◆প্রয়াত সুপ্রকাশ গড়গড়ি(ফাইল ছবি/২০১৮ বিশ্বকাপের আসরে)
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : ইস্টবেঙ্গলের ‘গড়গড়ি যুগ’-এর অবসান। সোমবার মধ্যরাতে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রাক্তন সফল ফুটবল সচিব সুপ্রকাশ গড়গড়ি। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
আটের শেষ ও নয়ের দশকের প্রথম দিকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তথা বাংলার ফুটবলের প্রশাসক,ফুটবলার রিক্রুটার হিসেবে সুপ্রকাশ গড়গড়ি একটা নাম ছিল। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ইতিহাসে সফল ফুটবল সচিব হিসেবে অজয় শ্রীমানির পরেই সুপ্রকাশ গড়গড়ির নাম যে উঠে আসবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
প্রাক্তন ফুটবলার বিকাশ পাঁজি ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলছিলেন,”গড়গড়িদা আমাদের কাছে খুব জনপ্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। তিনি ইস্টবেঙ্গলের সচিব হিসেবে সব কাজ করতেন। আজ,গড়গড়িদাকে নিয়ে কত যে স্মৃতি মনে পড়ছে। সালটি ঠিক মনে নেই। আমি আর কৃশানু সন্তোষ ট্রফি খেলতে গিয়েছিলাম মাদ্রাজে। কলকাতা ছাড়ার আগে মোহনবাগানের চুক্তিপত্রে আমি সই করে মাদ্রাজ গিয়েছিলাম। মাদ্রাজ থেকে ফিরে এসে কৃশানুরও মোহনবাগানের চুক্তিপত্রে সই করার কথা। মাদ্রাজের হোটেলে আছি। আমাদের ঘরে তখন অঞ্জন মিত্র। হঠাৎ দেখি লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি গায়ে আমাদের ঘরে ঢুকলেন গড়গড়িদা। আসলে আমরা মোহনবাগানে যাচ্ছি খবরটা পেয়ে লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি গায়েই ফ্লাইট ধরে দলবল নিয়ে মাদ্রাজে এসেছিলেন গড়গড়িদা। তখন গড়গড়িদার বিরাট দাপট। আমাদের ঘরে তিনি যেই ঢুকেছেন অঞ্জন মিত্ররা খাটের নিচে লুকিয়ে পড়েছিলেন। গড়গড়িদার ওইরকম দাপট সামলে সেইবার মোহনবাগানে খেলার ইচ্ছে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। মোহনবাগানে খেলব এটা সেই সময় গড়গড়িদার সামনে বলার আমাদের সেই সাহসটাই ছিল না। তবে তিনি আমাদের খুব ভালও বাসতেন। ফুটবলার মহলে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। গড়গড়িদার মৃত্যু ইস্টবেঙ্গলের একটা যুগের অবসান হল বলতেই পারেন।”
সুপ্রকাশ গড়গড়ি বানিজ্যিক ভাবে সঙ্গীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গড়গড়িবাবুকে ‘বেটা’ বলে ডাকতেন লতা। নিজের জমানায় গড়গড়ি পশ্চিমবঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের দুটি শো-এর আয়োজন করেছিলেন। একটি বাটানগরে দ্বিতীয়তটি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের মাঠে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ফান্ডের জন্য লতার অনুষ্ঠান করেছিলেন গড়গড়ি। একটা সময় তিনিই ইস্টবেঙ্গলের দল গড়তেন।
একটা সময় সুপ্রকাশ গড়গড়ি পল্টু দাসের সঙ্গে ক্লাব করেছেন। পরবর্তীকালে পল্টু দাসের বিরুদ্ধে গিয়ে বিরোধীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরে আস্তে আস্তে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বেশির ভাগ সময় মুম্বাইয়ে মেয়ের কাছে থাকতেন। ফুটবল তাঁর প্রাণ ছিল। ২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপও দেখতে গিয়েছিলেন। বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলের দলবদলের রিক্রুটার এবং সফল ফুটবল সচিব হিসেবে সুপ্রকাশ গড়গড়ির নাম উল্লেখযোগ্য।