বাংলা কোচ অমিতের দুর্ব‍্যবহার? IFA সচিবের কাছে নালিশ ফুটবলার রিতমের

0

◆সন্দীপ দে◆

“তোর জন‍্যই টিম হেরেছে। আমি এই দিনটার জন‍্যই অপেক্ষা করছিলাম। তোর জন‍্য দশ-বারো জন আমাকে ফোন করছে। আমি বিরক্ত। আমি তোকে এখনই বাদ দিতে পারি। কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।” প্র‍্যাকটিস ম‍্যাচে একটা গোল খাওয়ার অপরাধে একদিন পর প্র‍্যাকটিসে ফুটবলারদের লাইনে দাঁড় করিয়ে গোলরক্ষক রিতম ভট্টাচার্যকে সবার সামনে ভৎর্সনা করেছেন খেলো ইন্ডিয়ার বাংলা দলের কোচ অমিত ঘোষ। এমন চাঞ্চল‍্যকর অভিযোগ জানিয়ে আইএফএ সচিব অনির্বান দত্তর কাছে নালিশ করলেন গোলরক্ষক রিতম ভট্টাচার্য।

অপমানিত হয়ে কোনও ফুটবলার, কোনও কোচের বিরুদ্ধে নালিশ করছেন আইএফএ সচিবকে, এমনটা সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি। আজ,সোমবার দুপুরে অভিযোগকারী ফুটবলার রিতম ভট্টাচার্য, বাংলায় লেখা নালিশ পত্র তাঁর বাবা ফুটবল কোচ প্রবীর ভট্টাচার্যের হাত দিয়ে খোদ আইএফএ অফিসে পাঠিয়েছেন। প্রবীরবাবু অনির্বান দত্তর সঙ্গে দেখা করে নালিশ পত্র জমা করে বিচার চেয়েছেন। ঘটনা যদি সত‍্যিই হয় তাহলে দল গড়ার ক্ষেত্রে কোচেদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএফএ-এর এবার ভাবার সময় এসেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে খেলো ইন্ডিয়ার বাংলা দলের শিবিরে। বাংলা দলের এবার কোচ করা হয়েছে অমিত ঘোষকে। তিনি ট্রায়ালের মাধ‍্যমে দল গড়েছেন। রিতম ভট্টাচার্যের কাছে জানা গেল, ট্রায়ালের পর প্রাথমিকভাবে ৩৪ জন ফুটবলারকে নির্বাচিত করেন কোচ অমিত। সেই ৩৪ জনের দলে এক নম্বরে নাম ছিল রিতমের। এই ৩৪ জনের দল নিয়ে তিনটি প্র‍্যাকটিস ম‍্যাচ খেলানো হয়েছে। তারপরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে।

“ইনসাইড স্পোর্টস”কে রিতম ভট্টাচার্য বলছিলেন,”বেঙ্গল ফুটবল অ‍্যাকাডেমির বিরুদ্ধে প্র‍্যাকটিস ম‍্যাচ ছিল। তিনটে অর্ধে ম‍্যাচ হয়েছিল। আমাকে প্রথম দুটি অর্ধে নামানো হয়নি। তৃতীয় অর্ধে আমাকে নামান কোচ। আমাদের স্টপার ও আমার – দুজনের ভুলে গোল খাই। তারপরেই আমাকে তুলে নেওয়া হয়। মাঠেই আমাকে বকাঝকা করেন কোচ। সেটাও কিছু মনে করিনি। কিন্তু একদিন পর প্র‍্যাকটিস শুরুর ঠিক আগে ফুটবলারদের লাইনে দাঁড় করিয়ে সবার সামনে আমাকে খুব খারাপ ভাবে অপমান করেন কোচ অমিত স‍্যার। তিনি বলতে থাকেন,’তোর জন‍্যই টিম হেরেছে। এই দিনটার জন‍্যই অপেক্ষা করছিলাম। তোকে এখনই বাদ দিতে পারি। কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না। তোর জন‍্য দশ-বারো জন আমাকে ফোন করছে। আমি বিরক্ত।’ এই কথা গুলি শুনে কোচকে বলেছিলাম, আমার পারফরম্যান্স খারাপ হলে বাদ দিয়ে দিন। সমস‍্যা নেই। কিন্তু আপনি বলুন কারা আমার জন‍্য আপনাকে ফোন করছে। নামগুলো বলুন। আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি কোচ।
আমি লিস্টের এক নম্বরে ছিলাম। অথচ আমাকেই বলছেন,এই দিনটার জন‍্যই অপেক্ষা করছিলেন। তারমানে আমার একটা ভুলের জন‍্য অপেক্ষা করেছিলেন আমাকে বাদ দেবে বলে? কোচ আমাদের কাছে শিক্ষকের মতো। তিনিই ভুল শুধরে দেবেন। ভাল খেললে প্রশংসা করবেন। খারাপ খেললে বকাঝকা করবেন। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি যে ভাবে কথাগুলি বলে আমাকে অপমান করলেন তা মেনে নেওয়া যায় না। ওই অপমান সহ‍্য করেও পরে দুদিন প্র‍্যাকটিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু কোচ আমার সঙ্গে কথায় বলতেন না। খুব খারাপ লাগত। তারপর আর বাংলা শিবিরের প্র‍্যাকটিসে যায়নি।”

