দূর্গা পুজো থেকে সমাজসেবা, নীরবে কাজ করে চলেছেন মহমেডান সচিব ইসতিয়াক

0

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : ১৯৯৯ সাল। মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অবস্থা তখন খুব খারাপ। প্রফেসর সুলেমান খুরশিদ কোনও রকমে দল করছেন। ক্লাবের আর্থিক অনটন। সেই সময় ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন তরুণ ইসতিয়াক আহমেদ। গত ২৪ বছরে মহমেডান ক্লাবে অনেক কর্তা এসেছেন,গিয়েছেন। কিন্তু তিনি ক্লাবের সক্রিয় সদস‍্য হিসেবেই থেকে গিয়েছেন। কখনও সামনে এসে ব‍্যক্তি ইসতিয়াককে তিনি তুলে ধরেননি। নীরবে কাজ করে গিয়েছেন। ময়দানে তাঁকে সবাই রাজু বলেই চেনে,জানে।

তার মূল‍্য তিনি পেয়েছেন। দীর্ঘ ২৪ বছর পর মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সচিব পদে তাঁকে বসানো হয়েছে। এক্ষেত্রে আমিরুদ্দিন ববি,কামারউদ্দিন কোনও ভুল করেননি। ইসতিয়াককে গড়ের মাঠে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, তিনি আরও অনেক কাজের সঙ্গে যুক্ত। নিজে থেকে বলেন না। নিঃশব্দে কাজ করে চলেছেন।

গড়ের মাঠে কিছু কর্তা আছেন, তাঁরাও সমাজের জন‍্য এগিয়ে আসেন। কিন্তু রাজু ওরফে ইসতিয়াক যেন তাঁদের থেকে একটু আলাদা।

সেই কাজের নমুনা শুনলে অবাক হতে হয়। যেমন, পার্ক সার্কাসের ট্রাম ডিপোর সামনের রাস্তায় একটা দুর্গা পুজো হত। আর্থিক কারণে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। স্থানীয় পুজো কমিটির সদস‍্যরা ইসতিয়াককে সমস‍্যার কথা বলেন। ইসতিয়াক নতুন করে পুজো শুরু করতে বলেন। টাকা নিয়ে ভাবতে হবে না। কিন্তু নতুন করে পুলিশের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। মহা সমস‍্যা। তখন বেঁচে ছিলেন মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি। ববি হাকিম,সুব্রত মুখার্জির সাহায‍্য নিয়ে দিলখুশা স্ট্রিটের ফ্রেন্ডস ক্লাবের দুর্গা পুজো ফের শুরু করলেন ইসতিয়াক আহমেদ। তাঁর এই উদ‍্যোগ যেন হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির উদাহরণ।

এই পুজো কমিটির সভাপতি হলেন ইসতিয়াক। সচিব হলেন অনিন্দ দত্ত। চন্দন দত্ত,দেব মালিক,কৃষাঙ্কুর ব‍্যানার্জি হলেন কোষাধ‍্যক্ষ। পুজোর শুরুর অনেক আগে থেকে শেষ পযর্ন্ত ইসতিয়াকের সক্রিয় উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। অষ্টমীর দিনে সবাইকে ভোগ খাওয়ানো হয়।

এতো গেল তাঁর দুর্গা পুজো। এর বাইরেও নীরবে সমাজসেবা মুলক কাজ করে থাকেন নিয়মিত। ১৯২৬ সালে তৈরি হয়েছিল ইসলামিয়া হাসপাতাল। এই হাসপাতালের আজীবন সদস‍্যপদ পেয়েছিলেন ১৯৯৩ সালে। কয়েক বছর আগে যখন ইসলামিয়া হাসপাতালের সংস্করণের কাজ চলছিল তখন সাধারণের চিকিৎসা ব‍্যবস্থার জন‍্য দরগা রোডে নিজের ১৫ হাজার বর্গ ফুটের বাড়িটিকে ছেড়ে দিয়েছিলেন ব‍্যবহার করার জন‍্য। করোনার সময় কোভিড সেন্টারও করে দিয়েছিলেন।

