ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : প্রবল চাপে ওঁরা। এতটাই চাপ যে,তৃতীয় ডিভিশনের চার ক্লাব কর্তাদের রাতের ঘুম চলে গিয়েছে। তার নমুনাও আছে। যেমন, সোনারপুর YMSA -এর কর্তারা অনুশীলনের শেষে ফুটবলারদের বলে দিয়েছেন ‘শুক্রবার ম্যাচটা জিতে মাঠ থেকে উঠবি। জিতলেই আর্থিক পুরস্কার।’ সোনারপুর দলের সঙ্গে যুক্ত ভারতের দুই প্রাক্তন অমিত ভদ্র ও প্রতাপ ঘোষ। তাঁরা সারাক্ষণ ফুটবলারদের মানসিক ও শারীরিকভাবে সতেজ রেখেছেনধ। পিছিয়ে নেই শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিংয়ের কর্তারা। গোল করলেই আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেই রেখেছেন ভিক্টোরিয়ার কর্তারা।
আবার ১০৫ বছরের ক্লাব গরলগাছা স্পোর্টিং সোসাল মিডিয়ায় ভিক্টোরিয়াকে উদ্দেশ্য করে ‘যে কোনও মূল্যে ও যেকোনও উপায়ে প্রতিপক্ষ দল ম্যাচ জিততে চায়’ বলে বাজার ‘গরম’ করে দিয়েছে। এসবের পাশে আছে মন্দিরে পুজো দেওয়া সঙ্গে ‘তুকতাকের খেলা।’ বহু বছর পর কলকাতা লিগের নিচের ডিভিশনের খেলায় এমন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
কি এমন হল যে তৃতীয় ডিভিশনের এই চার ক্লাবের খেলা নিয়ে এমন উত্তেজনার সৃষ্টি হল? কারণ যথেষ্টই আছে। তৃতীয় ডিভিশনের ২০ টি দল। দুটি গ্রুফে ১০ টি করে দল। দুটি গ্রুপ থেকে লিগ টেবলের প্রথম দুটি দল অর্থাৎ মোট চারটি দল দ্বিতীয় ডিভিশনে উঠবে। ‘এ’ গ্রুপে প্রথম যে চারটি ক্লাব দল আছে তাদের প্রত্যেকেরই ৮ ম্যাচ খেলে ১৭ পয়েন্ট। এই চারটি দল হল – সোনারপুর YMSA, গরলগাছা স্পোর্টিং, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং এবং ব্যাতোর স্পোর্টিং। প্রত্যেকের ম্যাচ বাকি আছে দুটি করে। কাজেই এই চারটি দলের মধ্যে যে কোনও দল তৃতীয় ডিভিশনে থেকে দ্বিতীয় ডিভিশনে পৌঁছে যেতে পারে। তবে এই চারটি দলের থেকে অ্যাডভান্টেজ সোনারপুরের। গোল পার্থক্যে (+১১) এগিয়ে। তাছাড়া কাশিপুর সরস্বতী ক্লাবের এক অবৈধ ফুটবলারকে চ্যালেঞ্জ করে আইএফএতে অভিযোগ জানিয়ে রেখেছে সোনারপুর। সেই ম্যাচ ড্র করেছিল সোনারপুর। সূত্রের খবর, এই ইস্যুতে আইএফএ লিগের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সভায় দুই পয়েন্ট পাওয়ার রায় সোনারপুরের দিকেই যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। এই দুই পয়েন্ট ধরলে সোনারপুরের ১৯ পয়েন্ট হয়েই আছে। বাকি দুই ম্যাচের একটি জিতলেই দ্বিতীয় ডিভিশনে ওঠাটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু গড়ের মাঠে ফুটবল তো! না আঁচালে বিশ্বাস নেই। তাই সোনারপুরের একটাই অঙ্ক, দুটি ম্যাচ বাকি। আগে প্রথমটা জিতে পরেরটা ভাববে।
