দাদাকে হারিয়ে বিওএ সভাপতি স্বপন ব‍্যানার্জি

0

ইনসাইড পোর্টসের প্রতিবেদন : হঠাৎ নির্বাচন রুম থেকে বেড়িয়ে দ্রুত গতিতে লিফটের কাছে পৌঁছে গেলেন বেঙ্গল অলিম্পিক অ‍্যাসোসিয়েশনের সদ‍্য প্রাক্তন সভাপতি মুখ‍্যমন্ত্রীর বড়দা অজিত বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়। তাঁর পিছনে ছুটে গিয়ে একাধিক প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছিলেন সাংবাদিকরা। ময়দানের পরিচিত “ষষ্ঠীদা” নির্বিকার। লিফট পর্যন্ত পৌঁছে দিতে এসেছিলেন সদ‍্য সভাপতি হওয়া স্বপন ব‍্যানার্জির গোষ্ঠীর রূপেশ কর (তিনি এবার ট্রেজারার নির্বাচিত হয়েছেন)। সাংবাদিকদের রুপেশবাবু অনুরোধ করতে থাকেন,” দাদাকে আপনারা ছেড়ে দিন প্লিজ। বাড়ি থেকে জরুরি ফোন এসেছে। উনি কথা বলার জায়গায় নেই।” কিন্তু সাংবাদিকরা হারার প্রতিক্রিয়া জানতে রীতিমত পরাজিত সভাপতিকে ঘিরে ধরে। বাধ‍্য হয়েই সৌজন‍্য মন্তব‍্য রাখলেন। “যারা নির্বাচিত হয়ে এলেন, তাদের প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইল।” ভাই স্বপন নিয়ে অজিত ব‍্যানার্জি,”ভাল কাজ করে অ‍্যাসোসিয়েশনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন‍্য ও নিশ্চয় নিজেকে তৈরি করবে।” মন্তব‍্য শেষ হতেই আর তাঁকে দাঁড় করা যায়নি।
দৃশ‍্যতই অজিতবাবু হতাশ। বেড়িয়ে যাওয়ার একটু আগে নতুন জয়ী ভাই পরাজিত দাদার গলায় রজনীগন্ধার মালা পড়িয়ে দিয়েছেন, রসগোল্লাও খাওয়ালেন। এমন দৃশ‍্য দেখে মনে হবে দুই ভাইয়ের মধ‍্যে যেন ‘ফিল গুডের হাওয়া’ বইছে। যা কিছু চোখে দেখা যায় তা সব সময় সত‍্যি হয় না।
বিওএ-এর এই নির্বাচন ঘিরে গত এক পক্ষকাল ধরে কঠিন লড়াই করে গিয়েছেন মুখ‍্যমন্ত্রীর দুই ভাই। অভিযোগ, অজিতবাবুর ইন্ধনে নাকি ভোট বানচাল করতে চারটি সংস্থা আদালতেও গিয়েছে। তাতেও আটকানো যায়নি। নির্বাচনের ফলাফল যেন আগেই পড়ে ফেলতে পেরেছিলেন অজিতবাবু।

সভাপতির লড়াইয়ে দাদা অজিত ভোট পেয়েছেন ২৪টি। সেখানে ভাই স্বপন ব‍্যানার্জি পেয়েছেন ৩৯ টি। মোট ৬৪ টি ভোট। কিন্তু বক্সিং, ব‍্যাডমিন্টন ও ভলিবল সংস্থা থেকে ভোট দেওয়া হয়নি। এদিন ভোট হল ৬১টি। সভাপতি পদের লড়াই ছাড়াও সচিব পদে বিওএ-এর দীর্ঘদিনের সাথী জহর দাস (৩৮) হারালেন একদা সিএবির কোষাধ‍্যক্ষ বিশ্বরূপ দে (২৩) কে। পুরো প‍্যানেল জয়ী হওয়ার পরও স্বপন গোষ্ঠীতে একটা আক্ষেপ থেকেই গেল। কেন? সংস্থার এক প্রবীন সদস‍্য ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-কে বলছিলেন,”পুরো প‍্যানেলের জয় হল কোথায় ভাই? ( দুর থেকে চন্দন রায় চৌধুরীকে দেখিয়ে) একটা চোনা রয়েই গেল।” অভিযোগ, অজিতের ডান-বাম হাত ছিল এই চন্দন রায় চৌধুরী। সহসভাপতির পদে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। টাই হলে প্রক্সি ভোটে জয়ী হয় এই চন্দন। এছাড়া সহ সভাপতি নির্বাচিত হলেন, কমল কুমার মৈত্র, গৌতম সিনহা, রামানুজ মুখার্জি, সুব্রত দে, গৌতম গাঙ্গুলি ও ভি ঢল।
যুগ্ম সচিব পদে জিতলেন অসিত কুমার সাহা, দিলীপ পালিত, মহম্মদ জাভেদ চৌধুরী ও সুরভি মৈত্র। ট্রেজারার হলেন রূপেশ কর। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ লড়াই করেননি।
শনিবার সন্ধ‍্যা পযর্ন্ত নির্বাচন নিয়ে যা সব ঘটেছে, আজ জয়ের পর কী দাদাকে যোগ‍্য জবাব দিলেন? প্রশ্নটা করতেই সদ‍্য নির্বাচিত সভাপতি স্বপন ব‍্যানার্জি বললেন,”দেখুন দাদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ নয়। আগের মতোই আছে। আমরা আজও এক সঙ্গে চা খেয়েছি। চেয়ারের মূল‍্য কি তাই নিয়ে লড়াই হয়েছে। এছাড়া আর কিছু নেই।”
দিদি আশীর্বাদ কি তাহলে এবার পেলেন? বিরক্ত স্বপন বলে উঠলেন,”দিদিকে আমি মায়ের মতো দেখি। আমাদের এই নির্বাচনী লড়াইয়ে দিদি মাথা ঘামায়নি। আমি জিতেছি। এবার বাড়ি গিয়ে বড়জোর দিদিকে প্রনাম করে আর্শীবাদ নেব।”
সভাপতি হয়ে আপনার প্রথম লক্ষ‍্য কি? স্বপন জানালেন,”ডিএল রোডে যে জায়গাটা আছে সেখানে কিছু একটা করতে চাই। অলিম্পিক গেমস ভিলেজ করার ইচ্ছে আছে। হকির অ‍্যাস্ট্রোটার্ফ এবং ছোট ছোট সংস্থাকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে চাই।”
এত লড়াইয়ের পর আজ বাড়ি গিয়ে কি করতে চান? “বাড়ি গিয়ে কষা মাংস খাব।” দাদাকে হারানোর উচ্ছ্বাস চাপা রাখতে পারছিলেন না স্বপন।
আর দাদা? গত ৮ বছর ধরে বিওএতে রাজ করছিলেন। আজ, রবিবার তার সমাপ্তি ঘটল। বিওএতে যখনই কেউ ক্ষমতায় এসেছেন সেভাবে কাজ করেননি। ময়দানের বাবুন কাজ করবেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here