নিজের ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তায় বৃষ্টির জল জমে গেলে জলমগ্ন রাস্তায় নেমে তদারকি করেন এখনও। বস্তির মানুষদের বিপদে আপদে সাহায‍্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাদের কাছের মানুষ রাজু। প্রসঙ্গত,কোভিডের সময় প্রত‍্যেক দিন প্রায় ৪০০ জনের আহারের ব‍্যবস্থা করেছিলেন তিনি।

এই সমাজ সেবায় নিজেকে জড়ানোর পরে নিজেই খুলে ফেলেছেন ‘মালিকা ফাউন্ডেশন’ এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ইসতিয়াক মনে করেন, মানুষের জন‍্য কাজ করতে হলে একা কিছু করা সম্ভব নয়। তাই এই সংগঠন গড়ে সবাইকে নিয়েই নীরবে সমাজসেবা মুলক কাজ করে চলেছেন।

মহমেডান সচিব হিসেবে সম্প্রতি মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের সঙ্গে স্পেন সফরে গিয়েছিলেন ইসতিয়াক। মুখ‍্যমন্ত্রী তাঁকে যথেষ্ট স্নেহ করেন। আবার ববি হাকিম থেকে মহমেডান ক্লাব সভাপতি ও কাউন্সিলর আমিরুদ্দিন ববি ইসতিয়াকের কাজের প্রশংসা করেন বারবার। ইসতিয়াক জাতি,ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন‍্য এগিয়ে আসেন। এটাই তাঁর ইউএসপি।

আপনি যে মাঠের বাইরেও যে এত কর্ম কান্ডের সঙ্গে যুক্ত জানা ছিল না। ময়দানের আড্ডায় কখনও বলেননি তো! উত্তরে ইসতিয়াক আহমেদ ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলেন,”কি বলব বলুন তো। ক্লাবে আসি। আপনারা ক্লাব নিয়ে প্রশ্ন করেন। তার উত্তর দিই। কাজ করতে হলে সবাইকে বলে করতে হবে নাকি। এই কাজগুলো করতে আমার ভাল লাগে। কারও উপকারে যদি আসতে পারি খারাপ কি?”

দিলখুশা স্ট্রিটের বন্ধ হওয়া দুর্গা পুজো আবার নতুন করে শুরু করে দিয়ে তো সবার প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছেন। প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়ে, ইসতিয়াক বলতে শুরু করেন,”শুনুন ভাই,এই পুজো আমাদের পাড়ার পুজো। এখানে আমার প্রিয় হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। পুজো কমিটির সকল সদস‍্যদেরও বিরাট ভূমিকা আছে। এটা ভুলে গেলে চলবে না। আমাকে নায়ক বানিয়ে দেবেন না প্লিজ। তাহলে আমাদের পুজো কমিটির সদস‍্যদের আন্তরিকতা,উদ‍্যোগ,সামগ্রিক ভূমিকাকে ছোট করা হয়। আমরা একটা টিম হিসেবে পুজো করছি। সবাই আনন্দ করছি। এটাই তো বড় প্রাপ্তি। আর একটা কথা বলে রাখি, আগে আমি একজন মানুষ। ধর্মকে নিয়ে যখন মানুষের মধ‍্যে বিভেদ সৃষ্টি হয় তখন খারাপ লাগে। এর থেকে খারাপ কিছু হয় না। যতদিন বাঁচবো ধর্মের উর্ধ্বে গিয়ে মানুষের জন‍্য কাজ করে যাব। প্রত‍্যেক মানুষের তো একটা ভাল লাগার ব‍্যাপার থাকে। এই ধরনের কাজ করাটাই আমার কাছে ভাললাগা।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here