ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,৬ মার্চ : অতীতের ব্যর্থতা ভুলে সাফল্যের খোঁজে বাংলার অ্যামেচার কবাডি সংস্থা। আগামী ১০ মার্চ থেকে হরিয়ানায় শুরু হবে মহিলাদের ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ। আর সেই ন্যাশনালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে বাংলার কবাডি দল। গত ১৪ দিন ধরে ময়দানের অ্যামেচার কবাডি তাঁবুতেই আবাশিক শিবির শুরু হয়েছে। এই তাঁবুতেই দুবেলা অনুশীলন আর সল্টলেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামের যুব আবাসে থাকার ব্যবস্থাও করেছেন সংস্থার সভাপতি স্বপন (বাবুন) ব্যানার্জি ও সচিব পার্থ সারথী গাঙ্গুলি। রবিবার দুপুরে চূড়ান্ত ১২ জনের দলকে কিট ব্যাগ তুলে দিলেন অ্যামেচার কবাডি সংস্থার কর্তারা।
এই দলের কোচ হলেন ভারতের প্রাক্তন কবাডি খেলোয়াড় “অর্জুন” রমা সরকার (দাস)। জাতীয় স্তরে বাংলার কবাডির অবস্থা করুন। গত প্রায় ৩০ বছর সিনিয়র (মহিলা) জাতীয় স্তরে বাংলার কোনও সাফল্য নেই। কোচ রমা সরকার (দাস) “ইনসাইড স্পোর্টস”কে বলছিলেন,”১৯৮৪ সালের পর থেকে রেলের দল গুলি যখন ন্যাশনালে অংশ নিতে শুরু করল তার পর থেকে আমাদের রাজ্য কবাডি সেই ভাবে সাফল্য পেল না। ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে। তার মধ্যে বাংলায় একাধিক সংস্থা গড়ে ওঠায় সমস্যাটা বেড়ে গেল। বাংলার ভাল ছেলে মেয়েরা রেলে চাকরি নিয়ে চলে গেল। তারা রেলের হয়েই খেলতে শুরু করল। ফলে বাংলার কবাডিতে আর সেই ভাবে সাফল্যর মুখ দেখা গেল না। তবু আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এবার আমাদের সভাপতি ও সচিব সিনিয়র দল গড়ার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেছেন। খুব ভাল অনুশীলন হয়েছে। আশাকরি ফল ভালই হবে।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই রমা দাস ১৯৮৬ সালে কবাডি থেকে “অর্জুন” পুরস্কার পেয়েছিলেন।
সিনিয়র বাংলা দলের অধিনায়ক মনীষা মেটে বাগনানের মেয়ে। ২০২০ সালে রাজ্য সরকারের “খেল রত্ন” পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১২ সালে কবাডি শুরু করেছিলেন। পাঁচ বছর আগে জুনিয়র ভারতীয় দলে এশিয়ান গেমসে ইরানেও খেলে এসেছেন। ২০১৭ সালে ট্যালেন্ট স্পোর্টস কোটায় সাউথ ইস্টার্ন রেলে চাকরিও পেয়ে গিয়েছেন। খেলা,চাকরির সঙ্গে ওপেন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনাও করছেন মনীষা। ন্যাশনালে খেলতে যাওয়ার আগে কবাডি তাঁবুতে দাঁড়িয়ে মনীষা বলছিলেন,”আমরা প্রস্তুতি নিয়েই যাচ্ছি। আশাকরি ভাল ফল করেই আসবো। এবারও ন্যাশনালে কঠিন দল হল মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশ। আমরা কিন্তু তৈরি হয়েই যাচ্ছি।”
রাজ্যের অ্যামেচার কবাডি সংস্থার নতুন সভাপতি স্বপন (বাবুন) ব্যানার্জি বলেন,” ন্যাশনালের জন্য আমরা খুব গুরুত্ব দিয়েই দল গড়েছি। প্রথমে ৩৬ জন খেলোয়াড় বেছে নেওয়া হয়েছিল। পরে ১৬ জন। তারওপরে চূড়ান্ত ১২ জনের দল বাছা হয়েছে। কোচ রমাদি ও খেলোয়াড়দের উপর আমাদের আস্থা আছে। আশাকরি সফল হবে।”
রাজ্যের কবাডিতে তিনটি গ্রুপ। এক ছাতার তলায় আনা যায় না? প্রশ্নের উত্তরে স্বপন (বাবুন) ব্যানার্জি বলেন,”আমার লক্ষ্য বাংলার কবাডিকে এক ছাতার তলায় আনা। আমি কথা বলব। যদি তারা না মানেন তাহলে বাংলার পক্ষ্যে লজ্জা। সবাই বসে আলোচনার করলে সমস্যা মিটে যাওয়ার কথা।”
স্বপন বাবুর মতো এই সংস্থার নতুন সচিব পদে এসেছেন পার্থ সারথী গাঙ্গুলি। তিনি আবার আইএফএ-সহ সভাপতি। খেলাকে ভালবাসেন। যদিও তিনি ফুটবলে আসার অনেক আগে থেকেই কবাডির সঙ্গে যুক্ত। সেই পার্থ সারথী গাঙ্গুলি “ইনসাইড স্পোর্টস”কে বলছিলেন,” কবাডির সঙ্গে আমি দীর্ঘদিন থেকেই যুক্ত। স্বপন বাবু সভাপতি হওয়ার পর
এখন কবাডিতে উদ্দীপনা অনেক বেড়ে গিয়েছৃ। ইতিমধ্যে রাজ্য লিগ করা হয়েছে। ন্যাশনাল শেষ হওয়ার পর আমরা সাব জুনিয়র,জুনিয়র ও সিনিয়র স্তরে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট শুরু করব। পরিকাঠামো ভাল করার চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে। আশা করছি রাজ্য অ্যামেচার কবাডি সাফল্য নিয়ে আসবে। একটু সময় দিন। অপেক্ষা করুন, ভাল কিছু দেখতে পাবেন।”
এদিন, মহিলা খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে কবাডি তাঁবুতে এসেছিলেন “দ্রোনাচার্য” পুরস্কারপ্রাপ্ত বলবন্ত সিং।