নেই বাঙালি তারকা, খেলার মান নিম্নগামী,কলকাতা লিগ থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন দর্শকরা?

0

◆সন্দীপ দে◆

ভারতীয় ফুটবলে অন‍্যতম সেরা এবং বড় লিগ – কলকাতা লিগ। এই লিগকে ঘিরে বাঙালির অহংকার ছিল। আজ তা বিপন্ন। হ‍্যাঁ, কলকাতা লিগ বিপন্ন। আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত আন্তরিক ভাবে এই লিগের প্রাণ ফেরাতে প্রাণপাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি আদৌ সফল হবে কিনা বলা কঠিন। করোনা বিপর্যয় কাটিয়ে তিন বছর পর গত বছর (2023) পূর্ণাঙ্গ লিগ সম্পন্ন হয়েছিল সফল ভাবেই। লিগের শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত মাঠে দর্শকও হয়েছিল চোখে পড়ার মতোই। ভাবা গিয়েছিল, ফের বাংলার ফুটবল জাগছে। কিন্তু এই চলতি মরসুমে লিগের শুরুর ছবি খুবই খারাপ। লিগের ম‍্যাচ দেখতে মাঠে সেই ভাবে দর্শক আসছেন না। এর জন‍্য শুধু আইএফএ একা দায়ি এমনটা বলা যাবে না। একাধিক কারণ আছে। যেমন —

1) বিদেশি ফটবলার নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া। প্রিমিয়ার ডিভিশনের কোনও দলে এমন কোনও বাঙালি বা ভিন রাজ‍্যের কোনও তারকা ফুটবলার নেই, যার খেলা দেখার জন‍্য মাঠে দর্শক আসবেন। একটা নবি, মেহেতাব, অসীম নেই।

2) ISL হওয়ায় কলকাতার তিন প্রধান কলকাতা লিগে এখন নিজেদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর দল নামাচ্ছে। এই সাদামাঠা দলের খেলা দেখতে সেই ভাবে দর্শকরা মাঠ মুখো হচ্ছেন না।

3) খেলার মান ক্রমশ নিম্নগামী।

4) তারকাহীন লিগে শুধু সবুজ-মেরুন, লাল-হলুদ, সাদা-কালো জার্সি পরে মাঠে নামলেই গ‍্যালারি উপচে যে পড়বে না তা বোঝার জন‍্য ফুটবল বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

5) তিন প্রধান লিগের ম‍্যাচ নিজেদের মাঠে খেলতে অনিহা। ইদানিং দেখা যাচ্ছে লিগ শুরুর মুখে নিজেদের মাঠ সংস্করণের কাজ শুরু করে। ফলত, লিগের শুরুতে ময়দানে তিন ঘেরা মাঠ পাওয়াই যায় না। আর যদিও পরে খেলে, পরে যদি ড্র বা হেরে যায় তখন নানান অজুহাত দিয়ে বাইরের মাঠে খেলার জন‍্য আইএফএ-এর কাছে গোঁ ধরেন তিন প্রধানের কর্তারা।

6) রাজ‍্য সরকার তিন প্রধানের মাঠে ফ্লাড লাইটের জন‍্য সাহায‍্য করেছে। প্রতি বছর তাঁবু সংস্করণের জন‍্য তিন প্রধানকে মোটা টাকার অনুদান দিয়েছে। কিন্তু ফ্লাড লাইটে খেলা করার ভাবনা তাঁদের মাথাতেই নেই। লোক দেখানো করে তিন ঘেরা মাঠে ফ্লাড লাইট স্তম্ভ নীরবে দাঁড়িয়ে আছে। কোনও কাজেই লাগানো হয় না।

7) কলকাতা লিগ এখন ময়দান ছাড়িয়ে জেলায় পৌঁছে গিয়েছে। এটা কলকাতা লিগ না জেলা লিগ সেটাই বোঝা যায় না। এই প্রসঙ্গে CRA সভাপতি ভোলা দত্তর মজার টিপ্পনিও আছে। ভোলাবাবু বলেন,”জেলা লিগ নয়, কলকাতা লিগ এখন বেঙ্গল লিগে পরিণত।”

