ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : ঢ়ৃচলে গেলেন ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ শ্যামল ঘোষ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। বেশ কয়েক মাস ধরেই ভারতের প্রাক্তন এই ডিফেন্ডার হৃদরোগে ভুগছিলেন। কিছুদিন আগে স্টেন্টও বসানো হয়। তারপর সব ঠিকই চলছিল। মঙ্গলবার সকালে কসবা সমন্বয় ক্লাবে আড্ডাও দেন। কিন্তু দুপুরের পর থেকে বুকে ব্যাথা শুরু হয়। ভর্তি করানো হয় এক বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। সন্ধ্যায় হাসপাতালেই শ্যামল ঘোষের মৃত্যু হয়। হঠাৎই অচ্যুৎ ব্যানার্জির ছাত্রকে চলে যেত হবে কেউ ভাবতেই পারেননি। মৃত্যুকালে শ্যামল ঘোষের বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। রেখে গেলেন স্ত্রী,পুত্র ও পুত্রবধূ। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার ফুটবলে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।
মোহনবাগান,ইস্টবেঙ্গল,মহমেডান এবং ভারতীয় দলে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন এই ডিফেন্ডার। কিংবদন্তি কোচ অচ্যুৎ ব্যানার্জির কাছে ফুটবলের তালিম নিয়েছিলেন শ্যামল। গড়ের মাঠে খিদিরপুর স্পোর্টিং ক্লাবে ফুটবল শুরু করেছিলেন। ১৯৭২ সালে খিদিরপুর থেকে সই করেন মোহনবাগানে। পরের বছর ইস্টবেঙ্গলের স্টপার চন্দ্রেশ্বর প্রসাদ মহমেডানে সই করেন। তখন তাঁর জায়গায় মোহনবাগান থেকে ইস্টবেঙ্গলে সই করানো হয় ডিফেন্ডার শ্যামল ঘোষকে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৯ পযর্ন্ত ইস্টবেঙ্গলেই খেলে গিয়েছেন। ১৯৭৭ সালে ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক ছিলেন। ১৯৭৪ ভারতের হয়ে এশিয়ান গেমসে মাথা উঁচু করে খেলেছিলেন। পরবর্তীকালে দেশের হয়ে মারডেকা টুর্নামেন্টেও খেলেছেন। ১৯৮০ সালে মহমেডানে সই করেন। বাংলার হয়েও বহু বছর খেলেছেন তিনি।
ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর কোচিংও করিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ও রাজস্থান ক্লাবে। ইস্টবেঙ্গলকে লিগ খেতাবও দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, পাহাড় থেকে বাইচুং ভুটিয়াকে তুলে নিয়ে এসেছিলেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত ও ভাস্কর গাঙ্গুলি। স্টাইফেন দিয়ে ইস্টবেঙ্গল কর্তারা যখন বাইচুংকে সই করান তখন ইস্টবেঙ্গলে কোচ ছিলেন শ্যামল ঘোষ। সেই সময় প্রতিভাবান বাইচুংকে আগলে রেখে লিগে খেলিয়েছিলেন কোচ শ্যামল। সিকিম থেকে কলকাতায় এসে বাইচংয়ের প্রথম কোচ ছিলেন শ্যামলই। কাদা মাঠে বাইচুংকে খুব সাবধানে মাঠে নামাতেন। নিজের ছেলের মতো ভেবেই বাইচুংকে ম্যাচ খেলাতেন,সব সময় আগলে রাখতেন।
ইস্টবেঙ্গলে দু-দফায় কোচিং করিয়েছেন। পরে রাজস্থান এবং বিধান নগর কোচিং সেন্টারে কোচের দায়িত্ব সামলেছেন। রাজস্থানে কোচিং করানোর পর ময়দানে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কেন ময়দানে আসা বন্ধ করেছিলেন? কয়েক মাস আগেও একান্ত আলাপচারিতায় এই প্রতিবেদককে একদিন শ্যামল ঘোষ বলেছিলেন,’আগের মতো ময়দানের পরিবেশ আর নেই। নোংরা রাজনীতি, স্বার্থপরতায় ভরে গিয়েছে। আমার আর ভাল লাগে না। ময়দান আমাকে আর টানে না।’ সাতের দশকের ফুটবলার জীবন থেকে পরবর্তীকালে শ্যামল ঘোষকে ময়দান অজাত শত্রু বলেই জানতো। বিতর্ক থেকে সরে থাকতে পছন্দ করতেন। প্রয়াত হয়েছেন বলেই নয়, তিনি সত্যিই অতি ভদ্র মানুষ ছিলেন।
একটা সময় সুরজিৎ সেনগুপ্ত, রঞ্জিত মুখার্জি আর শ্যামল ঘোষকে বলা হত ‘অমর-আকবর-অ্যান্টনি।’ এই তিন ফুটবলার ছিলেন খুব ভাল বন্ধু। তরুণ বয়সে রঞ্জিতের সঙ্গে চেহারায় অনেকটা মিল থাকায় রঞ্জিত মুখার্জির মা মজা করে তাঁদের ‘কৃষ্ণ-সুদমা’ বলে ডাকতেন। তাঁর পরম বন্ধু সুরজিৎ সেনগুপ্ত কয়েক মাস আগে চলে গিয়েছেন। এবার সেই বন্ধুর কাছে চলে গেলেন শ্যামলও।