নিতুকেই সমর্থন মদন-দিলীপের, কর্তাদের সমালোচনায় গৌতম

0

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,২২ জূলাই : সমর্থকদের উপর লাঠি চার্জের ঘটনায় দেশের ফুটবল মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। পাশাপাশি ইস্টবেঙ্গল কর্তারাও সমালোচিত। ইস্টবেঙ্গল সদস‍্য-সমর্থকদের একটা বড় অংশ মনে করছ, নিজেদের ক্ষমতা হারানোর ভয়েই সদস‍্যদের “মৌলিক অধিকার”-এর তাস খেলছেন ইস্টবেঙ্গলের কিছু কর্তা।
অভিযোগ, ইস্টবেঙ্গলের সদস‍্য-সমর্থকদের ভাগ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ নাকি ক্লাবের ওই কিছু কর্তারাই। বুধবারের ঘটনায় দেশের ফুটবল মহলেও সমালোচিত দেবব্রত সরকাররা। ঠিক সেই সময় ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের পাশে দাঁড়ালেন প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী ও কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। এক ভিডিও বার্তার মাধ‍্যমে মদন মিত্র জানিয়েছেন,”আমি ওসব কিছু জিনতে চাই না। শ্রীসিমেন্ট কী বনশ্রী সিমেন্ট কী সন্ধ‍্যাশ্রী সিমেন্ট কী রূপশ্রী সিমেন্ট, জানি না। কোনও অবস্থায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে বিক্রি করা যাবে না। এই দাবিতে আমি সমর্থকদের সঙ্গে আছি। আর যারা ওখানে লড়াই করছেন তারা জেনে রাখুন, আগুন লাগলে যেমন দমকল পৌঁছে যায় সেই ভাবে আমিও পৌঁছে যাব।” বৃহস্পতিবার ক্লাবে এসে নিজের একদিনের মাইনের টাকা (চেকে) মদন তুলে দিলেন দেবব্রত সরকারের হাতে। প্রসঙ্গত উল্লেখ‍্য, ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকারের সঙ্গে মদন মিত্রর খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কাজেই তিনি যে দেবব্রত সরকারের হয়ে বিবৃতি দেবেন সেটাই স্বাভাবিক।

রাজ‍্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ

তবে আমজনতার কাছে মদন মিত্রর একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। মানুষের বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়ান। সাহায‍্য করার সময় কোনও রাজনৈতিক রং দেখেন না। তাই অনেকেই মদন মিত্রকে “তৃণমূলের সুভাষ চক্রবর্তী” বলে থাকেন। সেই মদন মিত্র ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের অন‍্যায়কে কেন সমর্থন করছেন? সোসাল মিডিয়ায় ইস্টবেঙ্গলের বিভিন্ন ফ‍্যানস ক্লাবের সদস‍্যরা এই প্রশ্ন তুলছেন।

এদিকে, এই ঘোলা জলে মাছ ধরতে আসরে নেমে পড়েছে রাজ‍্য বিজেপি। খোদ বিজেপি রাজ‍্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের সমালোচনা করে ইস্টবেঙ্গলের বর্তমান কর্তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দিলীপ ঘোষও এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন,”ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সমর্থকেরা নিজেদের মধ‍্যে মারামারি করছে। এই ঘটনা দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। মমতা ব‍্যানার্জির উপর ভরসা করে তাদের এই দুর্দশা। একটা কোম্পানির সঙ্গে ক্লাবকে সই করাতে বাধ‍্য করেছিলেন। হয়তো তখন নির্বাচন ছিল বলেই নবান্নে ডেকে নিয়ে এগ্রিমেন্ট করিয়েছিলেন। সেই এগ্রিমেন্ট এখন ডেথ এগ্রিমেন্টে পরিণত হয়েছে। ক্লাব আজ অন্ধকারে। আইএসএলে খেলতে পারবে কিনা জানা নেই। এই এগ্রিমেন্টে সই করলে আর ক্লাব থাকবে না। কোম্পানি হয়ে যাবে। কোনও সদস‍্য ক্লাবে ঢুকতে পারবে না।সচিবরা নাম মাত্রে ক্লাবে ঢুকতে পারবেন।”

প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার

ময়দানের ধারণা,ক্লাবের এই ডামাডোল পরিস্থিতিতে ইস্টবেঙ্গলে ঢুকতে চায়ছে রাজ‍্য বিজেপি। চারদিন আগে ময়দানে এমনও গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল যে, ইনভেস্টর বিতর্ক নিয়ে ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার নাকি দুই কর্তাকে নিয়ে বিজেপির নিশীথ প্রামানিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। ক্লাবের এক কর্মসমিতির এক সিনিয়র সদস‍্যকে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এই ব‍্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,”কি যে বলো। এই তথ‍্যটা ঠিক নয়। আমাদের কেউই নিশীথ প্রামানিকের কাছে যায়নি। কেউ কেউ এই সব মিথ‍্যে তথ‍্য প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।”

