◆সন্দীপ দে◆
তিন প্রধান ক্লাব মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান স্পোর্টিংয়ের কোনও পদাধিকারীকে আর আইএফএ-র কোনও চেয়ারে বসতে দেখা যাবে না। কোনও কর্তা যদি সংশ্লিষ্ট ক্লাবের গর্ভনিং বডি বা এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য থাকেন তাহলে আইএফএ-এর কোন পদে থাকতে পারবেন না। এমনই নতুন নিয়ম চালু করতে চলেছে রাজ্যের ফুটবল নিয়ামক সংস্থা আইএফএ। সব কিছু ঠিক থাকলে শুক্রবার (৫ মার্চ,২০২১) আইএফএ-র স্পেশাল অ্যানুয়াল জেনারেল মিটিংয়ে এই নতুন নিয়মে শিলমোহর পড়তে চলেছে। INDIAN FOOTBALL ASSOCIATION (WEST BENGAL) REGULATION OF ASSOCIATION – এর নতুন নিয়ম নথি ক্লাবগুলির কাছে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে আইএফএ। সেই কপি ‘ইনসাইড স্পোর্টসে’র হাতে এসেছে। সেই নতুন নিয়মে অবশ্য কোথাও তিন প্রধান ক্লাব মোহনবাগান,ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান স্পোর্টিংয়ের নাম উল্লেখ করা হয়নি। বলা হয়েছে, যে ক্লাবের ২,৫০০ -এর বেশি সদস্য আছে, সেই ক্লাবের গর্ভনিংবডি বা এক্সিকিউটিভ কমিটির কোনও কর্তা আইএফএ-এর কোনও পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কলকাতা লিগে অংশ নেওয়া কোনও ক্লাবের (ইস্টবেঙ্গল,মোহনবাগান, মহমেডান ছাড়া) সদস্য সংখ্যা কয়েকশোর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। অতএব, এই নিয়ম তিন প্রধানের কর্তাদের আটকাতেই করা হচ্ছে বলে আইএফএ সূত্রের খবর।
এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রধাণ কারণ হল আইএফএ সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৯ সালে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড়দা ষষ্ঠী ওরফে অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় আইএফএ-র সভাপতি নির্বাচিত হলেন তখন তিনি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য ছিলেন। আইএফএ সভাপতি হওয়ার পরও ইস্টবেঙ্গলের কমিটি থেকে পদত্যাগ করেননি। কিন্তু সচিবের চেয়ারে বসে জয়দীপ মুখার্জি সেই ভুলটা করেননি। জয়দীপও ইস্টবেঙ্গলের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য ছিলেন। যেদিন আইএফএ-র সচিব হয়েছেন তার কয়েক দিনের মধ্যেই ইস্টবেঙ্গলের কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন জয়দীপ।
একই ব্যক্তি দুই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় এবং একই খেলা সম্পর্কিত পদে থাকলে স্বার্থের সংঘাত ঘটেই। এটা জেনেও অজিতকে ছেড়েই রেখেছিলেন জয়দীপ। কিন্তু যখন “ময়দানি অঙ্ক”- এ গড়মিল শুরু হয়,তখনই এক ব্যক্তি দুই জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নিয়ে ‘বিপ্লবী’ হয়ে উঠলেন জয়দীপ। পদত্যাগ করে নাটক করলেন। অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ইস্টবেঙ্গল থেকে পদত্যাগ করে মাথা নিচু করে আইএফএতেই থাকলেন। এই সুযোগে অজিতের ঘটনা সামনে রেখে তিন প্রধান ক্লাবের পদাধিকারী কর্তাদের আইএফএতে না থাকার নতুন নিয়ম করল সংশ্লিষ্ট সংস্থার ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক।’
শুধু তিন প্রধানের কর্তাদের আটকানো হচ্ছে কেন? উঠছে প্রশ্ন। প্রথম ডিভিশনের এক ক্লাবের সচিব (নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক) ‘ইনসাইড স্পোর্টস”-এর এই সাংবাদিককে মেসারার্স ক্লাবে দাঁড়িয়ে বলছিলেন,”এই সিদ্ধান্ত ভাল। কিন্তু শুধু তিন প্রধান ক্লাব কর্তাদের টার্গেট করলে হবে না। ছোট ক্লাব কর্তাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম করা উচিত।”
কেন এমন প্রশ্ন তুলছেন?
