝতে পারেননি তাঁরা নিজেও। এ যেন “জোর সে ধাক্কা,ধিরে সে লাগা”। ময়দানে কানপাতলেই শোনা যায়, এবারের সিআরএরের নির্বাচনে শাসক গোষ্ঠীকেই চেয়েছিল ময়দানেরই এক প্রভাবশালী গোষ্ঠী। কিন্তু সদস‍্যরা বদল চেয়েই ব‍্যালটে বিপ্লব করেছেন।

সিআরএ-এর সদস‍্য সংখ‍্যা ৩১২। পোলিং হয়েছে ২৬৯টি। ছোট্ট নির্বাচন। অথচ রেফারি তাঁবুর প্রধান গেটের বাইরে দেখা গেল বেশ কিছু বহিরাগতদের। বিকেল পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে সাতটা পযর্ন্ত এই বহিরাগতদের দেখা গেছে। এরা কারা? কোন গোষ্ঠি এদের নিয়ে এসেছিল? জানা যায়নি। হিন্দি ভাষায় কথা বলছিল। কখনও সিআরএ ক‍্যান্টিনে যাচ্ছে আবার কখনও গেটের মুখে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে যাওয়া সদস‍্যদের উপর নজর রাখছিল ওরা। যদিও রাত আটটার পর এই বহিরাগতদের আর দেখা যায়নি। রাত দশটা পনেরোয় যখন নির্বাচনের ফল প্রকাশ হল তখন সিআরএ নিস্তব্ধ। ঘটে গেল পালা বদল।

এরা কারা? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে

প্রায় সাড়ে ছ’বছর পর ফের সিআরএ সচিব পদে এলেন? জিততে পারবেন,ভেবেছিলেন? উত্তরে নতুন সচিব উদয়ন হালদার “ইনসাইড স্পোর্টস”কে বলছিলেন,”শেষবার ভোটে একটুর জন‍্য হেরেছিলাম। এবার জেতার আশা নিয়েই লড়াইয়ে নেমেছিলাম। সদস‍্যরা ভাল কিছু আশা নিয়েই আমাদের ভোট দিয়েছেন। এবার আমাদের কাজ করার পালা। আমার প্রথম লক্ষ‍্য হল রেফারির সার্বিক উন্নয়ন। আরও নতুন করে রেফারি তৈরি করতে হবে। সবাইকে নিয়েই চলতে হবে।”
আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জি এবার রেফারিদের নিয়ে নানান অভিযোগ করেছিলেন। জয়দীপ মুখার্জির সঙ্গে কাজ করতে সমস‍্যা হবে না?
উদয়ন বলেন,”
আপনি নিশ্চয় জানেন, আমি যখন সিআরএ সচিব ছিলাম তখন জয়দীপদা আমাদের সিআরএকে তাঁর কোম্পানির স্পনসর করে দিয়েছিলেন। উনিও চান বাংলার রেফারির উন্নয়ন। বাংলার রেফারির প্রসার,প্রচারের জন‍্য আমাদের সবাইকে এক হতে হবে। আমার মনে হয় না,কোনও কাজ করতে সমস‍্যা হবে।”

এদিকে,নির্বাচনে কাউন্সিল মেম্বার হিসেবে জয়ী হয়েছেন তুষার কান্তি গুহ(১৯০), প্রবীর ধর (১৬৫), দেবাশিস মিশ্র (১৬২), অনামিকা সেন (১৫৯), সুব্রত দাস(১৪২),সুব্রত সরকার (১৩৩),সুনন্দ বসু(১৩০) ও বরুন সাহা (১২৭)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here