◆YMSAএর ফুটবলারদের সঙ্গে প্রতাপ ঘোষ ও অমিত ভদ্র◆
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : কোনও জেলার ক্লাব ফুটবলারদের নিয়ে বিজয়া সম্মিলনী করছে সাম্প্রতিক কালে এমনটা শোনা যায়নি। রবিবার সন্ধ্যায় সোনারপুরের ক্ষিরিশতলার ‘কৃষ্ণভবন’-এ ফুটবলারদের নিয়ে বিজয়া সম্মিলনীর উৎসবে মাতলেন YMSA (ইয়ং মেনস স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশন) এর কর্তারা।
এই YMSA ক্লাবের উৎসবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সামিল হয়েছিলেন জেলার তিন প্রজন্মের তিন ভারতীয় ফুটবলার প্রতাপ ঘোষ, অমিত ভদ্র এবং রঞ্জন দে। শেষের দিকে হাজির প্রশান্ত চক্রবর্তীও। ছিলেন পোর্টের প্রাক্তন ফুটবলার দীপক রায় সহ জেলার একাধিক প্রাক্তন ফুটবলার। আর এঁদের সঙ্গে উৎসবে মাতলেন YMSA-এর বর্তমান ফুটবলাররা।
ছোট্ট অথচ ঝাঁ চকেচকে পরিচ্ছন্ন অনুষ্ঠানে হাজির আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত, আইএফএ – এর ফিনান্স কমিটির চেয়ারম্যান দিলীপ নারায়ণ সাহা, ইউনাইটেড ক্লাবের শীর্ষ কর্তা অলোকেশ কুন্ডু সহ ময়দানের এক ঝাঁক ক্লাব কর্তা এবং আইএফএ-র বেশ কিছু সিনিয়র স্টাফ।
ইয়ং মেনস স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশন আগে ছিল রবি কর্মকারের ক্লাব। ৬ বছর আগে এই ক্লাবের ঠিকানা ছিল কলকাতায়। খেলত আইএফএ লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে। ২০১৭ সালে রবি কর্মকারের থেকে হাত বদল হয়ে ক্লাবটির পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন সোনারপুরের বাসিন্দা ও প্রাক্তন ফুটবলার শঙ্কর বসু। ক্লাবটি নেওয়ার পর ক্লাবের নামের আগে ‘সোনারপুর’ শব্দটি ব্যবহার করা শুরু হয়। শঙ্কর বসু যখন (২০১৭) ক্লাবটি নিলেন তখন লিগ শুরুর মুখে। ভাল দল গড়তে না পারার জন্য তৃতীয় ডিভিশনে নেমে যায়। লড়াই চলছে।
কয়েক বছর থেকেই এই ক্লাবের কোচ ভারতের প্রাক্তন গোলরক্ষক প্রতাপ ঘোষ। এখন সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছেন ভারতের আর এক প্রাক্তন ফুটবলার অমিত ভদ্র। এই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভূমিপুত্র হওয়ার ফলে জেলার ফুটবলার তুলে আনতে YMSA কেই প্লাটফর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছেন অমিত ভদ্র-প্রতাপ ঘোষ। জেলার তৃণমূল স্তর থেকেই ফুটবলার তুলে আনার লক্ষ্য তাঁদের। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,অমিত ভদ্র এই মুহূর্তে YMSA এর চেয়ারম্যান।
অমিত ভদ্র ও প্রতাপ ঘোষ ছাড়াও এই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে উঠে এসেছেন মানস ভট্টাচার্য, কৃষ্ণেন্দু রায়,অতনু ভট্টাচার্য,গৌরাঙ্গ ব্যানার্জি, রূপক চৌধুরী, রঞ্জন দে, মেহেতাব হোসেন, অমিত দাস,চন্দন দাস, প্রশান্ত চক্রবর্তীর মতো বহু ফুটবলার। কিন্তু সেই ভাবে এই জেলা থেকে আগের মতো ফুটবলার উঠে আসছে না। অদুর ভবিষ্যতে যাতে ভাল মানের ফুটবলার তুলে আনা যায় সেই চেষ্টাই করছেন অমিত ভদ্র,প্রতাপ ঘোষরা।
