নীরবেই চলে গেলেন মহারাষ্ট্রের অন‍্যতম ফুটবল প্রশাসক পারভেজ জিয়াউদ্দিন

0

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : সবার অজান্তেই চলে গেলেন মুম্বই তথা ভারতীয় ফুটবলের অন‍্যতম ফুটবল প্রশাসক পারভেজ জিয়াউদ্দিন। গতকাল, সোমবার বিকেল ৫.৩৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত‍্যু হয় পারভেজ জিয়াউদ্দিনের। তাঁর মৃত‍্যুর সঙ্গে সঙ্গে মহারাষ্ট্র ফুটবলের একটি যুগের পরিসমাপ্তি ঘটল।

সদ‍্য প্রয়াত পারভেজ হলেন ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি ফুটবল প্রশাসক খলিফা জিয়াউদ্দিনের পুত্র। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পযর্ন্ত অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন খলিফা জিয়াউদ্দিন। AIFF এ ইতিহাসে সভাপতি হিসেবে কাজ করেছেন ব্রিগেডিয়ার ভিএইচবি মেজেনডাইন, পঙ্কজ গুপ্ত,মঈন-উল-হক, নুরুল আমিন,প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি,প্রফুল প‍্যাটেলরা। তবে এঁদের মধ‍‍্যে খলিফা জিয়াউদ্দিন ছিলেন অন‍্যতম। ভারতীয় ফুটবলকে আন্তর্জাতিক স্তরে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাদ্ধ ছিলেন জিয়াউদ্দিন। যোগ‍্য ফুটবলারদের দেশের হয়ে খেলার সুযোগ করে দিতেন তিনি। কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব খিদিরপুর স্পোর্টিং ক্লাবের প্রাণপুরুষ ভুতনাথ বিশ্বাসকে পুত্র স্নেহর চোখে দেখতেন খলিফা জিয়াউদ্দিন। ভুতনাথবাবু অচ‍্যুত ব‍্যানার্জির মাধ‍্যমে বিভিন্ন জেলা থেকে ফুটবল প্রতিভা তুলে আনতেন। সেই সব ফুটবল প্রতিভা খিদিরপুর ক্লাব থেকে খেলেই ভারতীয় দলে সুনামের সঙ্গে খেলে গিয়েছেন।

বাবা খলিফা জিয়াউদ্দিন যেমন ফুটবল প্রতিভা তুলে আনার ক্ষেত্রে জোর দিতেন, ছেলে পারভেজ জিয়াউদ্দিনও সেই রাস্তায় হেঁটেছেন। ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া ফুটবল অ‍্যাসোসিয়েশনের (WIFA) সার্বিক উন্নয়নের জন‍্য কাজ করে গিয়েছেন পারভেজ। পাশাপাশি মুম্বাইয়ের রেফারি সংস্থাকে বাঁচিয়ে রেখে মাথা উঁচু করে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। WIFA এ যতদিন তিনি দায়িত্বে ছিলেন ততদিন রোভার্স কাপ,হাওয়ার্ড লিগ,নাদকার্নি কাপ চালু রেখেছিলেন। কুপারেজ স্টেডিয়ামের রোভার্স ভারতীয় ফুটবলে এক অন‍্যতম সফল টুর্নামেন্ট ছিল। পারভেজ তার সময়কালের শেষদিন পযর্ন্ত তা চালিয়ে গিয়েছেন।

‘দ‍্য স্টেটসম‍্যান’ পত্রিকার প্রবীণ ক্রীড়া সাংবাদিক পুলকেশ মুখোপাধ‍্যায় খলিফা জিয়াউদ্দিন ও পুত্র পারভেজ জিয়াউদ্দিন – এই দুই ফুটবল প্রশাসককে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। পুলকেশবাবু ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলছিলেন,”খলিফা জিয়াউদ্দিন কিংবদন্তি ফুটবল প্রশাসক ছিলেন। বনেদি মুসলিম পরিবারের সন্তান। মুম্বইয়ের আঞ্জুমান স্কুলে চাকরি করতেন। কিন্তু AIFF সভাপতির চেয়ারে বসে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পেতেন না। ভারতীয় ফুটবলকে একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ছেলে পারভেজ ফুটবল প্রশাসক হিসেবে বাবা খলিফার যোগ‍্য উত্তরসূরী বলা যেতে পারে। পারভেজ WIFA এর দায়িত্বে আসার পর সংস্থায় সময় দিতেন বেশি। নিজে হাতে সব কাজ করতেন। বাবা খলিফার মতো ছেলে পারভেজও ফুটবল প্রতিভা তুলে আনতেন। গডফ্রে পেরিরা, সাকিল আনসারি, আব্দুল কাদির সহ বহু ফুটবলার তিনি তুলে এনেছেন। তালিকাটা দীর্ঘ। মহারাষ্ট্রের ফুটবলের পারভেজ ছিলেন পারফেক্ট মানুষ। তিনি যে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন সেই তুলনায় AIFF ভাল কাজ করার গুরুদায়িত্ব পাননি। অথবা তাঁকে সেই গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বাবার মতোই তিনিও ছিলেন ভদ্র মানুষ। কোনও দিন কারও কাছে অভিযোগ,ক্ষোভ প্রকাশ করেননি। নীরবে কাজ করে গিয়েছেন। পেলেন না কিছুই।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময়ে AIFF -এর বিভিন্ন কমিটিতে ছিলেন পারভেজ জিয়াউদ্দিন। শোনা যায়, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি যখন AIFF এর সভাপতি হলেন তখন খলিফা জিয়াউদ্দিন বাধা হতে পারতেন। কিন্তু জিয়াউদ্দিন সেটা করেননি। প্রিয়র সভাপতি হওয়ার ক্ষেত্রে খলিফা জিয়াউদ্দিনের একটা নীরব সমর্থন ছিল। কিন্তু প্রিয়বাবু নিজের সভাপতি সময়কালে খলিফার পুত্র পারভেজ জিয়াউদ্দিনকে সভাপতির পদ তো ছাড়েননি,অন‍্য গুরুত্বপূর্ণ পদও দেননি। এমন অভিযোগও শোনা যায়।

সমাজ বদলে যাচ্ছে। বদলে গিয়েছে ভারতীয় ফুটবলের অনেক কিছুই। ভারতীয় ফুটবল মানেই এখন আইএসএল। ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়েছে রোভার্স,হাওয়ার্ড,ফেডারেশন কাপের মত দেশের একাধিক টুর্নামেন্ট। আজ কেউ আর খোঁজ করে না। রোভার্সের মতো পারভেজ জিয়াউদ্দিনও নীরবে চলে গেলেন। এতদিন তাঁকে কেউ মনে রাখেনি,ভবিষ‍্যতেও হয়তো মনে রাখবে না। সবাই মেতে থাকবেন আম্বানিদের ‘পাশ-ফেল হীন’ হাস‍্যকর আইএসএলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here