ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : আবার প্রাক্তন ফুটবলারদের আসরে নামালেন ইস্টবেঙ্গলের জনৈক কর্তা? এমন প্রশ্ন উঠল বৃহস্পতিবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে ১১ জন প্রাক্তন ফুটবলারদের সাংবাদিক সম্মেলনই। কারা ছিলেন এই ১১ জনের কমিটিতে? ভাস্কর গাঙ্গুলি, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, মিহির বসু, বিকাশ পাঁজি, অলোক মুখার্জি, অতনু ভট্টাচার্য, প্রশান্ত ব্যানার্জি, রহিম নবি এবং সুমিত মুখার্জি। সাংবাদিক সম্মেলনে এই ৯ জন প্রাক্তন উপস্থিত থাকলেও কৃষ্ণেন্দু রায় ও মেহেতাব হোসেন উপস্থিত ছিলেন না।
প্রাক্তনদের দাবি, দিনের পর দিন ইস্টবেঙ্গল খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ ইস্টবেঙ্গল সমর্থক আফসোস করছে। প্রাক্তন ফুটবলার হিসেবে তাদের খারাপ লাগছে। তাই ক্লাবের কথা ভেবে তারা একটি রোড ম্যাপ করতে চান। ক্লাব সামর্থ অনুযায়ী টুর্নামেন্টে খেলুক। এই মর্মে গত ১৯ জানুয়ারি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে একটা চিঠিও দিয়েছেন বলে জানান প্রাক্তন ফুটবলার সুমিত মুখার্জি।
কিন্তু মিডিয়ার কাছে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানাতেই নানান প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রাক্তন ফুটবলাররা।

উপস্থিত ৯ প্রাক্তন ফুটবলারদের কাছে প্রশ্ন করা হয়, গত ১৬ বছর ধরে আই লিগ খেতাব জিততে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। তখন তো, প্রাক্তন ফুটবলাররা কমিটি গড়ে সমর্থকদের কথা ভেবে এমন পদক্ষেপ করেনি? প্রতিবাদ বা ক্লাবের দল গড়ার ক্ষেত্রে রোড ম্যাপ তৈরির কথাও গত ১৬ বছরে ভাবেননি? তাহলে এখন এখন কেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে প্রাক্তন ফুটবলারদের কমিটির মুখপত্র মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন,”তখন খেতাব জিততে পারেনি ঠিকই তবে ক্লোজ ফাইট করেছিল। কখনও সখনও চ্যাম্পিয়ন টিমের কাছাকাছি ছিল। এভাবে ম্যাচের পর ম্যাচ হারতে হয়নি। ভাস্কর গাঙ্গুলি বলে ওঠেন,”ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কি প্রতি বছর চ্যাম্পিয়ন হয়?” তখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, তাঁরা কি সত্যিই সমর্থকদের কথা ভেবে এই পদক্ষেপ করছেন? নাকি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের জনৈক কর্তার অস্তিত্ব বাঁচাতেই আসরে নেমে পড়েছেন? জবাবে কমিটির প্রশান্ত ব্যানার্জি বলতে থাকেন,”আমরা কোন কর্তার অস্তিত্ব বাাঁচাতে আসিনি। ক্লাব হারছে। দেখে ভাল লাগছে না। কোনও ক্লাব কর্তার কথায় এই সাংবাদিক সম্মেলনও করছি না। প্রাক্তন ফুটবলার হিসেবে এই পদক্ষেপ করছি। আপনারা যা বলছেন তা ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।”

