ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,১৫ এপ্রিল : লকডাউনের কারণে গত বছর ফুটবলের বার পুজো বন্ধ ছিল। এক বছর পর কলকাতার গড়ের মাঠ সহ গোটা বাংলার ফুটবল মহল বার পুজো উৎসবে সামিল হল স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
এবারের বাংলার নতুন বছরের প্রথম দিনেই বার পুজোর উৎসবে হাজির আইএফএ-র প্রথম সারির তিন কর্তা। কিন্তু মুখোমুখি হলেন না কেউই। উপস্থিত ময়দানের এক ঝাঁক কর্তাদের মধ্যেও কৌতুহল। কিন্তু কর্তাদের সেই কৌতুহল থেকেই গেল।
প্রতিবারের মতোই এবারও ঘটা করে পয়লা বৈশাখের পুজো করেন খিদিরপুর স্পোর্টিং ক্লাবের দুই কর্তা সিদ্ধার্থ বিশ্বাস (বুবুন) ও অমিতাভ বিশ্বাস (টুলু)। শতবর্ষের এই খিদিরপুর ক্লাবে খেলে বহু ফুটবলার ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একটা সময় ভুতনাথ বিশ্বাসের খিদিরপুর ক্লাবে খেলার জন্য সবাই অপেক্ষা করে থাকতেন বহু ফুটবলার। বর্তমানে গড়ের মাঠে যতগুলি ক্লাব আছে তার মধ্যে একমাত্র খিদিরপুর স্পোর্টিং ক্লাবে নিয়মিত ফুটবল চর্চার আড্ডায় সামিল হন বহু প্রাক্তন ফুটবলার ও বিভিন্ন ক্লাবের কর্তারা। এমন একটা ক্লাবের পয়লা বৈশাখের পুজোয় সামিল হয়েছিলেন আইএফএ-র সভাপতি অজিত ব্যানার্জি ও চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত। এসেছিলেন জয়দীপ মুখার্জিও। এই মূহুর্তে জয়দীপের সচিব পদে থাকা না থাকা নিয়ে ময়দান সরগরম। এমন পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান, সভাপতি ও সচিব বারপুজো উপলক্ষ্যে খিদিরপুর ক্লাব তাঁবুতে হাজির। প্রথমে এলেন সভাপতি অজিত ব্যানার্জি। খিদিরপুর ক্লাবের লনে বসে তিনি আড্ডাও দিলেন বেশ কিছু ময়দানের ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে। তিনি আধ ঘন্টা থেকে চলে যাওয়ার পর খিদিরপুর ক্লাবে আসেন আইএফএ চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত। তাঁর আসার পাঁচ মিনিট পর আসেন জয়দীপ মুখার্জিও। তাঁরা এলেও আইএফএ-অচলাবস্থা নিয়ে কোনও প্রসঙ্গ ওঠেনি। জয়দীপ প্রায় দশ মিনিট ছিলেন। সুব্রত দত্ত ছিলেন প্রায় আধঘন্টা। অজিত ব্যানার্জির আগেই খিদিরপুর ক্লাব তাঁবু ছেড়ে চলে যাওয়ায় সচিব ও সভাপতির সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার দৃশ্য দেখা গেল না।
করোনার প্রকোপের কারণে মোহনবাগান ক্লাবে সদস্য-সমর্থকদের মাঠে প্রবেশাধিকার ছিল না। দুই কর্তা সৃঞ্জয় বসু ও দেবাশিস দত্তর নেতৃত্বে মাঠের ভিতরেই পুরোহিত ডেকে রীতি মেনেই বারপুজো হয় মোহনবাগান ক্লাবে।
তবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের বারপুজোয় সদস্য-সমর্থকদের প্রবেশাধিকার ছিল। বারপুজো উপলক্ষ্যে সুভাষ ভৌমিক, দেবজিৎ ঘোষ থেকে মেহেতাব হোসেন, অনীত ঘোষ সহ এক ঝাঁক প্রাক্তন ফুটবলার ইস্টবেঙ্গল মাঠে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, এদিন রবীন্দ্র সরোবরে ঘটা করে বারপুজো করলেন সাদার্ন সমিতির কর্তা সৌরভ পাল। বারপুজোয় সামিল হয়েছিল ময়দানের উয়াড়ী ক্লাবও।
কলকাতার গড়ের মাঠ ছাড়াও বাংলার বিভিন্ন জেলার ফুটবল ক্লাব এদিন বার পুজো করে। মালদা ক্লাবের সচিব কিশোর ভকতের উদ্যোগে তাঁদের ক্লাবের কোচিং ক্যাম্পের ফুটবলারদের নিয়ে বৃন্দাবনী মাঠে বারপুজো করে।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ টাউন ক্লাবের অন্যতম কর্তা অরিজিৎ ঘোষের নেতৃত্বে বারপুজো উৎসবে সামিল হয়েছিল এক ঝাঁক ফুটবলার। পিছিয়ে ছিল না দিনহাটার ডলফিন ফুটবল অ্যাকাডেমির ফুটবলার, কর্তারাও। বাকুড়ার সারেঙ্গা একাদশ ও এনসিবিএস ফুটবল ক্লাবও ঘটা করে বারপুজো করে।
দক্ষিন২৪ পরগনা জেলার হাবড়ায় গোষ্ঠপাল ফুটবল অ্যাকাডেমিতে বারপুজোয় অংশ নিয়েছিল প্রায় দুশো ফুটবল শিক্ষার্থী। প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জোতিপ্রিয় মল্লিক বরাবর এই অ্যাকাডেমির পাশে আছেন। নিজের নির্বাচনের কাজের ফাঁকেও হাবড়ার এই গোষ্ঠপাল অ্যাকাডেমির বারপুজোয় এসেছিলেন এবং ফুটবলারদের সঙ্গে সময়ও কাটালেন।
বেহালার শৈলেন মান্না ফুটবল অ্যাকাডেমিতেও এদিন সকালে বারপুজো হয়। এই অ্যাকাডেমির সচিব গৌতম দাসের উদ্যোগে হওয়া বারপুজোয় হাজির ছিল বিভিন্ন বয়সের ফুটবলাররা।
করোনার লাল চোখকে ভয় না পেয়ে ফুটবলের সাধনায় যেভাবে বিভিন্ন ক্লাব কর্তা, ফুটবলাররা বার পুজোয় সামিল হলেন তা নজিরবিহীন।