◆বাংলার কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য ◆
◆সন্দীপ দে◆
সদ্য ন্যাশনাল গেমস থেকে সোনা জয়ী কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যকেই বাংলার সন্তোষ ট্রফির কোচ নির্বাচন করল আইএফএ। যা এটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু প্রত্যাশিত থাকলেও অনেক টালবাহানার পর বিশ্বজিৎকে বাংলার কোচ করা হল।
শুক্রবার চারটের সময় সন্তোষ ট্রফির কোচ নির্বাচন নিয়ে আইএফএ-এর কোচেস কমিটির মিটিং ছিল। সেই মিটিং শুরু হল বিকেল সাড়ে চারটের সময়। আর সেই মিটিং শেষ হল সোয়া ছ’টা নাগাদ। সাধারণত সফল কোচকেই পরবর্তী টুর্নামেন্টের জন্য তাঁকেই কোচ করা হয় এটাই দস্তুর। কিন্তু আইএফএতে এসবের কোনও মূল্য নেই। এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়, বাংলা শেষ বার যখন সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কোচ মৃদুল ব্যানার্জির হাত ধরে। অথচ পরের বছর সেই সফল কোচ মৃদুলকে আর কোনও সুযোগই দেয়নি আইএফএ। সেই সময় এই প্রতিবেদককে দূঃখ করে কোচ মৃদুল বলেছিলেন,”আমি কোচিং করাবো কিনা তা জানতে চেয়ে আইএফএ থেকে একটা ফোন পযর্ন্ত করেনি। এই অপমান কি আমার প্রাপ্য ছিল?”
একই ঘটনা ঘটতে চলেছিল আইএফএ-এর নবাগত সচিব অনির্বান দত্তর জমানেতেও। যে কোচ এক মাস আগে সোনা এনে দিলেন তাঁকে বাদ দিয়ে সন্তোষ ট্রফির কোচ করার জন্য আইএফএরই কিছু কর্তা রঞ্জন ভট্টাচার্যের হয়ে সওয়াল করলেন। যে রঞ্জনের সেই অর্থে কোনও সাফল্যই নেই (গতবার সন্তোষে রানার্স হয়েছিল),যে রঞ্জন দ্বিতীয় ডিভিশনের একটি ক্লাবের কোচ তাকেই কিনা ফের সন্তোষের কোচ করার জন্য সুপারিশ করে ফেললেন আইএফএ-এর কিছু অফিস বেয়ারার্সরা।
এদিন মিটিংয়ে কোচেস কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অমিত ভদ্র, অশোক চন্দ, তপনজ্যোতি মিত্র, ঝন্টু দে, কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার এবং অরুণ ঘোষ। সঙ্গে ছিলেন আইএফএ-এর অফিস বেয়ারার্সরা।
ওই মিটিংয়ে আইএফএ-এর কিছু কর্তা বাংলার সন্তোষ ট্রফির জন্য কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্যের নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু কোচেস কমিটির অধিকাংশ সদস্য বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের নাম সুপারিশ করেন। তাঁদের একটাই যুক্তি বিশ্বজিৎ সদ্য ন্যাশনাল গেমস থেকে সোনা এনেছেন। কেরলকে পাঁচ গোল দিয়েছেন। এমন সফল কোচই অটোমেটিক চয়েস। তাঁদের দ্বিতীয় পছন্দ ছিল ভবানীপুরের কোচ রঞ্জন চৌধুরী।
যদিও একমাত্র তপনজ্যোতি মিত্র নাম সুপারিশ করেন এবারের কলকাতা লিগে রানার্স ভবানীপুরের কোচ রঞ্জন চৌধুরীর। পরিস্থিতি বিশ্বজিতের অনুকূলে যেতে থাকে। তখনই ‘কাহানি মে টুইস্ট’। বিশেষ সূত্রের খবর, কোচেস কমিটির সভায় উপস্থিত আইএফএ-এর এক অফিস বেয়ারার্স হঠাৎ ফোন করেন বাংলার রাজনীতি জগতের এক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে সেই প্রভাবশালী ব্যক্তিও সন্তোষ ট্রফির জন্য রঞ্জন ভট্টাচার্যের নাম সুপারিশ করেন বলে অভিযোগ। আরও জানা যায়, সেই ফোন পেয়ে সভার বাইরে এসে কথা বলতে দেখা যায় আইএফএ সভাপতি অজিত ব্যানার্জিকে। বাইরে তখন (আইএফএ-র রিসেপসনের সোফায় বসে চার ক্রীড়া সাংবাদিক)।
