◆সন্দীপ দে ◆
প্রায় তিন দশকের বেশি সময় পর IFA এর সহসচিব পদে বসলেন কোনও মহিলা। আটের দশকের শেষ দিকে আইএফএতে প্রথম সহসচিব পদে বসেছিলেন বৌবাজার YMU-এর অনিমা পন্ডিত। তখন আইএফএ-সচিব ছিলেন প্রয়াত প্রদ্যোৎ দত্ত। অনিমা পন্ডিতই ছিলেন আইএফএ-এর ইতিহাসে প্রথম ও শেষ মহিলা সহসচিব। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় তিনটি যুগ। আর মঙ্গলবার দ্বিতীয় মহিলা হিসেবে সহসচিবের চেয়ারে বসলেন সুদেষ্ণা মুখার্জি। প্রদ্যুত দত্তর জমানায় প্রথম মহিলা সহসচিব নিয়োগের পর তাঁরই জৈষ্ঠ পুত্র অনির্বান দত্তর জমানায় IFA এর ইতিহাসে দ্বিতীয় মহিলা সহসচিব নিযুক্ত হল। আর এমন একটা দিনে ঘটনাটি ঘটল যেদিন (১৮ জুন) কিংবদন্তি ফুটবল প্রশাসক প্রয়াত প্রদ্যুত দত্তর ৮৪ তম জন্মদিনে।
সহসচিব পদে কারা এই আসতে চলেছেন তা গত সোমবার ‘ইনসাইড স্পোর্টসে’ প্রকাশ হয়েছিল। মঙ্গলবার গভর্নিং বডির সভায় সেটাই শীলমোহর পড়ল। অর্থাৎ রাকেশ (মুন) ঝাঁ,বিশ্বজিৎ ভাদুড়ি, মহম্মদ জামাল এবং সুদেষ্ণা মুখার্জি সহসচিবের পদে বসলেন।
আরও একটা উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে এই প্রথম কোন ক্রীড়া সংগঠক IFA সহসচিব হলেন। সেই দিক দিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বজিৎ ভাদুড়ি নজির গড়লেন। তিনি বর্তমানে মুর্শিদাবাদ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব এবং IFA এর সহসভাপতি ছিলেন। তিনি ভাল সংগঠক। সহসভাপতি পদটি পদমর্যাদায় সহসচিবের থেকে বড় পদ তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে সহসভাপতি পদটি আলঙ্কারিক। সেই তুলনায় সহসচিবের পদটি কিন্তু কাজ করার ক্ষেত্রে যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ পদ। হয়তো সেই কারণেই বিশ্বজিৎবাবুকে সহসভাপতি পদ থেকে সহসচিব পদে নিয়ে আসে শাসকগোষ্ঠী।
রাকেশ ঝাঁ। ময়দানে মুন বলে পরিচিত। তাঁর নিজস্ব ক্লাব (শ্রীভূমি এফসি) আছে। মাঠে থেকে কাজ করেন। তাঁকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয় তা নিঃশব্দে করেন প্রচার বিমুখ রাকেশ। মহম্মদ জামাল ও সুদেষ্ণাও যোগ্য। সব মিলিয়ে এবারের IFA এর শীর্ষস্থানীয় কর্তারা যোগ্য চার সহসচিব ঠিক করেছেন। গভর্নিং বডির সভা তা পাশও হয়ে গেল।
এদিন মেরে কেটে ২৫ মিনিটেই গভর্নিং বডির সভা শেষ হয়ে গেল। সব মিলিয়ে ৪৩ জন গভর্নিং বডির সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। যা অভুতপূর্ব। সাম্প্রতিক কালে এত সংখ্যায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে গভর্নিং বডির সভায় এত সদস্য হাজির হতে দেখা যায়নি যা এদিন হাজির হয়েছিলন। যদিও এদিনের সভায় গরহাজির ছিলেন মোহনবাগান, মহমেডান সহ কয়েকটি ক্লাব। তারা আইএফএকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, মাত্র ৪৮ ঘন্টা আগে গভর্নিং বডির সভা ডাকা হয়েছে। এই ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আবার দুই দিন ছুটি ছিল। সভা ডাকার পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকার কারণেই নাকি এই কটি ক্লাব আসেনি। এই অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আইএফএ চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত বলেন,”প্রথমত আমরা ৬০ ঘন্টা আগে সভা ডেকে সবাইকে মেল করা হয়েছে। আর এই ৪৮ ঘন্টায় কোনও ওয়ার্কিং ডে উল্লেখ নেই। সংবিধান মেনেই সভা ডাকা হয়েছে। কাজেই সভা ডাকার ক্ষেত্রে কোনও ত্রুটি নেই। সংবিধান বইটি পড়লেই স্পষ্ট হবে।”
এদিন সভায় চার নম্বর অ্যাজেন্ডায় সহসচিব নির্বাচনের বিষয়টা তোলেন আইএফএ সভাপতি অজিত ব্যানার্জি। তিনি সভায় বলেন, সহসচিব হিসেবে নাম প্রস্তাব করুন। প্রবীন কর্তা প্রদীপ বসু প্রস্তাব করেন রাকেশ, বিশ্বজিৎ, জামাল ও সুদেষ্ণার নাম। এই নামগুলোয় কারও আপত্তি আছে কিনা জানতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে সভার সকল সদস্য সমর্থন করেন। সংশ্লিষ্ট চার সহসচিব পদ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ লড়াইয়ে যাননি। ফলে এই চারজন সহসচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। ব্যালট বাক্স তৈরি ছিল। শুধু ছিল না প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনও ব্যক্তি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আইএফএতে শেষ ভোট হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। ১৯৯৪ সালের ১৬ নভেম্বর আইএফএ-এর তৎকালীন সচিব প্রদ্যুত দত্তর মৃত্যু হয়। ১৯৯৫ সালের শুরুতেই সচিব পদে নির্বাচনে লড়াই করেন প্রয়াত রঞ্জিত গুপ্ত, মন্টু ঘোষ এবং কৃষ্ণেন্দু ব্যানার্জি। সেই নির্বাচনী লড়াইয়ে হেরে গিয়েছিলেন কৃষ্ণেন্দু। যুগ্ম সচিব পদে বসেছিলেন রঞ্জিত গুপ্ত ও মন্টু ঘোষ। তারপর আর আইএফএ তে ইলেকশন হয়নি। যা হয়েছে সব সিলেকশন।