সাগ্নিক দত্ত,২৮ ডিসেম্বর : মেলবোর্নের মাঠে শতরান করলেন নীতিশ কুমার রেড্ডি, গ্যালারিতে আবেগে-উচ্ছাসে ভাসলেন তাঁর পিতা মুতিয়ালা রেড্ডি। আজ নীতিশ যে উচ্চতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন তার নেপথ্যেরে সেনানী হলেন মুতিয়ালা রেড্ডি। অনেক আত্মত্যাগ পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে তিল তিল করে ছেলেকে ক্রিকেটার তৈরি করেছেন। টিভির পর্দায় নয় ছেলের অনন্য কীর্তির সাক্ষী থাকলেন বাবা গ্যালারিতে বসেই।ছেলেকে ক্রিকেটার তৈরি করতেই হবে। নিজের চাকরিই ছেড়ে দিয়েছিলেন মুতিয়ালা রেড্ডি। বিশাখাপত্তনমে হিন্দুস্তান জিঙ্কের কর্মী ছিলেন নীতিশের পিতা। কিন্তু ২০১২ সালের মার্চ মাসে হঠাৎ করেই কোম্পানিটি ওই শাখা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কারখানার অনেক কর্মী চাকরি চলে যায়। মুতিয়ালাকে বদলি করা হয় রাজস্থানের উদয়পুরে। ছেলের থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়। এক লহমায় চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় নীতিশের বাবা।
ক্রিকেটে রাজনীতি ভালোভাবেই জানতেন কেমন হয়। ক্রিকেট রাজনীতির নাগপাশ থেকে ছেলেকে বাঁচাতে সারাক্ষণ সঙ্গে থেকেছেন। দিনের পর দিন স্বপ্ন দেখে গিয়েছেন। অবশেষে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে বাবার স্বপ্নকে আগেই সত্যি করেছে নীতিশ। আর ঐতিহাসিক মেলবোর্নে শতরান করে পিতার আজীবনের কষ্ট-পরিশ্রমকে সার্থক করলেন বছর ২১-র নীতীশ। শনিবার সকালে যখন থেকে নীতিশ ব্যাট করতে শুরু করেছেন তখন থেকেই গ্যালারি থেকে গলা ফাটানো শুরু করেছেন। প্রথমে অর্ধশতরান করেন নীতিশ। এর পর প্রবল চাপের মধ্যে শতরান করলেন। নাটকীয়ভাবে সেঞ্চুরি করার পর মন্দ আলোর জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যায়। সাজঘরের দিকে ফিরে আসছিলেন নীতিশ। গ্যালারি থেকে জোরে জোরে ছেলেকে ডেকে যাচ্ছিলেন। সেই শব্দ হয়ত নীতিশের কানে পৌঁছালো না, কিন্তু নীতীশও যেন গ্যালারিতে খুঁজছিলেন তাঁর পিতাকে।
ছেলে শতরান করতেই বাবার উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের অবসান, অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন। আবেগ যেন বাঁধ মানছিল না। ছেলে শতরান করেছেন তাও টেস্টে বাবার আনন্দ যে আজ সবথেকে বেশি। ছেলের শতরানের পর সাংবাদিকের মুতিয়ালা বলেন, আজ আমাদের বিশেষ দিন। প্রথম আন্তর্জাতিক শতরান করল নীতিশ। আমরা আজ খুব খুশি। ছেলের শতরানের পর চোখের কোণে জল নিয়ে নীতিশের মা বলেন, আজ আমরা যেমন খুশি তেমনই আবেগপ্রবণও হয়ে গেছি যে কথা বলার কোনো ভাষা নেই।