শুক্রবার তিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আছে। হাইকোর্ট মাঠে সোনারপুর – জিমখানা, YMCA মাঠে ভিক্টোরিয়া – গরলগাছা এবং বিজি প্রেস মাঠে ব্যাতোর স্পোর্টিং – বেহালা ইয়ুথ মুখোমুখি হবে বিকেল তিনটের সময়। তিনটি ম্যাচই ভীষন গুরুত্বপূর্ণ,কারণ প্রত্যেকের ১৭ পয়েন্ট। যে দল জিতবে সেই দলের কাছে দ্বিতীয় ডিভিশনের ওঠার রাস্তাটা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। তবে চারটি ক্লাবের মধ্যে তিনটি ক্লাব কর্তারা ম্যাচে হারা জেতার টেনশনের থেকে আরও বড় টেনশনে আছে রেফারি নিয়ে। এই বছর খুব নিম্নমানের ম্যাচ খেলাচ্ছেন রেফারিরা। রেফারিদের ভুলের মাশুল যাতে গুনতে না হয়। এই আশঙ্কায় তাঁরা। এমনটাই জানালেন নাম প্রকশে অনিচ্ছুক তিন কর্তা।
রবি কর্মকারের হাতে যখন YMSA ক্লাবটি ছিল তখন তারা দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলত। হাত বদল হয়ে শঙ্কর বসুর হাতে গিয়ে নতুন নাম হল সোনারপুর YMSA ক্লাব। ২০১৭ তে অবনমন হওয়ার পর তৃতীয় ডিভিশনে খেলছে। এবার দ্বিতীয় ডিভিশনে উঠতে মরিয়া।
ভিক্টোরিয়া থেকে উঠে এসেছে রহিম নবি। ২০০৫ প্রথম ডিভিশন থেকে নেমে যায় দ্বিতীয় ডিভিশনে। তার পরে আইএফএ-এর তৎকালীন সচিব উৎপল গাঙ্গুলির জমানায় ভিক্টোরিয়ার অন্দর মহলে রঞ্জিত গুপ্ত ও সমীর দাশগুপ্তর কজিয়ায় অতিসক্রিয় হয়ে ঢুকে তৃতীয় ডিভিশনে কার্যত নামিয়ে দেয় আইএফএ। সেই থেকেই তৃতীয় ডিভিশনে খেলে যাচ্ছে। প্রতি বছর অবনমন বাঁচার লড়াইয়ের লক্ষ্যে দল গড়লেও এবার দ্বিতীয় ডিভিশনে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে নিঃশব্দ বিপ্লব করে চলেছেন দীপ্তিকল্যাণ সেনশর্মা, সঞ্জীব, সোভনরা।
এই তৃতীয় ডিভিশনের ‘বি’ গ্রুপেও ওপরে ওঠার লড়াই আছে। সাদার্ন এসির ৮ ম্যাচ খেলে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ভাল জায়গায়। দ্বিতীয় স্থানে (৮ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট) আছে কলকাতা লিগে নবাগত জ্যোতির্ময় এসি। আইএফএ এর প্রাক্তন সহসভাপতি পার্থসারথী গাঙ্গুলি গত বছর তাঁর নিজের স্কুলের নামে আইএফএ থেকে অ্যাফিলিয়েশন নিয়ে গড়ের মাঠে নেমে পড়েছেন। জ্যোতির্ময়ীর পরেই আছে ট্যাংড়া এফসি (৮ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট)। চার ও পাঁচ নম্বরে ১২ পয়েন্ট নিয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে গ্রিয়ার স্পোর্টিং ও বালি প্রতিভা। এই দুটি ক্লাব বাকি দুই ম্যাচ জিতে গেলে পয়েন্ট টেবলের অঙ্কটাই বদলে যাবে। তবে জ্যোতির্ময়ী দলটা যিনি তৈরি করেছেন সেই বাংলার প্রাক্তন কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলছিলেন,”বুধবার বালি প্রতিভা হেরে যাওয়ায় আমাদের সুবিধা হয়েছে। একটা ম্যাচ জিতলেই আমরা দ্বিতীয় ডিভিশনে উঠে যাব।”