ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,২১ জুলাই : ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কর্তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ঘিরে তুলকালাম। টানা ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট বিক্ষোভ উঠল পুলিশের লাঠি চার্জে। তার আগে দফা দফায় ইস্টবেঙ্গলের দুই সদস্য-সমর্থকদের গোষ্ঠীর মধ্যে হল হাতাহাতি। নিগৃহীত হতে হল সাংবাদিকদেরও। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল না দিলে আর একটা “অভিশপ্ত ২১ জুলাই”-এর জন্ম নিত।
কয়েকদিন আগেই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের বিভিন্ন ফ্যানস ক্লাব সদস্যরা আগেই ঘোষণা করেছিলেন এদিনের ক্লাব অভিযানের কথা। সেই মত এদিন দুপুর একটা নাগাদ লেসলি ক্লডিয়াস সরণীতে (বটতলা) লাল-হলুদ সমর্থকদের জমায়েত শুরু হয়। তাঁদের দাবি ইনভেস্টরের টার্মসিটে সই করতে হবে। দেবব্রত সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং ফুটবলে ফিরে আসতে হবে তাঁদের প্রিয় ইস্টবেঙ্গলকে। প্রতিবাদী সদস্য-সমর্থকরা আসার আগেই ক্লাবের শাসক গোষ্ঠীর সমর্থনে ক্লাবে পৌঁছে যায় বহু ইস্টবেঙ্গল সদস্য-সমর্থক। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাঁবু থেকে কলকাতা কাস্টমস ক্লাব তাঁবুর অনেকটা এগিয়ে আসতে থাকে মারমুখী প্রায় দেড়শো সমর্থক। দেবব্রত সরকারের বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভ দেখাতে আসে তাদের দিকে ছুটে এসে মারতে আসে তারা। এদের মধ্যে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে তারক, ভাইদের, যারা নিয়মিত ক্লাবে আসে। পাশাপাশি এই দলে এমন কিছু মুখ ছিল তারা অনেকেই অপরিচিত মুখ। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে এক ইস্টবেঙ্গল সদস্য-সমর্থককে হাতের কাছে পেয়ে মারধর করা হয়। ঘটনাস্থলের ছবি তুলতে গেলে তিন সাংবাদিককে বাধা দেওয়া হয়। পরে এক তরুন সাংবিদককে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়। বিক্ষোভকারীরা যাতে ক্লাব তাঁবুর ধারেকাছে ঘেঁষতে না পারে তারজন্য দুপুর থেকেই ক্লাব তাঁবুতে বহু মানুষের ভিড়। তাদের মধ্যে বেশ কিছু মহিলাও ছিল। অভিযোগ, এরা নাকি সবই দেবব্রত সরকারের লোক।
ততক্ষণে ডিসি সাউথ আকাশ মাঘোমা বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে রাস্তার মাঝখানে ব্যারিকেড তৈরি করেন। সেই ব্যারিকেডের এক প্রান্তে “গো ব্যাক নিতু” অপর প্রান্তে “নিতু জিন্দাবাদ” স্লোগানে তখন ময়দানের বটতলা চত্তর উত্তেজনায় কাঁপছে। ব্যারিকেডের মাঝখানে পুলিশ আর সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা। মাঝে মাঝে ব্যারিকেড ভেদ করে বিক্ষোভকিরীদের দিকে তেড়ে আসার চেষ্টা থামিয়ে দিচ্ছিলেন পুলিশ। কোনও পক্ষকেই বুঝিয়ে ফেরানো যাচ্ছিল না। বিক্ষোভকারীদের ক্লাব তাঁবুতে ঢোকার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। পরে বিক্ষোভ দেখাতে আসা ইস্টবেঙ্গল সদস্য-সমর্থকদের উপর লাঠি চালাতে থাকে পুলিশ। বেশ কিছু বিক্ষোভকারীদের আটক করে পুলিশ। লাঠি চার্জের সময় পুলিশের মারে পাঁচ সদস্য-সমর্থক মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাদের অ্যাম্বুলেন্স করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, “দেবব্রত সরকার বিভিন্ন জায়গা থেকে গুন্ডা এনে তাদের পথ আটকে মারধর করে। ক্লাবেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আজ প্রমাণ হল, ইস্টবেঙ্গলে এখন গুন্ডারাজই চলছে।”
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে দেবব্রত সরকার সংবাদ মাধ্যমের সামনে বলেন,” আমরা আগেই বলেছিলাম যারা চুক্তিপত্র দেখতে চায় তারা ক্লাবে আসুন। সচিবকে আবেদন করে চুক্তিপত্র দেখুন। সমস্যা নেই তো। ওদের পদ্ধতিতে ভুল আছে।” কিন্তু আপনাদের লোকেরাই তো বিক্ষোভকারীদের ক্লাব তাঁবুতে আসতে বাধা দিয়েছে? জবাবে দেবব্রত সরকার তখন বলেন,”আমরা কোনও কিছু অর্গানাইজ করিনি। যারা বিক্ষোভ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কিছূ মানুষ জড়ো হয়েছিল। এর নেতৃত্বে আমরা ছিলাম না। উৎসাহী লোকেরা, যারা ক্লাবকে বাঁচাতে চায় তারাই এসেছিল। অতএব তাদের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে থাকতে পারে না।”
এদিকে যারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখাতে এসেছিলেন তাদের উপর কেন লাঠি চার্জ করা হল? এই প্রশ্নের জবাবে ডিসি সাউথ আকাশ মাঘোমা বলেন,”ওরা গাড়ি ভাঙচুর করছিল বলেই পুলিশ তেড়ে গিয়েছে।” এদিকে বিক্ষোভকারী সদস্য-সমর্থকদের উপর যেভাবে মারধর করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা করেছেন প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার। সদস্য -সমর্থকরাই তো সব। ওদের আবেগ,ভালবাসার জন্যই ফুটবল বেঁচে আছে। এভাবে ওদের উপর মারধর করা মেনে নেওয়া যায় না।