উত্তরে সেই কর্তা এবং তাঁর সঙ্গে থাকা তৃতীয় ডিভিশনের হাওড়া নিবাসী কর্তাটি বলে উঠলেন,”সহসচিব যারা নির্বাচিত হয় তারাও তো নিজেদের ক্লাবের সচিব,সভাপতি নইলে কোষাধ্যক্ষ পদে থাকে। এই পদে না থাকলেও তারা নিজেদের ক্লাবে কমিটি মেম্বার। তাদের ক্লাবে হয়তো ২৫০০ মেম্বার নেই কিন্তু তারাও তো আইএফএ-র চেয়ারে বসে নিজের দলের স্বার্থে প্রভাব খাটাতে পারে। যারা এতদিন সহসচিব পদে ছিল, তাদের চারজনকেই তুমি খুব ভাল করে জানো সন্দীপ। প্রত্যেকেই নিজের ক্লাবে কোনও না কোনও পদে আছে। জয়দীপ কি জানে না? কিছু বলার নেই।”
এই প্রশ্নগুলি দলের মিটিংয়ে তোলেননি কেন? উত্তরে কর্তাটি বললেন,”কি বলবো! আমার কথা শুনবে?”
শুনেছি,জয়দীপ নাকি আপনার ঘনিষ্ঠ। তাকে তো বলতে পারতেন। একরাশ বিরক্তি নিয়ে কর্তাটি বললেন,”ময়দানে আবার কেউ কারও ঘনিষ্ঠ হয় নাকি! সবাই নিজের গেম সেটিংয়ে ব্যস্ত।”
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরে আইএফএতে এখন কোনও সহসচিব নেই। নতুন করে কবে সহসচিব নির্বাচন হবে, কেউ জানে না। তবে একটা ব্যাপার প্রায় নিশ্চিত। সরকারি ভাবে সচিব পদে “ফিরছে” জয়দীপ মুখার্জি। দু মাস আগে আমরাই (ইনসাইড স্পোটাস) বলেছিলাম, সচিব পদে জয়দীপ পদত্যাগ করে নাটক করেছেন এবং নাটক করে পরে সচিব পদে থাকবেনও।
আইএফএ সূত্রের যা খবর, শুক্রবার হয়তো মিটিংয়ে কয়েকজন মেম্বার বলবেন,”জদীপকেই চাই। আপনি পদত্যাগ পত্র ফিরিয়ে নিন।” তাই শুনে মিটিং পরিচালকরা সদস্যদের মতামত জানতে চাইবেন। ঠিক তখনই সমস্বরে উচ্চারিত হবে -“পাশ…পাশ…পাশ….।”
এদিনের এই মিটিংয়ে আরও কিছু নতুন নিয়ম পাশ হওয়ার অপেক্ষায়। সামনের বছর কলকাতা লিগ বয়স ভিত্তিক করাটাও পাশ হয়ে যাওয়ার কথা। তাছাড়া, প্রিমিয়ার ডিভিশন থেকে শুরু করে পঞ্চম ডিভিশনের ক্লাবগুলির অ্যানুয়াল অ্যাফিলিয়েশন ও রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়াচ্ছে রাজ্য ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা আইএফএ। শুধু ক্লাব নয়, এবার থেকে জেলা সংস্থাগুলিকে বর্ধিত ফি দিতে হবে। শুক্রবার আইএফএ-র স্পেশাল অ্যানুয়াল জেনারেল মিটিংয়ে এই ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্তে শিলমহর পড়তে চলেছে।
কত টাকা বাড়ানো হচ্ছে? আগে কত টাকা দিতে হত? আর এখন বেড়ে কত টাকা হল তার কিছু নমুনা এই রকম –
◆প্রিমিয়ার ডিভিশনের ক্লাবগুলিকে আগে বছরে দিতে হত ১০০ টাকা। এখন সেটা বেড়ে করা হয়েছে ২ হাজার টাকা।
◆প্রথম ডিভিশন থেকে পঞ্চম ডিভিশনের ক্লাবগুলিকে এখন থেকে নতুন নিয়ম মেনে দিতে হবে ৫০০ টাকা (আগে দিতে হত ৫০ টাকা)। ◆ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। সিআরএ-এরও ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে।
◆অফিস স্পোর্টস ফেডারেশনের অ্যানুয়াল ফি ছিল ২৫০ টাকা। এবার থেকে বেড়ে হচ্ছে ১ হাজার টাকা। ওয়েষ্ট বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ফেডারেশনের ফি ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১ হাজার টাকা।