◆সন্দীপ দে◆
এবার মুখ খুললেন আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত। বিরোধীতা করতে হবে বলেই বিরোধীতা করে আসছেন মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবের সচিব দেবাশিস দত্ত। দিনের পর দিন। দেবাশিস দত্তর “কলতলার ঝগড়া”র স্টাইলকে এতদিন গুরুত্ব দেননি অনির্বান দত্ত। হয়তো দেবাশিসবাবুর মতো “কলতলা” স্তরে নিজেকে নামিয়ে আনতে চাননি অনির্বান। কিন্তু এবার অ্যাসোসিয়েশনের কথা ভেবেই দেবাশিস দত্তর পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে দিয়ে ফোঁস করেছেন।
জাতীয় দলে বাংলার ফুটবলার না থাকার জন্য আইএফএ-এর উপর দায় চাপিয়েছেন মোহনবাগান সচিব দেবাশিসবাবু। তার উত্তরে অনির্বান পাল্টা আক্রমণ করেছেন। অনির্বানের কথায়,”বাংলার ফুটবলার না থাকা নিয়ে মোহনবাগান সচিব যা বলেছেন তা কি সঠিক কথা বলছেন? বাঙালি ফুটবলার তুলে আনার ক্ষেত্রে দেবাশিস দত্তর কি ভূমিকা আছে? তাঁদের একটা অ্যাকাডেমি ছিল, সেটা শুরু করতে পারেননি। লিগে যে রিজার্ভ দল খেলে সেই দলে কটা বাঙালি ফুটবলারকে খেলাতে পেরেছেন? তিনি বলছেন ইয়ুথ ফুটবলের ডেভেলপমেন্টে জোর দিয়েছেন। লিগে সুপার সিক্সে উঠতে পারল না। তার মানে এই বছর লিগে ইয়ুথ ফুটবল ভাল দল গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আগে নিজের দায়বদ্ধতা নিয়ে ভাবুন, তারপর অন্যের দিকে ঢিল ছুড়ুন।”

“ইনসাইড স্পোর্টস”-এর এই প্রতিবেদককে অনির্বানবাবু আরও বলেন,” এই যে তাঁদের কর্মসমিতির বৈঠক হল, সেই বেঠকে ফুটবল নিয়ে আলোচনা হয়েছে? বৈঠকে টি- শার্ট, টুপি, কফি মাগ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছেন। অতীতেও দেখেছি তিনি ক্লাবের গেট উদ্বোধন নিয়ে কথা বলেছেন। নতুন গেট করেছেন ভাল কথা। কিন্তু তিনি সচিব পদে এসে ফুটবল নিয়ে কোন কাজটা করেছেন আমাকে বলুন তো? কখনও ছোটদের নিয়ে অ্যাকাডেমি নিয়ে আলোচনা করেছেন? বাঙালি ফুটবল শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিজেদের ক্লাবে একটা ফুটবল ক্যাম্প করার পরিকল্পনা করতে পেরেছেন? কি ভাবে বাঙালি ছেলেরা উঠে আসবে? কোনও পরিকল্পনা আছে তাঁর? দেবাশিস দত্ত গত আড়াই বছর ধরে আইএফএ-এর গভর্নিং বডির সদস্য। তিনি যদি এতোই ফুটবল নিয়ে ভাবেন? আইএফএ নাকি বাংলার ফুটবলকে শেষ করে দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। তাহলে ফুটবলের স্বার্থে কেন একটাও আইএফএ-এর গভর্নিং বডির সভায় উপস্থিত থাকলেন না। সভায় এসে আমাদের ভুল, ঠিক ধরিয়ে দিচ্ছেন না কেন?”

অনির্বান দত্তর দাবি, দেবাশিস দত্ত আসলে ফুটবলের মধ্যেই নেই। কেন নেই? তারও ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন,বুধবার বাগান সচিব বলেছেন, সন্তোষ ট্রফির জন্য তাদের ফুটবলার নেওয়া হয়নি। মিডিয়ার সামনে সন্তোষ ট্রফি প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেবাশিস বলেছেন, “তিন বছর ধরে কোয়ালিফাই করতে পারে না বাংলা দল।” তাঁর এই বক্তব্যকে খন্ডন করতে গিয়ে আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত বলেছেন,”বাংলা দল গত তিন বছর নয়, গতবছর অর্থাৎ এক বছর কোয়ালিফাই করতে পারেনি। তিন বছর কোথায় পেলেন? দেবাশিস ভূল তথ্য দিচ্ছেন। আর সন্তোষ ট্রফির দল গড়ার জন্য সব ক্লাবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিনয় চোপড়া সেটা খুব ভাল করে জানেন। কারণ বিনয়বাবুকে মেল করা হয়েছিল। আসলে দেবাশিসবাবু ফুটবলের মধ্যে নেই।”

প্রসঙ্গত বুধবার কর্মসমিতির বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করছিলেন দেবাশিস। জাতীয় দলে বাঙালি ফুটবলারের না থাকা, ইয়ুথ ফটবলের ডেভেলপমেন্ট না হওয়া নিয়ে তিন প্রধানের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তখন দেবাশিস দত্ত সবাইকে অবাক করে বলেন,” সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রথম দায়িত্ব হল ট্রফি জেতা। আমরা সমর্থকদের কথা ভেবে ট্রফির জন্য খেলি। তারপর ওই সব (পড়ুন ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট /ফুটবলার তুলে আনা) পরের কথা।” শতাব্দী প্রাচীন মোহনবাগানে ক্লাবের সচিব পদে বসে দেবাশিসবাবুর মুখে একি কথা! ভাবাই যায় না। এ কোন মোহনবাগান সচিব? অর্থাৎ দেবাশিস বুঝিয়ে দিলেন, ফুটবলার তুলে আনার দায় তাঁদের নয়। অন্যর তৈরি করা ফুটবলার এনে ট্রফি জিতে হাততালি কুড়োবেন। বাংলার ফুটবলে তাহলে মোহনবাগানের অবদান কি?

দেবাশিস দত্ত যাই বলুন না কেন, মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সত্যজিৎ চ্যাটার্জি অন্য কথা বললেন। জাতীয় দলে বাঙালি ফুটবলারের জায়গা না পাওয়া নিয়ে দেবাশিস যখন আইএফএ-দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন,তখন তাঁর পাশে বসে মোহনবাগানের সহসচিব সত্যজিৎ চ্যাটার্জি স্পষ্ট ভাবে বলে দিলেন,”জাতীয় দলে বাঙালি ফুটবলারের না থাকার দায় আমাদের সবার।”
এরপরও হয়তো ভবিষ্যতে যুক্তিহীন ভাবে মোহনবাগানের চেয়ারে বসে চিল চিৎকার করবেন দেবাশিস দত্ত। অবশ্য এটা তাঁকে করে যেতেই হবে। সচিব হিসেবে মিডিয়ার মাধ্যমে গড়ের মাঠে এই ভাবেই ভেসে থাকতে চান দেবাশিস দত্ত।