ততক্ষনে দেড় ঘন্টা মিটিং হয়ে গেছে। প্রভাবশালীর বার্তা পেয়ে তখন কোচেস কমিটির দুই তিন জন নিজেদের পুরনো অবস্থান থেকে একটু যেন সরে আসেন। কিন্তু বাকি সদস্য বিশ্বজিৎকে কেন কোচ করা উচিত তা যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। এই রকম ঘেঁটে যাওয়া পরিস্থিতিতে হঠাৎ কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে এসে নিজের ঘরে ঢুকে পড়েন সচিব অনির্বান দত্ত। তারপরেই সভা থেকে বেরিয়ে এসে সচিবের ঘরে ঢুকে যান সভাপতি অজিত ব্যানার্জি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ডেকে নেওয়া হয় আইএফএ-এর দুই সহসভাপতিকে। প্রায় পনেরো মিনিট পর ফের কোচেস কমিটির সভায় যান সচিবরা। তারপর ফের বেরিয়ে আসেন। এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই আসন্ন সন্তোষ ট্রফির জন্য কোচ হিসেবে বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের নাম ঘোষণা করা হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আইএফএ-এর এক কর্তা সভার সদস্যদের অনুরোধ করেন সভার ভিতরের ঘটনা যেন বাইরে প্রকাশ না হয়। জানাজানি হলে নাকি আইএফএ-এর সুনাম নষ্ট হবে!
এই সভাকে ঘিরে উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
১) কোচেস কমিটি তৈরিই করা হয়েছে কোচ নির্বাচনের জন্য। সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যরাই কোচ নির্বাচন করে আইএফএ-এর পদাধিকারীদের জানিয়ে দেবেন। তারপরেই তা আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচিত কোচের নাম ঘোষণা করবে আইএফএ। এখানে তা কি হল?
২) কোচেস কমিটিকে স্বাধীন ভাবে কোচ নির্বাচনের দায়িত্ব কি দেওয়া হয়েছে? যদি তাই হয় তাহলে অফিস বেয়ারার্সরা সভায় থাকে কিকরে? সভায় থেকে নিজেদের পছন্দের কোচের নাম সুপারিশ করে কেন প্রভাবিত করা হল?
৩) নিজেদের পছন্দের কোচকে নির্বাচন করার জন্য কেন সভায় থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ফোন করে কোচেস কমিটির সদস্যদের মতামতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হল?
৪) সভা চলাকালীন কোচেস কমিটির সদস্যদের কনফারেন্স রুমে রেখে কেন সভাপতি,দুই সহ সভাপতিকে নিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে আলাদা মিটিং করলেন সচিব অনির্বান দত্ত? তাহলে কি ধরে নিতে হবে সচিব অনির্বান দত্ত কোচ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন? কিসের এত চাপ? কে সেই প্রভাবশালী ব্যক্তি? যার জন্য ছোট্ট,সহজ মিটিংটাই জটিল হয়ে উঠেছিল।
এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলে আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত বলেন,”দেখুন, কোচেস কমিটির সদস্যদের পছন্দের কোচকে মান্যতা দিয়েই সন্তোষ ট্রফির কোচ করা হয়েছে। এই নিয়ে অযথা জল ঘোলা না করাই ভাল।”
তাহলে হঠাৎ কি এমন ঘটল যে কোচেস কমিটির সদস্যদের কনফারেন্স রুমে রেখে নিজের ঘরে আপনাদের আলাদা মিটিং করতে হল? জবাবে অনির্বান দত্ত তখন বলেন,” এটা ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। তাই আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার জন্য সভা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, কোচেস কমিটি যে কোচকে বেছে নেবেন সেটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমরা সেটা ওনাদের জানানোর পর কোচেস কমিটির সদস্যরা বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যকেই কোচ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তাঁদের সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিয়েই আইএফএ আসন্ন সন্তোষ ট্রফির জন্য বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যকেই কোচ হিসেবে নিয়োগ করল।”