প্রথমবার প্রিমিয়ারে ফুটবলারদের নিয়ে উৎসবে মাতলেন ক‍্যালকাটা পুলিশ ক্লাবের কর্তারা

0

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : ৯-এর দশকে সুব্রত ভট্টাচার্যকে কোচ করে ময়দানে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ ফুটবল দলের কর্তারা। দলের স্বার্থে, ভাল ফুটবলের স্বার্থে রাজ‍্য পুলিশ দলের কর্তারা তখন যেন সবাই এককাট্টা। সেই সময় পূলিশের ফুটবল দল নিয়ে প্রতিপক্ষ দলগুলি মাঠে নামার আগে যথেষ্ট ভাবনা চিন্তা করত। সেই সব দিন এখন আর নেই। যত দিন যাচ্ছে ততোই যেন নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। এবছর তো ওয়েষ্ট বেঙ্গল পুলিশ দল প্রিমিয়ার থেকে অবনমন হয়ে গিয়েছে।

কলকাতা ফুটবল লিগে পুলিশের তিনটি ফুটবল দল। ১) ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ (রাজ‍্য পুলিশ)। ২) পুলিশ অ‍্যাথলেটিক ক্লাব। ৩) ক‍্যালকাটা পুলিশ ক্লাব। একটা সময় ফুটবল খেলে স্পোর্টস কোটায় পুলিশে চাকরি পেতেন ফুটলাররা। ফলে নতুন মরসুমের জন‍্য পুলিশের দল করতে সুবিধে হত। এখন পুলিশ কর্তাদের আর সেই সুযোগ নেই। বামফ্রন্ট জমানার শেষ দিকের সময় থেকে ফুটবল খেলে পুলিশে চাকরি পাওয়ার সুযোগটা বন্ধ হয়ে যায়। অতীতে যারা পুলিশে চাকরি করে ফুটবল খেলেন তাঁদের বয়স বেড়ে গিয়েছে। অথবা বদলি হয়ে গিয়েছে জেলায়। ফলে বাইরে থেকে কোনও রকমে দল তৈরি করে পুলিশ। বর্তমানে কলকাতা লিগে পুলিশের ৩ দলের স্ট‍্যাটাস এই রকম – প্রিমিয়ার থেকে নেমে গিয়ে প্রথম ডিভিশনে ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ দল। পুলিশ অ‍্যাথলেটি ক্লাব প্রিমিয়ারে এখনও আছে। আর ক‍্যালকাটা পুলিশ ক্লাব (পার্কস্ট্রিটের -মেও রোডের সংযোগস্থল) সবাইকে চমকে দিয়ে এই প্রথমবার তারা প্রথম ডিভিশন থেকে প্রিমিয়ার ডিভিশনে পৌঁছেছে। তিন বছর আগে ক‍্যালকাটা পুলিশ ক্লাবের সচিব ও কোষাধ‍্যক্ষ মহাদেব চক্রবর্তী ও শান্তনু চ‍্যাটার্জি উদ‍্যোগী হয়ে প্রিমিয়ারে ওঠার লড়াই শুরু করেছিলেন।

অবশেষে প্রথম লক্ষ‍্যে পৌঁছতে পেরেছেন ওঁরা। ফুটবলারদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল পেয়ে রবিবার সন্ধ‍্যায় পার্ক স্ট্রিট মোড়ের ক‍্যালকাটা পুলিশ ক্লাব তাঁবুতে ফুটবলারদের নিয়ে উৎসবে মাতলেন কর্তারা। ফুটবলারদের জন‍্য গান, বাজনা, ডিনারের সুব‍্যবস্থা ছিল। এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদ‍্য ‘পদ্মশ্রী’ মৃৎ শিল্পী সনাতন রুদ্র পাল এবং আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত। ছিলেন দলের সকল ফুটবলাররা। আর ছিলেন একাধিক পুলিশ অফিসারেরা। ছিলেন ইউনাইটেড স্পোর্টসের কর্তা অলোকেশ কুন্ডু। প্রত‍্যেক ফুটবলারকে ট্রাকশ‍্যুট এবং দলকে দুই লক্ষ টাকা দেন পুলিশ কর্তারা।

আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত পুলিশ ফুটবলারদের উৎসাহ দিতে গিয়ে বলেন,”তোমরা কঠিন লড়াই করে প্রিমিয়ার ডিভিশনে উঠেছো। এই বছর লিগে সব থেকে প্রথম ডিভিশনের লড়াইটা খুব কঠিন ছিল। সেই লড়াই তোমরা উত্তীর্ণ হয়েছো। এবার আগামী মরসুমে প্রিমিয়ারের সুপার সিক্সে ওঠার লক্ষ‍্য তৈরি কর। ক‍্যালকাটা পুলিশ ক্লাবের কর্তারা নিজেদের কর্ম ব‍্যস্ততার মধ‍্যে থেকেও যে ভাবে ফুটবল দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে থাকে তার জন‍্য কর্তাদের অভিনন্দন জানাই। এই ভাবেই এগিয়ে চলুন।”

সচিব মহাদেব চক্রবর্তী বলেন, একটা লক্ষ‍্য ছিল সেটা পূর্ণ হয়েছে। এবার সামনের বছর আরও ভাল দল গড়ার চেষ্টা করব।” কোষাধ‍্যক্ষ শান্তনু চ‍্যাটার্জি ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলছিলেন,”প্রিমিয়ারে ওঠার জন‍্য যাবতীয় কৃতিত্ত্ব ফুটবলারদের। আর বিশেষ ভাবে ধন‍্যবাদ জানাতে চাই আমাদের কোচ বিজয়কে। ও খুব সুন্দরভাবে দলটাকে ধরে রেখে খেলিয়ে গিয়েছে। প্রিমিয়ারে ওঠা মানেই দল গড়ার খরচও বেড়ে যাবে। কতটা ভাল দল করতে পারি সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে চেষ্টা ত করবই।”

১৯৩২ সালে এই ক‍্যালকাটা পুলিশ ক্লাবের প্রতিষ্ঠা। ৯১ বছরের এই ক্লাব থেকে উঠে এসেছেন বিখ‍্যাত গোলরক্ষক প্রদ‍্যোৎ বর্মণ, হুসেন মুস্তাফি, অনুপম ঘোষ সহ একাধিক ফুটবলার। মেয়ো রোড আর পার্ক স্ট্রিটের মুখটার কাছে ঝাঁ চকচকে ক‍্যালকাটা পুলিশ ক্লাব তাঁবু। এই ক্লাবের ক্রিকেট দল সিএবি লিগের ফার্স্ট ডিভিশনে খেলে। ক্লাব তাঁবুটাও নতুন করে ঝাঁ চকচকে। পুলিশ আধিকারিক শান্তনুবাবু বলছিলেন,”এই ক্লাবের বদলে যাওয়ার পিছনে সকল সদস‍্যদের সক্রিয় ভূমিকা আছে। একজন, দুই জনে কখনও কোনও বড় সাফল‍্য পাওয়া যায় না।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here