ফুটবলার গড়তে অশোকনগরে তৈরি ‘ড্রিম ফুটবল অ‍্যাকাডেমি’

0

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন, অশোকনগর (উ:২৪পরগনা) : ফুটবল গরীবের খেলা। বাংলার ফুটবলে বেশির ভাগ গরীব ঘরের ছেলেরাই ফুটবল খেলে। এটাই আমরা জানি। কিন্তু উ:২৪ পরগনার অশোকনগরের ৮ নম্বর কালীবাড়ি এলাকায় গেলে অন‍্য ছবি দেখা গেল। বছরে নির্দিষ্ট একটা টাকা দাও। তার বিনিময়ে থাকা,খাওয়া, শিক্ষা, মেডিক্যাল ইন্সিওরেন্স, সুইমিং,জিম এবং অবশ‍্যই ফুটবল শেখার ব‍্যবস্থা।

অশোকনগরে গড়ে ওঠা এই ফুটবল অ‍্যাকাডেমির নাম-“ড্রিম ফুটবল অ‍্যাকাডেমি।” টাকা দিলেই যে ফুটবল শেখার সুযোগ মিলবে তাও নয়। ট্রায়াল নেওয়া হবে। পাশ করতে পারলে ঢোকা যাবে “ড্রিম ফুটবল অ‍্যাকাডেমিতে।” বছরে টাকা দিয়ে (প‍্যাকেজ) রেসিডেন্সিয়াল ক‍্যাম্প বাংলায় আছে শুধু রাজ‍্য সরকারের “বেঙ্গল ফুটবল অ‍্যাকাডেমি।” আদিত‍্য গ্রুপ মোটা টাকার মাইনেতে ফুটবল শেখায় ঠিকই কিন্তু আবাশিক নয়। সেক্ষেত্র “বেঙ্গল ফুটবল অ‍্যাকাডেমি”-র পরেই ড্রিম ফুটবল অ‍্যাকাডেমি”। অতীতে নিউটাউনে (এখন যেখানে কোল ইন্ডিয়ার অফিস আছে তার পাশে) এই ধরনের ফুটবল অ‍্যাকাডেমি তৈরি করেছিলেন জনৈক মোদি নামে এক ভদ্রলোক। সেখানেও থাকা,খাওয়া, পড়াশোনা এবং ফুটবল খেলার ব‍্যবস্থা ছিল। একটা সময় সেই অ‍্যাকাডেমির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিল সাদার্ন সমিতি। কিন্তু সেই ফুটবল অ‍্যাকাডেমির কর্তা মোদির উদ্দেশ‍্য ইতিবাচক ছিল না। ফুটবলকে সামনে রেখে ব‍্যবসা করতে চেয়েছিলেন মোদি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে মোদির সেই অ‍্যাকাডেমি।

অশোকনগরের “ড্রিম ফুটবল অ‍্যাকাডেমি” গড়ে তুলেছেন প্রাক্তন ফুটবলার ও বসিরহাটের ছেলে আব্দুল মান্নান। তাঁর সঙ্গে আছেন কাশ্মীরের এক প্রাক্তন ফুটবলার বিনিত রাওয়াল।
প্রায় ৪০ জন ফুটবলার এই অ‍্যাকাডেমিতে আছে। যার মধ‍্যে আছে মনিপুর,বিহার, অসম, গুজরাট ও ঝাড়খন্ডের বেশ কয়েকটি ছেলে। এরা প্রত‍্যেকেই অশোকনগর ৮ নম্বর কালীবাড়ির মোড়ে তিন তলার “ড্রিম ফুটবল অ‍্যাকাডেমি”-র হস্টেলে থাকে। এই তিন তলার হস্টেলেই আছে জিম। এক একটা ঘরে আছে ঝকঝকে ৯ টি করে বাঙ্ক। এক একটা বাঙ্কে একজন করে ফুটবলার। আর যারা স্থানীয় তারা বাড়ি থেকেই যাতায়াত করে।