এঁদের পরামর্শ মেনেই ভাল কিছু করার স্বপ্ন দেখছেন YMSA-এর দেবাশিস মন্ডল (ফুটবল সচিব), শঙ্কর বসু (ক্লাব সচিব), সন্দীপ বসু (সহসভাপতি) -র মত কর্তারা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আইএফএ -র সভাপতি অজিত ব্যানার্জি ও চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু এই দুই কর্তা কলকাতার বাইরে থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে অজিত ব্যানার্জি ও সুব্রত দত্ত YMSA কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত অনুষ্ঠানে এসে বলছিলেন,”ফুটবলারদের জন্য জেলার কোনও ক্লাব এই ধরনের বিজয়া সম্মিলনী উৎসব করছে এটা ইতিবাচক দিক। লিগ শেষ মানেই ফুটবলারদের ভুলে থাকা নয়। তাদের সুখে-দূঃখে পাশে থাকাটাই তো কর্তাদের আসল কাজ। একটা পরিবারের সদস্য হিসেবে ফুটবলারদের গুরুত্ব দেওয়ার যে আন্তরিক চেষ্টা YMSA দেখাল তা প্রশংসনীয়।”
ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার ও YMSA এর চেয়ারম্যান অমিত ভদ্র ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলছিলেন,”আমাদের জেলায় অনেক ভাল ফুটবলার আছে। এবছর যারা খেলেছে তাদের মধ্যে বেশ কিছু ফুটবলার আছে যারা একটু চেষ্টা করলেই গড়ের মাঠে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। যেহেতু YMSA কলকাতা লিগের তৃতীয় ডিভিশনে খেলে তাই এই মঞ্চ থেকেই জেলার ফুটবলের সাপ্লাই লাইন হওয়ার সুযোগ আছে। আশাকরছি ভাল কিছু হবে। গত তিন মাস ধরে যারা ঘাম রক্ত ঝড়িয়ে কলকাতা লিগ খেলল তাদের নিয়েই এই উৎসব। ভাল লাগছে আমাদের এই অনুষ্ঠানে এসেছেন আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত। গড়ের মাঠের অন্যতম কর্তা আলোও এসেছেন। ছিলেন আইএফএ-এর অন্য কর্তারাও। এঁদের উপস্থিতিতে আমাদের দলের ফুটবলররা উৎসাহ পাবে। এটা জেলা ফুটবলারদের কাছে ভাল বিজ্ঞাপন। YMSA এর দেবাশিস, শঙ্কুরা চেষ্টা করছে। একটা ক্লাব চালাতে গেলে অর্থের প্রয়োজন। জেলার বিত্তশালী ক্রীড়াপ্রেমিদের কাছে আমার আবেদন,আপনারা একটু এগিয়ে আসুন। আপনারা পাশে থাকলে আমাদের জেলার ফুটবলের চেহারাটাই বদলে যাবে।”
ভারতের আর এক প্রাক্তন রঞ্জন দে বলছিলেন,”ফুটবলারদের জন্য এই অনুষ্ঠান খুব ভাল। আমাদের জেলায় এমনটা আগে দেখিনি। ফুটবলররা উৎসাহ পাবে। অমিতদা,প্রতাপদা আছেন। আমিও YMSAএর সঙ্গে আছি।”
YMSA এর ফুটবল সচিব দেবাশিস মন্ডলের উদ্যোগেই এই বিজয়া সম্মিলনী। সামনের বছরের লিগ নিয়ে এদিন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন দেবাশিস এবং সচিব শঙ্কর বসু। আর দলের ফুটবলাররাও খুব খুশি। তাঁরা ভাবতেই পারেননি যে তাঁদের কথা ভেবে এমন একটা সুন্দর অনুষ্ঠান উপহার দেবেন কর্তারা।