◆সন্দীপ দে◆
কয়েকটি জেলা ক্রীড়া সংস্থাতেই ‘দখল’ নিয়ে অতীতে সমস্যা হয়েছে। মামলা, মকদ্দমা হয়েছে। কিন্তু বহু বছর ধরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা এই ‘দখল’ নিয়ে কোনও সমস্যা, অচলাবস্থা তৈরি হয়নি। এবার সেই ধারা বজায় রাখতে পারল না উত্তরবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। গত চার মাস ধরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, কতিপয় কর্তাদের DSA-এর ‘দখল’ নেওয়ার লড়াইকে কেন্দ্র করে এই জেলা ক্রীড়া সংস্থা অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছে। সমাধানের একটাই রাস্তা – আদালত। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া মহল সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই নাকি জনৈক ব্যক্তি মামলা করে দিয়েছেন। তবে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পযর্ন্ত কবে, কে বা কোন ইস্যুকে কেন্দ্র করে মামলা করেছেন তার সত্যতা যাচাই করে উঠতে পারেনি ‘ইনসাইড স্পোর্টস।’
দক্ষিণ দিনাজপুর DSA কে ঘিরে অচলাবস্থা তৈরি হল কেন? এই জেলার ক্রীড়া মহলের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল ২০২৪ সালের শুরু থেকেই DSA নিয়ে একটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। আস্তে আস্তে তা বড় আকার নেয়। গত ১৪ সেপ্টেম্বর এই জেলা ক্রীড়া সংস্থার ত্রিবার্ষিক সভা হয়। DSA এর সংবিধান অনুযায়ী সেই বেঠকের ৭৫ দিনের মধ্যে সংস্থায় বৈঠক ডেকে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। যতক্ষণ পযর্ন্ত নতুন কমিটি গঠন হচ্ছে ততক্ষণ পযর্ন্ত দুলু ওরফে অমিতাভ ঘোষ সচিব থাকবেন। তাঁকেই বেঠক ডেকে সভা করতে হবে। প্রসঙ্গত, ১৪ সেপ্টেম্বর সংস্থার ত্রিবার্ষিক সভায় বিপ্লব দেবকে কার্যকরী সভাপতি ও চার সহসভাপতি বেছে নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নতুন কমিটির তালিকাও তৈরি করে অমিতাভ ঘোষ সংস্থার সভাপতি জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণার কাছে জমাও দিয়েছিলেন বলে খবর। কিন্তু অভিযোগ, ওই ত্রিবার্ষিক সভার পর সচিব অমিতাভবাবু বৈঠক ডাকতে দেরি করছেন। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জেলা শাসক বিজিন কৃষ্ণা ১৯ নভেম্বর সংস্থার সচিব অমিতাভ ঘোষকে চিঠি দিয়ে নির্দেশ দেন যে,২৮ নভেম্বরের মধ্যে বৈঠক ডেকে নতুন পদাধিকারী গঠন ও অনিয়ম নিয়ে আলোচনা করুক। প্রসঙ্গত, ২৮ নভেম্বর হল ৭৫ দিনের শেষ দিন। অমিতাভ ঘোষ বৈঠক ডাকতে দেরি করার অভিযোগ এনে সাত কমিটির সদস্য বৈঠক ডেকে নতুন সচিব হিসেবে সুজয় ঘোষকে বেছে নিয়ে অন্যান্য কমিটিও গঠন করে। কিন্তু এই সভা নাকি নিয়ম মেনে করা হয়নি বলে সংস্থার সভাপতি অর্থাৎ জেলা শাসককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেন অমিতাভ ঘোষ। ফলত পুরো বিষয়টাই ঘেঁটে গিয়েছে। এই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য সংস্থার কার্যনির্বাহী সচিব অমিতাভ ঘোষকে রবিবার একাধিকবার ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট করলেও তার উত্তর দেননি। অথচ তিনি কলকাতা শহরে এসে ইডেনে সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে ছবি তুলেছেন সেই ছবিও আমাদের হাতে এসেছে। তিনি কি সাংবাদিকদের এড়াতে চায়ছেন? কেন? শোনা যাচ্ছে, নিজের জেলা ক্রীড়া সংস্থার সমস্যা নিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে নাকি কথাও বলেন।
অমিতাভ ঘোষের প্রতিক্রিয়া জানতে না পারলেও সদ্য সভার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করলে সংস্থার কার্যকরী সভাপতি বিপ্লব দেব ফোনে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে জানান,”সচিব তো কোনও বেঠকই ডাকছিলেন না। কেন জানি না। বাধ্য হয়ে সংস্থার সদস্যরা বৈঠক ডেকে নতুন সচিব ও অন্যান্য পদাধিকারী গঠন করা হয়েছে। যা হয়েছে তা নিয়ম মেনেই হয়েছে। এরপর যদি ওর মনে হয় নিয়ম মানা হয়নি তাহলে আইনের দ্বারস্থ হতে পারেন।”
