দারিদ্রর সঙ্গে কঠিন লড়াই করে বাংলা কবাডি দলে কাঁকসার দীপা

0

◆জয় লাহা◆ দুর্গাপুর

২০ মার্চ — চালাফুটো ঘরে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। দ্রারিদ্রতার যন্ত্রণা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। জোটে না প্রোটিনযুক্ত আহার। নেই খেলার মাঠের পরিকাঠামো। লোকলজ্জার মাথা খেয়ে খোলা আকাশের নীচে পোশাক বদল করতে হয়। তবুও হার মানেনি। বুকের মধ্যে আঁকড়ে রাখা স্বপ্নকে নিয়ে এগিয়ে চলছে কাঁকসার অযোধ্যা মহিলা কাবাডি দলের তরুনীরা। আর তাদের মধ্যে এবারেও বাংলা দলের হয়ে জাতীয়স্তরে খেলায় জায়গা করে নিয়েছে দীপা রুইদাস।

কাঁকসার জঙ্গলমহলের অযোধ্যা- বনকাটি গ্রাম। বছর আটেক আগে অযোধ্যা উচ্চবিদ্যালয়ের শারীরশিক্ষার শিক্ষক সুমন চৌধুরী ছোটো ছোটো ছাত্রীদের নিয়ে কাবাডি দল তৈরী করেন। স্কুলের মাঠেই নিয়ম করে প্রশিক্ষণ দিতেন। আজ সেইদল যেন মহীরুহে পরিণত হয়েছে। জেলা থেকে রাজ্যের যে কোন প্রান্তে কাবাডিতে চ্যাম্পিয়ান ট্রফি নিয়ে বাড়ি ফেরে। বর্তমানে সেই প্রশিক্ষণ দেয় সৈয়দ রহমত আলি নামে কাঁকসার এক যুবক। তবে প্রতিভা থাকলেও কাবাডিদলের দ্রারিদ্রতার যন্ত্রনায় আক্রান্ত। চরম প্রতিকলুতায় ডুবে রয়েছে। মাঠ থাকলেও পরিকাঠামো নেয়। নেই খেলার মাঠে কোন শৌচাগার। জঙ্গলে ভেতর পোশাক বদল করতে হয়। জাতীয়স্তরে খেলতে হলে ম্যাট সু এখন বাধ্যতামুলক। কিন্তু দেড়-দু হাজার টাকার ওই জুতো কেনার সামার্থ নেই কারও। আর সেখান থেকে এবারও বাংলার জুনিয়ার কবাডি দলের হয়ে জাতীয়স্তরে খেলার সুযোগ করে নিয়েছে দীপা রুইদাস।

পশ্চিম বর্ধমান জেলা কাবাডি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে পার্থ ব্যানার্জি বলেন,” আগামী ২২ -২৫ মার্চ তেলেঙ্গানায় জাতীয় কাবাডি (জুনিয়ার) প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুরুষ ও মহিলা বিভাগের বাংলা দল রওনা দিয়েছে। পুরুষ বিভাগে দুর্গাপুরের আমরাই গ্রামের শেখ শরিফ এবার বাংলা দলের ক্যাপ্টেন। এছাড়াও দুর্গাপুর সংলগ্ন আরতি গ্রামের শেখ ইয়াদ আলিও বাংলা দলের হয়ে খেলবে। আবার বাংলার মহিলা দলের খেলবে দীপা রুইদাস।”
বনকাটি গ্রামে রুইদাস পাড়ায় বাড়ি দীপার। চালাফুটো ঘরের ভেতর থেকে চাঁদ দেখা যায়। সেই বাড়িতেই কোনভাবে পুরস্কারের পদক, ট্রফি তুলে রেখেছে। বাবা বিনয় রুইদাস পেশায় দিনমজুর। অভাব অনটন নীত্যসঙ্গী। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সংসারের অবস্থা। প্রোটিন খাবারতো দুর অস্ত দুমুঠো ভাত সময়ে জোগাড় করতে হিমসীম খেয়ে যায়। দীপা বর্তমানে স্নাতকে প্রথমবর্ষে পাঠ্যরত। সে জানায়,”

আগামীদিনে ভারতীয় দলে খেলার স্বপ্ন রয়েছে। কিন্তু কাবাডি খেলার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। কাবডি খেলতে শাক- সব্জি, ছোলা -গুড় একটু বেশী খাওয়া দরকার। কিন্তু সেসব কেনার সামর্থ নেই। গ্রামের অনুশীলন মাঠের পরিকাঠামো নেই। শরীরচর্চার নুন্যতম পরিকাঠামোটুকু নেই। পঞ্চায়েত থেকে পানীয় জলর নলকুপ বসিয়েছে। কিন্তু ওই জল নোংরা, খাওয়া যায় না। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ম্যাট- সু দিয়েছেন। লক্ষ্য বিজয়ী ট্রফি নিয়ে বাড়ি ফিরবে। ” দীপাদের কোচ সৈয়দ রহমত আলি জানান,” গত বছর এখান থেকে স্বরসতী মুর্মু নামে একজন বাংলা দলের হয়ে খেলতে গিয়েছিল। এবার দীপা। খুব ভাল প্রতিভা। সাফল্য কামনা করি। আশা রাখছি এবারে বাংলা চ‍্যাম্পিয়ন হবে।”

অন্যদিকে বনকাটি পঞ্চায়েত প্রধান পিন্টু বাগদী জানান,” দীপার সাফল্য কামনা করি। বনকাটি মহিলা কাবাডি দল আমাদের গর্ব। সর্বদা তাদের পাশে থাকব।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here