বৃহস্পতিবার ৯ প্রাক্তনরা সাংবাদিক সম্মেলন করলেও ইস্টবেঙ্গলের জন্য রোড ম্যাপ কি তা খোলসা করে বলতে পারেননি প্রাক্তনরা। প্রশ্ন ওঠে, এই ব্যর্থতার জন্য কে দায়ি? ক্লাব কর্তারা নাকি ইনভেস্টররা দায়ি? এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন,”সমস্যা অনেক। যে দল গড়া হয়েছে তা আইএসএল খেলার যোগ্য নয়। দল গঠন ঠিক হয়নি। অবশ্য দল গঠন অনেক দেরিতে হয়েছে। সময় ছিল না। অতীত ভুলে এখন আমাদের সামনের দিকে তাকাতে হবে। আগে যা ভুল হয়েছে সেই ভুল যাতে না হয় সেটা মাথায় রাখতে হবে।”
আপনারা কি ইনভেস্টরের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন? উত্তরে প্রশান্ত ব্যানার্জি বলেন,” আমরা ইনভেস্টর নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। ইনভেস্টরদের সঙ্গে কথাও বলতে চাই না। আমরা যা বলার ক্লাবকে বলব। ক্লাব যদি আমাদের সাহায্য চায়, আমরা সাহায্য করব। এর বেশি তো কিছু করতে পারি না। আমরা ইস্টবেঙ্গলের ভাল চাই।” শ্রীসিমেন্টের সঙ্গে যখন চুক্তি জট নিয়ে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছিল, তখন, এক ঝাঁক প্রাক্তন ফুটবলার কর্তাদের হয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন। ময়দানে অভিযোগ ওঠে,ইস্টবেঙ্গলের জনৈক কর্তার ইচ্ছাতেই নাকি প্রাক্তনরা তখন আসরে নেমেছিলেন। কয়েক মাস ফের সেই প্রাক্তনদের দেখা গেল।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ জুন, সোমবার, এক অভিজ্ঞ ক্রীড়া সাংবাদিকের মধ্যস্থতায় শ্রীসিমেন্টের প্রতিনিধি শ্রেনিক শেঠের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার মিহির বসু, গৌতম সরকার ও সুমিত মুখার্জি। কিন্তু শ্রেনিক শেঠ ক্লাবের সঙ্গে তাদের কোম্পানির চুক্তিপত্র নিয়ে সদর্থক আলোচনা করতে পারেননি। জানা যায়, শ্রেনিক শেঠ নাকি সেই তিন প্রাক্তন ফুটবলারকে যথাযোগ্য সম্মান দিলেও তিনি নাকি বুঝেছিলেন, সেই প্রাক্তনরা আসলে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের জনৈক কর্তার প্রতিনিধিই। সেই কারণেই ওই তিন প্রাক্তনদের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বিষদে কোনও কথা বলতে চাননি বলে জানা যায়।

বৃহস্পতিবার ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে প্রাক্তনদের ১৪ জুনের সেই মিটিংয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য প্রশ্নকর্তাকে বলেন,”প্রাক্তনরা ইস্টবেঙ্গল কর্তার প্রতিনিধি আপনি কি করে জানলেন? ইনভেস্টর প্রতিনিধি কি বলেছে?” ততক্ষনে আর এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ইস্টবেঙ্গলের জনৈক কর্তাটি কি প্রাক্তনদের ব্যবহার করছেন? ভাস্কর গাঙ্গুলি তখন বলে ওঠেন,”কেউ আমাদের ব্যবহার করছে না। অতটা খারাপ অবস্থা আমাদের হয়নি।” সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রাক্তনদের সম্মেলন তখন উত্তপ্ত। সুমিত মুখার্জি তখন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলতে থাকেন,”এই বিতর্ক বাড়াতে চাই না। আমরা কারও নির্দেশে কোনও কিছুই করছি না। ক্লাবের কথা ভেবে আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকে জানাতে চাই। আমরা ইস্টবেঙ্গলের পাশে আছি, থাকবো।”
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে প্রাক্তনরা যে চিঠি দিয়েছিলেন তার জেরক্স কপি এদিন সাংবাদিকদের হাতেও তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তনদের সেই চিঠির একটি জায়গায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শেষ এজিএমে সভ্যদের অনুরোধ (‘কোনও একটা টুর্নামেন্টকে মাথায় রেখে খেলতে হবে বলে খেলবো,এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের সামর্থ অনুযায়ী টুর্নামেন্ট খেলবো…) উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রাক্তনরা চিঠিটা শেষ করেছেন,”…ক্লাব তার সঠিক সিস্টেম বজায় রেখে,সম্মান বজায় রেখে, সামর্থ অনুযায়ী টুর্নামেন্টে খেলে জয়ের অভ্যাসে ফিরে আসুক।”
১ ফেব্রুয়ারি ক্লাব লনে প্রয়াত সুভাষ ভৌমিকের স্মরণ সভায় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার বলেছিলেন,”সুভাষদা কিছু দিন আগেও আমাকে এবার ভাল করে দল গড়তে বলেছিল। সুভাষদা নিজে দল করবেও বলেছিল। সুভাষদা জানিয়েছিল, দরকার হলে আইএসএল খেলব না। আইলিগ খেলব, কলকাতা লিগ, শিল্ড খেলব। আমরা লড়াই করেই বাঁচবো। লড়াই করতে জানি।”
দেবব্রত সরকারের সেদিনের বক্তব্যর একদিন পর প্রাক্তনদের সাংবাদিক সম্মেলন। তাদের চিঠিতেও “সামর্থ অনুযায়ী টুর্নামেন্ট” খেলার কথা উল্লেখ আছে। তাহলে কি সামনের বছর আইএসএল থেকে সরে আই লিগেই ফিরছে ইস্টবেঙ্গল?
আইএসএল না আই লিগ? মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য,”আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। সিচুয়েশন মতো ব্যবস্থা হবে।”