এখন প্রশ্ন হল, ৭৫ দিনের মধ্যে অমিতাভ ঘোষের সভা ডাকতে এত ভয় কিসের? মেজরিটি সমস্যা? নাকি তাঁরই একদা ‘দলের’ সুজয় ঘোষকে সচিব হিসেবে মানতে না পারা? সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে সত্যিই কি আলোচনায় বসেছিলেন? এর কোনওটার জবাব অমিতাভর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। কারণ তিনি এই প্রতিবেদকের ফোনটায় ধরেননি।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জেলা শাসক বিজিন কৃষ্ণা কি এই অচলাবস্থা কাটাতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারতেন? এই সংস্থার ঘটনায় জেলা শাসকের নেওয়া দুটি সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। যেমন, ত্রিবার্ষিক সভার পর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়া কি ভাবে সিএবিতে জেলা প্রতিনিধির নাম পাঠালেন? প্রসঙ্গত, সভা ছাড়াই সংস্থার সভাপতি হিসেবে বাপি ওরফে অরূপ দত্তকে এই জেলার DSA এর প্রতিনিধি হিসেবে সিএবিতে নাম পাঠানো হয়। এটা কি সংবিধান অনুযায়ী হয়েছে? যদি সংবিধান মেনে নাই হয়ে থাকে তাহলে সিএবি অরূপের নাম গ্রহণ করতে পারে? জানা যায়নি। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা কর্তাদের একটা অংশ আড়ালে জেলা শাসকের সমালোচনা করছেন, বিপ্লব করছেন কিন্তু জেলা শাসকের সামনে গিয়ে DSA-এর কেউ প্রতিবাদ করার সাহস দেখাতে পারলেন না কেন? সেই প্রশ্নও উঠছে। তবে ১৯ নভেম্বর অমিতাভকে চিঠি দিয়ে বৈঠক ডাকার নির্দেশ দিয়ে সঠিক কাজই করেছেন জেলা শাসক। কিন্তু জেলা শাসকের চিঠি পাওয়ার পরও বেঠক ডাকার ব্যাপারে অমিতাভকে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ DSA এর একটা অংশের। পুরো বিষয় নিয়ে জেলা শাসক স্থানীয় এক সংবাদ মাধ্যমকে (উত্তরবঙ্গ সংবাদ-এর সাংবাদিককে)কে জানিয়েছেন,”DSA একটা স্বশাসিত সংস্থা। নজর রয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু বলব না।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অভিযোগ, বহু বছর ধরেই এই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা রাজনৈতিক দল আরএসপির নিয়ন্ত্রণে। সংস্থার কমিটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আরএসপি জেলা নেতৃত্বই শেষ কথা। এই অমিতাভ ঘোষও নাকি আরএসপি পার্টি সদস্য। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতে আরএসপি নেতৃত্বকে সরিয়ে দিয়ে ঢুকে পড়ছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। যেমন, এই জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি ছিলেন আরএসপির রাজ্য কমিটির নেতা অমর সরকার। তার জায়গায় এবার এসেছেন প্রাক্তন খেলোয়াড় ও ব্যবসায়ী বিপ্লব দেব। আর এস পি’র আরও এক রাজ্য কমিটির সদস্য কল্যাণ ব্যানার্জিকে সরিয়ে সহসভাপতি করা হয়েছে মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রর ভাই শার্দুল মিত্রকে। কমিটিতে এসেছেন গত বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী শেখর সেনগুপ্ত ও প্রাক্তন জেলা সভাপতি মৃনাল সরকার। DSA এর ‘দখল’ নিয়ে কর্তাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের লড়াইয়ের ফাঁকে ঢুকে পড়ছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। নিজের চেয়ার ধরে রাখতে কেউ কেউ তৃণমূল নেতৃত্বকে সচেতন ভাবেই যে আহবান করছেন না তার কি নিশ্চয়তা আছে? খেলাকে সামনে রেখে দুই গোষ্ঠীর ‘চেয়ার দখলে’ লড়াই চলছেই। কিন্তু আসল খেলাটাকেই ব্রাত্য রেখে দিয়েছেন ওঁরা। ভুক্তভোগী জেলার খেলোয়াড়রা।