8)গড়ের মাঠে প্রিমিয়ার ডিভিশনের ম‍্যাচ না ফেরাতে পারলে লিগের উন্মদনা ফিরে তো আসবেই না। বরং লিগের জনপ্রিয়তা, উন্মাদনা শূন‍্য থেকে মহাশূন‍্যে পৌঁছে যাবে।

8) রেফারির মান খুব খারাপ। রেফারিদের জন‍্য বহু ভাল ম‍্যাচ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই বার্তাও দর্শকের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। অতীতে যারা বাঁশি মুখে মাঠে নামতেন তাঁরা অন্তত পাড়ার টুর্নামেন্টে খেলানোর অভিজ্ঞতা থাকতো। ম‍্যাচ খেলানোর ধারণা থাকত। আর এখন যারা রেফারি হিসেবে আসছেন তাঁরা প্রথমে লিখিত পরীক্ষায় বসছেন। পাস করলে মেডিক্যাল টেস্ট। তারপরেই সরাসরি লিগের ম‍্যাচ পরিচালনা করার দায়িত্ব পেয়ে যাচ্ছেন। কাজেই ম‍্যাচের পর ম‍্যাচ ভুল করেই যাচ্ছেন।

9) লিগে কোনও চরিত্র নেই। যাদের জন‍্য দশর্ক মাঠে আসবে। একটা সময়, অমল দত্ত- পিকে ব‍্যানার্জি, সুব্রত ভট্টাচার্য -সুভাষ ভৌমিকের ম‍্যাচ কৌশল থেকে কথার লড়াই সংবাদ মাধ‍্যমে নিয়মিত ছাপা হত। যা দর্শকদের মাঠে টানতো। এখন সেই রকম বাঙালি কোচও নেই। যারা কথার লড়াইয়ে বিতর্ক করে লিগের মেজাজটাই গরম করে দেবে। এখন বিরাট শূন‍্যতা।

এই চলতি মরসুমে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পযর্ন্ত যত ম‍্যাচ (প্রিমিয়ার) হয়েছে তাতে দর্শক সংখ‍্যা ভাল নয়। বারাকপুর মাঠে একফালি গ‍্যালারি। তাও পূর্ণ হয় না। নৈহাটি স্টেডিয়াম বা কল‍্যাণী – সব এক ছবি। মহমেডান স্পোর্টিংয়ের দর্শকরা নিজের দলের খেলা দেখতে বেশি আগ্রহী। এবার সেই আগ্রহ এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে। এই বিষয়ে মহমেডান স্পোর্টিংয়ের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট মহম্মদ কামরুদ্দিন বলেন,”ম‍্যাচ জিতলে আবার লোক মাঠে আসবে।”
আপনারাও তো মোহনবাগান,ইস্টবেঙ্গলের মতোই কলকাতা লিগে দ্বিতীয় শ্রেনীর দল নামিয়েছেন। ISLকে মাথায় রেখে নিজের দলের পরীক্ষা করছেন। তাই নয় কি? জবাবে কামরুদ্দিনের সরল স্বীকারোক্তি,”কিছু করার নেই। এভাবেই আমাদের চলতে হবে। মূল লক্ষ‍্য ISL টুর্নামেন্ট।”

ভদ্রস্থ টাকা নিয়ে IFA এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রাচী গ্রুপ। আবার টিভি চ‍্যানেলে তিন প্রধানের খেলা দেখানো হচ্ছে। ইউটিউবেও খেলা দেখানো হচ্ছে। তাহলে কলকাতা লিগের ভবিষ‍্যত? বতর্মান কলকাতা লিগ রংবেরঙের কাচের চুড়ির মতো। একটু আঘাতে ভেঙে পড়ার উপক্রম। শূন‍্য থেকে মহাশূন‍্যে পৌঁছবে। এর পরও যাঁরা অতীতের লিগের উন্মাদনা ফেরানো স্বপ্ন দেখছেন, তাহলে বলতে হয় গোস্পদে চোখ রেখে তাঁরা আকাশ দেখতে চাইছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here