আপনি কি চায়ছেন? এই প্রতিবেদককে রিতম বলেন,”আমি বাংলা দলের চূড়ান্ত দলে সুযোগের জন‍্য আইএফএ সচিবকে নালিশ করছি না। আমি জানি ভাল খেললেও এই কোচ আমাকে নেবেন না। আমি চাই ভবিষ্যতে আর কোনও ফুটবলার যেন এমন ভাবে অপমানিত হতে না হয়। এই অপমান একধরনের মানসিক অত‍্যাচার।” আপনি নিজে আইএফএ সচিবের কাছে এলেন না কেন? রিতম ফোনে জানান,”আজ সকালেই আমাকে বিশেষ কাজের জন‍্য কেরল আসতে হয়েছে। তাই আমি চিঠি লিখে বাবার হাত দিয়ে আইএফএ সচিব অনির্বান স‍্যারের কাছে পাঠিয়েছি। তিনি যদি আমাকে পরে ডাকেন তখন অবশ‍্যই অনির্বান স‍্যারের কাছে যাব।”

এই ব‍্যাপারে অভিযুক্ত কোচ অমিত ঘোষকে ফোন করে প্রতিক্রিয়া জানতে চায়লে তিনি ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলেন,”ও যা অভিযোগ করছে তা ঠিক নয়। খারাপ খেললে কোচ হিসেবে কিছু বলতে পারব না?”
কিন্তু রিতমের অভিযোগ হল, আপনি নাকি তাঁকে বলেছেন, এই দিনটার জন‍্য অপেক্ষা করছিলেন। এখনই বাদ দিতে পারেন। কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না। উত্তর দিতে গিয়ে কোচ অমিত ঘোষ বলেন,”এই ধরনের কথা আমি বলিনি।”
রিতমকে ফোনে ফের যোগাযোগ করে কোচের বক্তব‍্য জানানো হয়। রিতম তখন বলেন,”দেখুন মাঠে যা ঘটেছে, যে কথাগুলি বলেছেন তা তো আর কেউ রেকর্ডিং করেনি। তবে সব ফুটবলাররাই শুনেছে। অনেকে আমাকে শান্তনা দিয়েছে। কিন্তু ওরা ভয়েই কোচের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চায় না। যদি দল থেকে বাদ পড়ে যায়। আমি আইএফএ-এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।”

এদিকে, এই বিষয়ে আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত জানান,”ফুটবলার রিতমের অভিযোগ পেয়েছি। দেখুন, ফুটবলার ভুল করলে কোচ বকাঝকা করতেই পারে। কিন্তু কোনও কোচই ফুটবলারকে অপমান করতে পারে না। রিতমের বাবা চিঠি নিয়ে এসেছিলেন। আমি কোচের সঙ্গে কথা বলব।”
রিতমের বাবা প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন,” আমি দুই দিন আগে ফোনেই আইএফএ সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। উনি সময় দিয়েছেন। আমার সব কথা মন দিয়ে শুনেছেন। ছেলের লেখা চিঠিও গুরুত্ব দিয়ে পড়েছেন। আইএফএ ফুটবলারদের বক্তব‍্য শুনছে এটা দেখে ভাল লাগল। আইএফএ সচিব অনির্বান দত্তকে অনেক ধন‍্যবাদ। আমি চাই ভবিষ্যতে আর কোনও ফুটবলারের ক্ষেত্রে যেন এমনটা না ঘটে। আমরাও তো কোচিং করি। এই ধরনের অপমান একধরনের মানসিক অত‍্যাচারের সমান। ফুটবল মাঠে এসব বন্ধ হওয়া উচিত।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই রিতম ভট্টাচার্য ২০২১ সালে ধানবাদ ফুটবল অ‍্যাকাডেমিতে ফুটবলের তালিম নিয়েছিলেন। সেই অ‍্যাকাডেমি থেকেই অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলের ক‍্যাম্পেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেই বছর অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ কাপ না হওয়ায় শিবির ছেড়ে আসতে হয় সকল ফুটবলারদের। সদ‍্য শেষ হওয়া কলকাতা লিগের প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্লাব ভবানীপুরে সই করেছিলেন। এটাই রিতমের প্রথম গড়ের মাঠের প্রথম ক্লাব। প্রসঙ্গত, রিতমের বাবা প্রবীর ভট্টাচার্য হলেন স্পোর্টস কাউন্সিলের ফুটবল কোচ। যিনি এখন বেঙ্গল ফুটবল অ‍্যাকাডেমিতে কোচের ভূমিকা পালন করছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here