এটাও কি নিউটাউনের মোদির মতো ফুটবল অ‍্যাকাডেমি হবে নাতো? প্রশ্নটা শুনে “ড্রিম ফুটবল অ‍্যাকাডেমি”-র অন‍্যতম কর্তা আব্দুল মান্নান ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-কে বললেন,”আসলে যেখানে টাকার সম্পর্ক থাকে মানুষ সেটা প্রথমে একটু বাঁকা চোখে দেখে। আপনি নিউটাউনের যে অ‍্যাকাডেমির সঙ্গে তুলনা করে প্রসঙ্গটা তুললেন, সেই অ‍্যাকাডেমিতে আমি, নাজিমুল হক কোচিং করেছি। মতের অমিল হওয়ায় আমি সরে এসেছিলাম। সব কিছুতেই সময় কথা বলে। আমি নিশ্চিত অদুর ভবিষ‍্যতে আমাদের এই অ‍্যাকাডেমি নিয়ে কেউ বাঁকা চোখে দেখবে না, ভুল ধারনা করবে না। আমরা কি ভাবে ফুটবলারদে রাখি, কি খাবার দিই বা কি ভাবে ফুটবল শেখানো হয় সেই ব‍্যাপারে আমাদের অনুপস্থিতিতে ফুটবলারদের জিজ্ঞাসা করতেই পারেন। আর একটা কথা আপনাকে জানিয়ে রাখি,আমরা কিন্তু প্রত‍্যেক ফুটবলারের কাছে টাকা নিইনা। আপনি আপনার মতো খোঁজ নিয়ে দেখুন, বেশ কিছু প্রতিভাবান ফুটবলার আছে অথচ তারা দুস্থ। সেই সব ফুটবলারদের কাছে একটা টাকাও নেওয়া হয় না।”

বিনিত রাওয়াল বলে এক কাশ্মীরের এক প্রাক্তন ফুটবলার এই অ‍্যাকাডেমির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। তিনি একটা সময় পঞ্জাবে খেলতেন। “আমি কাশ্মীরের ছেলে। কলকাতায় এখনও ফুটবলের জনপ্রিয়তা আছে। ব‍্যক্তিগত কারণে বেশিদিন ফুটবল খেলতে পারিনি। কিন্তু আমরা যদি কিছু ফুটবলার তুলে আনতে পারি তাহলেই আমরা সন্তুষ্ট হব।” কথাগুলি বলছিলেন অ‍্যাকাডেমির প্রেসিডেন্ট বিনিত রাওয়াল।

এই অ‍্যাকাডেমিতে আছেন এক বিদেশি কোচ জোসেপ মার্টিন। এছাড়াও আছেন কোচ সুপ্রিয় ভগত, তিলক সাহা, ফিজিও অমিত কুমার দাস, সিইও ইত্তাদুর ইসলাম।

এই অ‍্যাকাডেমি থেকেই উঠে আসছে রাহুল রানা, এম সিং, অর্ঘ‍্য ঘোষরা। ২০১৯ সালে বরনগর স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৫ আই লিগ খেলেছে। সেই বছর বনগাঁর অর্ঘ‍্য আই লিগে টপ স্কোরার হয়েছিল। “এখানে প্র‍্যাক্টিস করতে ভাল লাগে। বরনগরে যখন খেলি তখন কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য স‍্যারের পরামর্শ আমার খুব উপকার হয়েছে।” বলছিলেন অর্ঘ‍্য। এম সিং। মনিপুর থেকে ফুটবল শিখতে এসেছে এম সিং। বাবা ক‍্যান্সারে আক্রান্ত। বাড়িতে বাবা-মা ও দুই দিদি আছেন। কিন্তু ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই তার “ড্রিম ফুটবল অ‍্যাকাডেমিতে আসা। তার কথায়,”ওয়েবসাইটে এই অ‍্যাকাডেমির কথা জানতে পেরেছিলাম। পরে ট্রায়াল দিয়েই যোগ দিয়েছি। আমার কোনও সমস‍্যা হচ্ছে না। লক্ষ‍্য বাংলা থেকেই ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া।”

অসমের ধুলিয়াজান থেকে এসেছে রাহুল রানা। তাঁরও গলায় “ড্রিম ফুটবল অ‍্যাকাডেমি”-র স্তুতি। অ‍্যাকাডেমির ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল মান্নান বলছিলেন,”আইএফএ সামনের বছর থেকে বয়স ভিত্তিক লিগ করছে। এটা খুব ভাল উদ‍্যোগ। কোচিং ক‍্যাম্পের গুরুত্ব বেড়ে গেল। আশা করছি আমরা বেশ কিছু ছেলেকে কলকাতার গড়ের মাঠে খেলার সুযোগ করে দিতে পারব। আমাদের লক্ষ‍্য বাংলার ফুটবলে সাপ্লাই লাইনের একটা অংশ হয়ে ওঠা।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here