ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,১৮ মে : অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের কমিটি থেকে সরতে হচ্ছে প্রফুল্ল প্যাটেলদের। আজ,বুধবার সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে,ভারতীয় ফুটবল পরিচালনার জন্য তিন সদস্যর কমিটি করা হয়েছে। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি প্রফুল্লর কমিটি এ বার থেকে আর ফুটবল সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিন সদস্যের কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স গঠন করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই কমিটি সরাসরি দেশের শীর্ষ আদালতের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি পিএস নরসীমার তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। তিন সদস্যের যে কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স তৈরি করা হয়েছে, তার নেতৃত্বে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ আর দাভে, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি এবং প্রাক্তন ভিরত অধিনায়ক ভাস্কর গাঙ্গুলি।
ফেডারেশন কাজকর্ম নিয়ে তাঁদের কোনও পরামর্শ কিংবা বক্তব্য থাকলে, তা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের কাছে তুলে ধরতে হবে। আগামী নির্বাচনের আগে পর্যন্ত সচিব কুশল দাসের সঙ্গেও প্রশাসনিক আলোচনা করতে পারবে কমিটি। এআইএফএফের সূত্রের খবর, জুলাই মাসেই নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে দিল্লি হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন আইনজীবী রাহুল মেহেরা। ফেডারেশনের বিরুদ্ধে অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনেছিলেন তিনি। এমনকি নির্বাচন ঠিক ভাবে হয়নি সেই অভিযোগও করেছিলেন মেহেরা। পরে ২০১৭ সালে দিল্লি হাই কোর্ট প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার এসওয়াই কুরেশিকে ফেডারেশনের ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’ নিয়োগ করে। সমস্যা হল, কোনও সংস্থায় ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’ নিয়োগ ভালভাবে নেয় না ফিফা। সেটাকে মাথায় রেখে ফেডারেশন সুপ্রিম কোর্টে ফিফার নিয়ম দেখিয়ে আবেদন করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই একই কারণে পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশনকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল ফিফা। ফেডারেশপের আবেদন খতিয়ে দেখে সুপ্রিম কোর্ট তখন এসওয়াই কুরেশি ও প্রাক্তন অধিনায়ক ভাস্কর গাঙ্গুলিকে অম্বুডসম্যান হিসেবে নিয়োগ করে। তাঁদের কাজ ছিল,স্পোর্টস কোড মেনে ফেডারেশনের অতীত কাজ, সংবিধান সংশোধন (যদি প্রয়োজন হয়) তৈরি করার ক্ষেত্রে সহায়তা করা। তবে এটাও বলা হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট যতক্ষণ কোনও নির্দেশ না দিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত পুরনো কমিটিই ফেডারেশনের সবকিছু দেখভাল করবে। এর মাঝে ভাস্কর গাঙ্গুলি অনেক আগেই তাঁর রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত এতদিন কোনও নির্দেশ দেননি। প্রফুল্ল প্যাটেলের সভাপতি পদে ১২ বছর থাকা হয়ে গেছে। সূত্রের খবর, অনূর্ধ্ব -১৭ বিশ্বকাপ পযর্ন্ত সভাপতি থাকতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ শোনা যায়। কিন্তু করোনার কারণে সেই বিশ্বকাপ স্থগিত হয়ে যায়। চলতি বছরে অক্টোবরে বিশ্বকাপ হওয়ার কথা। কিন্তু ফেডারেশেনের একটা অংশ এবং দিল্লির কিছু মহল নির্বাচন করানোর পক্ষে একটা চাপ তৈরি করেছিল। পরিস্থিতি দেখে ফেডারেশন নির্বাচন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনও করেছিল কয়েক মাস আগে। নির্বাচন করার নির্দেশ এখনও দেয়নি সর্বোচ্চ আদালত।
এর মাঝে আবার আর্থিক অস্বচ্ছতা নিয়ে ক্যাগ বিষয়টি দেখতে থাকে। চাপে পড়ে যায় ফেডারেশন। যদিও ফেডারেশনের দাবি করেছে,অনেক দিন আগেই আর্থিক হিসাব আদালতে জমা করেছে। প্রসঙ্গত, এআইএফএফের ইতিহাসে এই প্রথম কমিটি ভেঙে দিল সুপ্রিম কোর্ট। তাছাড়া গত দেড় মাস ধরে কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে এআইএফএফকে আতস কাচের নিচে ফেলে নজরে রেখেছে সেটাও ভারতীয় ফুটবলে খুব একটা ভাল বার্তা নয়। প্রফুল্ল প্যাটেল আর সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না তা এখনই বলে দেওয়া যায়। কিন্তু ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি পদে কে বসবেন? কোনও রাজনৈতিক দলের পছন্দের ব্যক্তি সভাপতি হয়ে যাবেন না তো? সব মিলিয়ে চাপেই থাকল সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন।