তীব্র আর্থিক সঙ্কটের মাঝেই আইএফএতে আসতে চলেছে নতুন স্পনসর

0

সন্দীপ দে

করোনা, লকডাউনের কারণে গত দেড় বছরে ভেঙ্গে পড়েছে রাজ‍্য ফুটবল নিয়ামক সংস্থা আইএফএ-এর আর্থিক পরিকাঠামো। বুধবার সন্ধ‍্যায় সংস্থার ফিন‍্যান্স কমিটি বৈঠকের শেষে চেয়ারম‍্যান সুব্রত দত্ত জানিয়ে দিয়েছেন,”এই মাসে আইএফএ স্টাফদের মাইনে দেওয়ার পর যে টাকা পড়ে থাকবে তা দিয়ে ইলেকট্রিক বিল, টেলিফোন বিল, স্টাফেদের গ্র‍্যাচুইটি, টিডিএসের টাকা জমা করা যাবে না। এই মুহূর্তে আইএফএ-এর আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়।”

ভাবা যায় না। ইলেকট্রিক ও টেলিফোনের বিল দেওয়ার টাকা থাকবে না – এমন পরিস্থিতি আইএফএ-এর ইতিহাসে আগে কখনও হয়েছে কিনা তা মনে করতে পারছেন না ময়দানের একাধিক অভিজ্ঞ কর্তারা।

এমন কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও আইএফএ-এর সংসারে খুশির খবর হল, খুব শীঘ্রই নতুন স্পনসর’সেলভেল’কে পেতে চলেছে রাজ‍্য ফুটবল নিয়ামক সংস্থা। ফুটসল, আন্তঃজেলা সহ মোট ৫ টি টুর্নামেন্টে ‘সেলভেল’ আইএফএকে স্পনসর করবে। প্রাথমিকভাবে এমনটাই ঠিক হয়েছে। ‘সেলভেল’-এর সঙ্গে আইএফএ-এর চুক্তি হওয়ার কথা ছিল গত এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে । কিন্তু ওই সময় নিজের পদত‍্যাগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জয়দীপ মুখার্জি ২৫ দিন আইএফএ অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন। ওই সময় সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে ‘সেলভেল’-এর সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পাশাপাশি ফুটসলও শুরু হয়ে যেতে পারত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সব কিছু ঠিক থাকলে জুলাই মাসেই নতুন স্পনসর ‘সেলভেল’-এর সঙ্গে আইএফএ-এর চুক্তি হয়ে যাওয়ার কথা।

এই মূহুর্তে আইএফএ-এর কিট স্পনসর ‘ভিকি স্পোর্টস’ টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আর মার্কেটিং এজেন্সি ‘অ‍্যাকোর্ড’ চুক্তির সময় একবার টাকা দিলেও পরে কিছুই দেয়নি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত মহালয়ার দিন এক পাঁচতারা হোটেলে ‘অ‍্যাকোর্ড’-এর সঙ্গে আইএফএ-এর চুক্তি হয়েছিল। চুক্তিতে চার বছরে আইএফএকে ১৪ কোটি টাকা (প্রথম বছর ২ কোটি টাকা, দ্বিতীয় বছরে ৩ কোটি টাকা, তৃতীয় ও চতুর্থ বছরে যথাক্রমে ৪ ও ৫ কোটি টাকা) দেবে ‘অ‍্যাকোর্ড’। ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাঁচতারা হোটেলে চুক্তির পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আইএফএ সভাপতি অজিত ব‍্যানার্জি বলেছিলেন, চুক্তি অনুযায়ী ‘অ‍্যাকোর্ড’-এর থেকে প্রতি বছর নির্দিষ্ট টাকা আইএফএ-এর অ‍্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে। সেদিন অজিতবাবুর বক্তব‍্য শুনে মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন ‘অ‍্যাকোর্ড’-এর কর্ণধার সুদীপ গাঙ্গুলি। তাহলে এই ক্রাইসিসে ‘অ‍্যাকোর্ড’ থেকে এই বছরের অগ্রিম টাকা পাবে না কেন?

‘অ‍্যাকোর্ড’-এর কর্ণধার সুদীপ গাঙ্গুলি ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে জানান,”চুক্তির পর আমরা কিছু পরিমাণ টাকা আইএফএকে দিয়েছি। সমস‍্যা হল, করোনার কারণে কোনও খেলায় করা যায়নি। শিল্ড কোন রকমে হয়েছে। এই প‍্যান্ডামিক সিচুয়েশনে সব কিছুই প্রায় বন্ধ। এটাই সমস‍্যা হয়ে গিয়েছে।”

প্রশ্ন : আইএফএ আরও কিছু নতুন মার্কেটিং এজেন্সি খুঁজছে। দু একটা মার্কেটিং এজেন্সির সঙ্গে কথা চলছে। তাহলে আপনাদের কোন কোন টুর্নামেন্ট নিয়ে চুক্তি হয়েছে?

সুদীপ গাঙ্গুলি : আমরা কলকাতা লিগ, আইএফএ শিল্ড, নার্সারি লিগ, ট্রেডস কাপ ও কন‍্যাশ্রী কাপ – মোট পাঁচটি টুর্নামেন্ট আমাদের।

প্রশ্ন : আপনারা থাকতে অন‍্য সংস্থা এসে নতুন পাঁচটা টুর্নামেন্ট কিনছে। আপনারা ছাড়লেন কেন? শোনা যাচ্ছে আপনারা অদুর ভবিষ্যতে আইএফএ থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন? এটা কি সত‍্যি?
সুদীপ গাঙ্গুলি : একদম বাজে কথা। আমরা আইএফএ-এর সঙ্গে আছি। নতুন যে স্পনসর পাঁচটা টুর্নামেন্টের দায়িত্ব নিয়ে আসছে সেই টুর্নামেন্ট করার প্রস্তাব আমরা পেয়েছিলাম। আমরা করতে চাইনি।

কিট স্পনসর ভিকি স্পোর্টস এবছর টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। গত সপ্তাহে আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জি ফোনালাপে এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন,”স্পনসররা টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এই বছর খেলা না হলে আইএফএ চালাতে পারব না।” কঠিন পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই হয়তো এই লকডাউনের মধ‍্যেই গতকাল (বুধবার) ফিনান্স কমিটির জরুরি সভা ডেকেছিলেন সচিব। এই মুহুর্তে টাকার খুব প্রয়োজন। সেটা স্বীকার করেই আইএফএ-এর চেয়ারম‍্যান সুব্রত দত্ত এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন,”নতুন মার্কেটিং এজেন্সি বা স্পনসর আনতে আনতে, তাদের সঙ্গে কথা বলে,চুক্তিতে সই করে টাকা নিতে আগস্ট মাস হয়ে যাবে। যেহেতু এখন টাকার খুব দরকার। তাই আইএফএ সচিব নিজে ২৫ লক্ষ টাকা আইএফএকে ধার হিসেবে দিচ্ছেন।”

জয়দীপের এই ভূমিকা প্রশংসনীয়। ২০১৯ সালে সচিব পদে বসে জয়দীপ বলেছিলেন,”আইএফএ স্টাফদের মাইনে কখনও বন্ধ হবে না। এটা সচিবের দায়িত্বের মধ‍্যেই পড়ে।” ঠিকই এটা যে কোনও সচিবের দায়িত্বর মধ‍্যেই পড়ে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অতীতে আইএফএ-এর আর্থিক দুরাবস্থায় পাশে থাকার নজির আছে একাধিক। তাদের মধ‍্যে অন‍্যতম হলেন প্রদ‍্যোৎ দত্ত। সচিব থাকার সময় দফায় দফায় প্রচুর টাকা দিয়ে আইএফএকে সাহায‍্য করেছেন নিঃশব্দে। একবার তো জর্জ টেলিগ্রাফের অ‍্যাকাউন্ট থেকে আইএফএ-এর কর্মীদের মাইনে দিয়েছিলেন প্রদোৎ দত্ত। পদে না থেকেও বছরের পর বছর আইএফএকে টাকা দিয়ে সাহায‍্য করেছিলেন সরোজ ব‍্যানার্জি, ভ্রাতৃ সংঘের স্বপন ভট্টাচার্য, জর্জ ক্লাবের শতদল গুপ্ত, টালিগঞ্জের মন্টু সাহা।

কলকাতা লিগের দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাবের এক কর্তা (নাম প্রকাশ‍্যে অনিচ্ছুক) ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-কে বলছিলেন,”জয়দীপের এই ভূমিকা দেখে ভাল লাগছে। তবে আরও ভাল লাগবে যদি সংস্থার আয়-ব‍্যায় -এর হিসাবের কপি সকল গভর্নিং বডির মেম্বারদের হাতে তুলে দেয়। যেকোনও জায়গায় স্বচ্ছতাটা খুব দরকার। জয়দীপ যে ভাবে এগোচ্ছে, আমার মনে হয় অদুর ভবিষ্যতে স্বচ্ছতা বজায় রাখবে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here