বুধবার পুলিশের লাঠির আঘাতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক ইস্টবেঙ্গল সমর্থক

এদিকে, ইস্টবেঙ্গল সদস‍্য সমর্থকের উপর পুলিশের লাঠি চালনার ঘটনার ফলে ভারতীয় ফুটবলে তীব্র নিন্দার ঝড়। বুধবার পুলিশ যে ভাবে নিরীহ ইস্টবেঙ্গল সদস‍্য-সমর্থকদের উপর লাঠি চার্জ করেছে তার জন‍্য গর্জে উঠেছে দেশের বিভিন্ন ক্লাবের একাধিক ফুটবল ফ‍্যানস ক্লাব। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার, শ‍্যাম থাপা, সমরেশ চৌধুরী থেকে দেবজিৎ ঘোষ, মেহেতাব হোসেনরা।

“যা ঘটেছে তা লজ্জাজনক। আমার খেলোয়াড় জীবনে এমন ঘটনা কখনো দেখিনি। ক্লাবের সমর্থকরা দুটো ভাগ হয়ে গিয়েছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা বাড়তে থাকলে সমস‍্যা আরও বাড়বে। সবাইকে নিয়ে আলোচনা করে সমস‍্যার সমাধান করতে হবে।” বলছিলেন মেহেতাব হোসেন। আর এক প্রাক্তন ফুটবলার দেবজিৎ ঘোষ জানান,”এটা কাম‍্য নয়। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। ফুটবলে ফিরতে হবে। ইস্টবেঙ্গল ফুটবল খেলবে না এটা মানা যায় না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস‍্যার সমাধান করতে হবে। তাতে বাংলার ফুটবলের লাভ হবে।”

এদিকে দেবব্রত সরকারের নাম না করে এক হাত নিয়েছেন ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার। তিনি পরিস্কার জানিয়েছেন,”ক্ষমতার জোরে কেন পদ আগলে বসে থাকবে? ইনভেস্টর টাকা দেবে তখন ওদের অধিকার তো ছাড়তেই হবে। এই সাধারণ ব‍্যাপারটা কর্তারা কেন বুঝতে পারছেন না। সবাই মিলে আলোচনা করে আগে ফুটবল ফেরানো হোক।”

গৌতম সরকারের বন্ধু ও প্রাক্তন ফুটবলার সমরেশ চৌধুরী গতকালের ঘটনার ভিডিও ও ছবি দেখেছেন। তিনি জানান,” পুলিশ যেভাবে সমর্থকদের উপর লাঠি চালিয়েছে তার তীব্র নিন্দা করছি। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
ওরা যে প্রতিবাদ করতে যায় তার কারণ ফুটবল ফেরানো। খুব অন‍্যায় করেছে ওরা? এতদিন ধরে ব্যাপারটা ঝুলে আছে বলেই সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। প্রত্যেকেই চায় ইস্টবেঙ্গল ফুটবল খেলুক।”

আর এক প্রাক্তন ফুটবলার শ‍্যাম থাপা বলেছেন,”দুর্ভাগ‍্যজনক ঘটনা। ফুটবল মাঠে সদস‍্য-সমর্থকদের মতামতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ওরা না থাকলে ফুটবলটাই হবে না।”

আহত ইস্টবেঙ্গল সমর্থককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

অন‍্যদিকে, আইএসএলে খেলা বেঙ্গালুরু এফসি,গোয়া এফ সি থেকে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড, চেন্নাই, মুম্বই সিটির সদস‍্য-সমর্থকরা গর্জে উঠেছেন। “পুলিশ যেভাবে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের উপর লাঠি চালিয়েছে তার তীব্র নিন্দা করছি আভরা। এই সমর্থকরা সঠিক ফুটবলের পরিকাঠামো ও ক্লাব প্রশাসনে স্বচ্ছতার দাবি তুলেছেন।” জানিয়েছে বেঙ্গালুরু এফসির বিরাট ফ‍্যানস ক্লাব ওয়েস্ট ব্লক ব্লুজ।

সোসাল মিডিয়ার মাধ‍্যমে গতকাল ইস্টবেঙ্গল সদস‍্য-সমর্থকদের দুই গোষ্ঠীর গন্ডগোল এবং পুলিশের লাঠি চার্জের ঘটনা গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সমালোচিত ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কর্তারাও। গতকাল যা ঘটেছে তা নজির বিহীন।

নর্থইস্ট ইউনাইটেডের ফ্যান ক্লাব হাইল্যান্ডার ব্রিগেড টুইট করেছে : “পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক ব্যবহারের তীব্র নিন্দা করছি। আমরা ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের পাশে আছি’
মুম্বই সিটি এফসি-র সমর্থকদের পক্ষ থেকে (ওয়েস্ট কোস্ট ব্রিগেড) বলেছে,” ফুটবল সমর্থকদের ওপর লাঠিচার্জের ঘটনা মানা যায় না। ক্লাবকে বাঁচাতে তারা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলেন। তারপরেও কেন আঘাত করা হবে?”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here