◆বাংলা – ৫ (রবি, নরহরি-৩,অমিত)
◆কেরল – ০
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : ভারতীয় ফুটবল সমাজে বাংলাকে ফের সবার উপরে তুলে ধরলেন অখ্যাত এক ঝাঁক বাঙালি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নানান দিক দিয়ে বাংলার ফুটবল যখন বিপন্নর পথে। ঠিক তখনই ডুব সাঁতারুর মতো জল ফুঁড়ে মাথা উঁচু করে বাংলার ফুটবলকে তুলে ধরলেন রবি,নরহরি,তারক,অমিতদের মতো এক ঝাঁক বাঙালি। মঙ্গলবার আমেদাবাদে ন্যাশনাল গেমসের ফাইনালে কেরলকে উড়িয়ে দিয়ে ৫-০ গোলে হারিয়ে সোনা জিতল বাংলা। সঙ্গে প্রাপ্তি অধিনায়ক নরহরি শ্রেষ্ঠার দুরন্ত হ্যাটট্রিক এবং সন্তোষ ট্রফির হারের বদলা।
ন্যাশনাল গেমসের ইতিহাসে এই নিয়ে বাংলা তিনবার সোনা জিতল। ১৯৯৩-‘৯৪ সালে কৃশানু দে,বিকাশ পাঁজি,তনুময়দের নিয়ে বাংলাকে প্রথম সোনা এনে দিয়েছিলেন কোচ তপনজ্যোতি মিত্র। সেই দলে কৃশানু অধিনায়ক ছিলেন। তখন আইএফএ সচিব ছিলেন প্রদ্যোৎ দত্ত। দ্বিতীয়বার সোনা এসেছিল কোচ শঙ্কর মৈত্রর হাত ধরে। তারপর শুধুই শূন্যতা। বহুবছর পর এবার কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের হাত ধরে বাংলাকে সোনা এনে দিলেন নরহরি,অমিত,তারকরা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রয়াত প্রদ্যোৎ দত্তর জমানায় ন্যাশনাল গেমসে বাংলা প্রথম সোনা জিতেছিলেন। আর তাঁর পুত্র অনির্বান দত্ত সবে মাত্র সাড়ে তিন মাস আইএফএ সচিব হয়েছেন। তাঁর জমানার শুরুতেই ন্যাশনাল গেমসে বাংলার ফুটবল সোনা জিতল।
এদিন ফাইনাল ম্যাচ খেলতে নামার আগে বাংলা শিবির যথেষ্ট সতর্ক ছিল। কারণ গত সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে এই কেরলের কাছেই বাংলাকে হারতে হয়েছিল। তাই সতর্ক হয়েই ম্যাচ শুরু করেছিল বাংলা। তবে এদিন অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেনি বাংলা। নিজেরা গোল খাবে না এই প্রতিজ্ঞা করে আক্রমণে ঝাঁপিয়েছে বার বার। তার ফল পেয়ে যায় ম্যাচের ১৭ মিনিটে। রবি হাঁসদা গোল করে বাংলাকে এগিয়ে দেন।
সেমিফাইনালে সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর বাংলা নিজেদের গুটিয়ে রেখেছিল। এদিন ফাইনালে উল্টো ছবি। আক্রমণ আর আক্রমণে কেরল তখন দিশাহারা। এবার যেন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন বাংলার অধিনায়ক নরহরি শ্রেষ্ঠা। ৩০ থেকে ৫৩ মিনিট অর্থাৎ ২৩ মিনিটের মধ্যে তিন তিনটি গোল করে হ্যাটট্রিক করে ম্যাচ পকেটে নিয়ে নিয়েছিলেন দমদমের ছেলে নরহরি। এবার কলকাতা লিগে কাস্টমসের হয়ে দুরন্ত পারফরম্যান্স করেছেন নরহরি। দলের পঞ্চম গোলটি করেন অমিত চক্রবর্তী,৮৫ মিনিটে।
এদিন ভোরের ফ্লাইটে আমেদাবাদ পৌঁছে গিয়েছিলেন আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত, ফিনান্স কমিটির চেয়ারম্যান দিলীপ নারায়ান সাহা এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কমিটির অন্যতম সদস্য চিত্তরঞ্জন দাস।
শুরু থেকেই ছিলেন বিওএ-এর সভাপতি ও সচিব স্বপন ব্যানার্জি এবং জহর দাস। ম্যাচ শেষ হতেই তাঁরাও মাঠে নেমে ফুটবলারদের সঙ্গে উৎসবে মাতেন। বহুদিন পর বাংলার ফুটবল সাফল্য পাওয়ায় আবেগে ভাসছিলেন সবাই।
ম্যাচ শেষে ম্যাচের নায়ক নরহরি বলছিলেন,”আমার আজ এই দিনটা বিশেষ দিন হয়ে থাকবে। খুব খুশি। আমার এই কৃতিত্ত্বর জন্য আমাদের দলের সকল সতীর্থকে এবং কোচকে ধন্যবাদ জানাই। হোটেলে ফিরে মাকে আগে ফোন করে সুখবরটা নিজে দিতে চাই।”
কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। একদা কোচ মিলোভানের প্রিয় ছাত্র ছিলেন। চোটের কারণে অকালেই বিশ্বজিতের ফুটবল কেরিয়ার শেষ হয়ে যায়। পরে কোচিং জীবনে এসে তিন প্রধানে কোচিং করিয়ে সাফল্যও পেয়েছেন ময়দানের অতি ভদ্র ও সৎ মানুষ বিশ্বজিৎ। কিন্তু কোচিং জীবনেও তিনি ব্রাত্য থেকেছেন বার বার। এবছর ন্যাশনাল গেমসে বাংলা দলের জন্য তাঁকে কোচ করা হয়। তিনি সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাতদিন। তাতেই বাজিমাত করলেন বিশ্বজিৎ।
ম্যাচ শেষে মাঠেই টিভি সঞ্চালকের প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলছিলেন,”এবারের সন্তোষ ট্রফিতে কেরলের কাছে আমরা হেরেছিলাম। কেরল খুব ভাল দল। তাই আমরা খুব সতর্ক ছিলাম। ছেলেরা যা খেলেছে এক কথায় অনবদ্য। আমরা প্রস্তুতির সময় পাইনি তবু ছেলেরা মানিয়ে নিয়ে নিজেদের সেরাটা দিয়েছে। অনেকেই এখন বলেন, বাংলার ফুটবল শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি বলি,আমাদের স্কিল, ভাল খেলার ইচ্ছা, ফুটবলের প্রতি প্যাশন সব আগের মতোই আছে। আমি মনে করি ভারতীয় ফুটবলে বাংলা এখনও ‘টাইগার’ই আছে।”