ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : নার্সারি লিগ নিয়ে চুড়ান্ত অব্যবস্থা। দীর্ঘ ২০ বছর পর মার্কাস স্কোয়ারের মাঠে আইএফএ-এ অনুমোদিত কোনও ম্যাচ হল। আর সেই ম্যাচ ঘিরে চূড়ান্ত অব্যবস্থা। এদিন এই মার্কাস স্কোয়ার মাঠে নার্সারি লিগের ‘বি ‘ গ্রপের (অনূর্ধ্ব-১২) খেলায় মুখোমুখি হয়েছিল সেন্ট্রাল ক্যালকাটা ভেটারেন্স স্পোর্টস ক্লাব ও মধ্যমগ্রামের মাইকেল নগর নেতাজি সংঘ। ম্যাচের শুরুতেই চুড়ান্ত অব্যবস্থা। ফুটবলারদের জন্য জল নেই, সাজঘরে ফ্যানও ছিল না। প্রচন্ড গরমে অনূর্ধ্ব-১২ ফুটবলারদের অবস্থা নাজেহাল।
লিগের ম্যাচে যেখানে দুটি দলকে কুড়ি লিটার করে ৪০ লিটার পানীয় জল দেওয়ার কথা সেখানে দুটি দলকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৪ লিটার জল। এটা লেখার ভুল নয়, আপনার পড়ার ভুলও নয়, মাত্র দুই লিটার করে চার লিটার জল দেওয়া হয়েছে। প্রচন্ড গরমে ৪০ জন ফুটবলারের জন্য মাত্র ৪ লিটার জল! ভাবাই যায় না। শুধু তাই নয়, ফুটবলারদের সাজঘরে সেই ভাবে ফ্যানের ব্যবস্থাও ছিল না। বাধ্য হয়ে মধ্যমগ্রামের নেতাজি সংঘের কর্তারারা নিজের টাকা খরচ করে জল কিনে বাচ্চাদের দেন। এদিন শহরে তাপমাত্রা ছিল চড়মে। সঙ্গে মারাত্মক আদ্রতা। এই অবস্থায় খুদে ফুটবলারদের কিছু হয়ে গেলে তার দায় কে নিত? মাইকেল নগর নেতাজি সংঘের সচিব বিশ্বজিৎ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,”আমরা সরকারি ভাবে আইএফএকে অভিযোগ করছি না। তবে শুরুতে জলের ব্যবস্থা ছিল না।” আপনারা অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন? জবাবে বিশ্বজিৎ বলেন,”ভয় পাচ্ছি না। মানিয়ে নিলাম।” পরবর্তী সময়ে এই মার্কাস স্কোয়ারে ম্যাচ দিলে খেলবেন? উত্তরে বিশ্বজিৎ তখন বলে ওঠেন,”কোচের সঙ্গে কথা বলে বলতে পারবো এই মাঠে খেলবো কিনা।”
জানা যায়,ম্যাচ শুরুর অনেক্ষন পর আইএফএ ট্রেজারার মাঠে গিয়ে পরিস্থিতি অনুকুলে আনার চেষ্টা করেন। এই বিষয়ে জানতে তাকে রাতে ফোন করলে ট্রেজারারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই মার্কাস স্কোয়ারে অতীতে ম্যাচ হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২০ বছর পর নার্সারি লিগের ম্যাচ দেওয়া হয়। আইএফএ এর একটা সূত্র থেকে জানা যায়, সেন্ট্রাল ক্যালকাটা ভেটারেন্স স্পোর্টস ক্লাবের সচিব বিশ্বপতি মিত্র মার্কাস স্কোয়ারে ম্যাচ করার জন্য আইএফএ-এর কাছে আবেদন করেন। আইএফএ তা মঞ্জুরও করে। কিন্তু ম্যাচ পরিচালনায় ডাহা ব্যর্ধ এই বিশ্বপতি। প্রথমত মাঠের অবস্থা খুবই খারাপ। আর যাইহোক, এই মাঠে লিগের ম্যাচ সম্ভব নয়। তারপরেও ফুটবলারদের জন্য পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থাও করতে পারেননি বিশ্বপতি। বিশ্বপতিদের এই ম্যাচ ছিল হোম ম্যাচ। কাজেই ম্যাচের যাবতীয় দায়িত্ব ছিল বিশ্বপতিদের। কে এই বিশ্বপতি? যার কথায় আইএফএ কর্তারা মার্কাস স্কোয়ারের মাঠে খেলা দিল? ম্যাচের আগে আইএফএ-এর কোনও প্রতিনিধি কেন মাঠ পরিদর্শনে গেলেন না? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক নেতাজির এক কর্তা বলছিলেন,”এই ভাবে লিগ না করলেই ভাল হত। ছোট ছোট ছেলেরা নূন্যতম সুবিধাটুকু পাবে না?”
নার্সারি লিগের এই চরম অব্যবস্থার দায় আইএফএ-এর উপরেও বর্তায়। এই ব্যাপারে আইএফএ সচিব অনির্বান দত্তর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলেন,” এদিনের মার্কাস স্কোয়ারের ম্যাচের অব্যবস্থা নিয়ে আমাকে জানানো হয়নি। যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে খুবই দূর্ভাগ্যজনক।
বিশ্বপতি আমাদের কাছে ম্যাচ আয়োজন করার জন্য আবেদন করেছিলেন। তাঁর কথাতেই ম্যাচ করার অনুমতি দিই। যেহেতু মাঠের অভাব তাই না করিনি। কিন্তু এমনটা হভে ভাবতে পারিনি। আমরা পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখছি।”
এদিন ম্যাচ শেষ হওয়ার পর মাইকেল নগরের কর্তারা আইএফএ-এর আছে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করে। শোনা যাচ্ছে কিছুটা ভয়েই নাকি আর অভিযোগের রাস্তায় হাঁটেননি নেতাজির কর্তারা। আইএফএ তো অভিভাবক। আর অ্যাফিলিটেড ইউনিট তো সন্তানদের মতো। তাহলে অভিভাবক আইএফএ -এর কাছে অভাভ,অভিযোগ জানাতে ভয় কাজ করছে কেন? তাহলে কি ধরে নিতে হবে ছোট ক্লাবের সঙ্গে আইএফএ-এর সমন্বয়ের অভাব? আইএফএ শুধু বড় দলের ফুটবলারদের নিয়েই কেন ভাববে? ছোটদের কেন অবহেলা করবে? জবাবে আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত বলেন,”অভাব, অভিযোগ জানাতে কেন ভয় পাচ্ছে বুঝলাম না। আমি সবার সঙ্গে দেখা করি। পাশে থাকার চেষ্টা করি। আবার বলছি,কোনও ক্লাবের যে কোনও সমস্যা থাকলে সরাসরি আমাকে বলুন। দেখুন কাজ হয় কিনা। আর ছোটদের কখনই অবহেলা করা হয় না। ওরাই বাংলার ফুটবলের ভবিষ্যত। আমরা সব সময় নজরে রাখার চেষ্টা করি। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” প্রসঙ্গত, এদিনের ম্যাচে মাইকেল নেতাজি ৩-০ গোলে হারায় সেন্ট্রাল ক্যালকাটা ভেটারেন্স স্পোর্টস ক্লাবকে।