ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : আইএফএ-এর ইচ্ছে ছিল আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসে ২০২০ মরসুমের কলকাতা লিগ করার। কিন্তু গত বছরের লিগ করা সম্ভব নয়। তার বড় কারণ হল,আগামী এপ্রিল মাসে বিধান সভা নির্বাচন। কোনও ম্যাচেই পুলিশ পাওয়া যাবে না। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে রাজ্যে অস্থিরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় লিগ করা সম্ভব নয়। তাই ২০২১ মরসুমের লিগটাই করা হবে। তবে ফুটবলের চর্চা রাখতে ফুটসল টুর্নামেন্ট করতে চলেছে আইএফএ। গত শুক্রবার (২২ জানুয়ারি ) আইএফএর ফুটসল কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়, প্রিমিয়ার, প্রিমিয়ার এ এবং প্রথম ডিভিশনের মোট ১৬টা দল নিয়ে এই ফুটসল টুর্নামেন্ট করার চেষ্টা চলছে। আগামী পয়লা বৈশাখের দিন ফুটসল শুরু করার প্রাথমিক ভাবে ভেবে রেখেছে আইএফএ। চারটি গ্রুপে চারটি করে দল খেলবে। লিগ কাম নক আউট খেলা হবে। শহর কলকাতার চারটি মাঠে খেলা হতে পারে। দুজন বিদেশি সই করানোর অপশন থাকবে। ম্যাচে খেলাতে পারবে মাত্র একজন বিদেশি।
ফুটসল কমিটির চেয়ারম্যান ত্রিজিত দাস জানান, “আমাদের একটা মিটিং হয়েছে। জয়দীপদা আবার আমাদের সঙ্গে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে আলোচনায় বসবেন। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে আইএফএ।” উল্লেখ্য, ফুটসল টুর্নামেন্ট কমিটিতে আছেন, তপনজ্যোতি মিত্র, দীপ্তিকল্যাণ সেনশর্মা, কাশীনাথ সেন, সুবীর লাহিড়ী, রঞ্জিত দাস, রাজদীপ নন্দী। বৈঠকে কমিটির চেয়ারম্যান ত্রিজিত দাস বলেন, তিন প্রধানকে এই ফুটসলে অংশ গ্রহণ করাতে পারলে টুর্নামেন্টের ওজন বেড়ে যাবে। কাজেই মোহনবাগান,ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডানকে যাতে ফুটসলে খেলানো যায়, সেই চেষ্টা করবে আইএফএ।
আইএফএ-এর ইতিহাসে এই প্রথম ফুটসল নয়। সুব্রত দত্ত যখন আইএফএ-এর সচিব ছিলেন তখন তিনি অফিস দলগুলিকে নিয়ে কলকাতায় প্রথম ফুটসল টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলেন। তখন ওই ফুটসল টুর্নামেন্টের জন্য টিভিএস মোটর কোম্পানিকে প্রধান স্পনসর হিসেবে এনেছিলেন সুব্রত দত্ত। সেই বছরই সুব্রতবাবুর সচিব হিসেবে শেষ বছর ছিল। পরের বছর নতুন সচিব হয়ে এসেছিলেন উৎপল গাঙ্গুলি। আর সেই বছর থেকেই ফুটসল বন্ধ হয়ে যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পযর্ন্ত আইএফএ-সচিব থাকাকালীন সুব্রত দত্ত ছোট,বড় মিলিয়ে ২৭ টি স্পনসর এনেছিলেন। সেই সঙ্গে শুরু করেছিলেন বন্ধ হয়ে যাওয়া একাধিক টুর্নামেন্ট (যেমন, রাজ্য লিগ,বঙ্কিম কাপ,ইলিয়ট শিল্ড, ট্রেডস কাপ, পাড়া ফুটবল, আদিবাসী ফুটবল,সুপার সকার, স্কুল ফুটবল ইত্যাদি)।
উৎপলবাবু সচিব পদে বসার পর ট্রেডস কাপ ছাড়া বাকি টুর্নামেন্ট গুলি বন্ধ হয়ে যায়। ১২ বছর উৎপল গাঙ্গুলি সচিব পদে ছিলেন। তারপরেই ‘দত্ত পরিবারে’-র সমর্থনে নতুন সচিব পদে বসেন হোর্ডিং ব্যবসায়ী জয়দীপ মুখার্জি। উৎপল গাঙ্গুলি জমানায় বন্ধ হয়ে যাওয়া টুর্নামেন্ট গুলি ফের চালু করাটাই জয়দীপের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার জন্য এই বছর সেই সব বন্ধ হয়ে যাওয়া টুর্নামেন্ট গুলি শুরু করা সম্ভব হয়নি যেমন ঠিক, তেমনি গত জুলাই মাসে ঘটা করে ঘোষনা করা স্ট্রাইকার অ্যাকাডেমি এখনও শুরু করতে পারেননি জয়দীপ। আইলিগ, শিল্ড করা হয়েছে এবং ফুটসল করা নিয়ে যখন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট তনুময় বসুর এলাকায় (সচিব জয়দীপের ঘোষনা মতে) এখনও কেন স্ট্রাইকার অ্যাকাডেমি শুরু করা গেল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যে কয়েকজন প্রাক্তন ফুটবলারদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে এক প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার (নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ) ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-কে বলছিলেন,”প্রথম মিটিংয়ের শেষে ফোন করে জানতে চেয়েছিলে। তোমাদের বলেছিলাম, এরা ঠান্ডা ঘরে বসে আলোচনা করবে। কাজের কাজ কিছু হবে না। আমার কথা মিলে যাচ্ছে তো!”
বাংলার আর এক প্রাক্তন গোলরক্ষক বলছিলেন,”ফুটসল করে কোনও লাভ হবে? কয়েক বছর আগে মুম্বইতে বিশাল করে ফুটসল করা হয়েছিল। রোনাল্ডিনহো, গিগসরা খেলতে এসেছিল। তবু ফুটসলটা ফ্লপ করেছিল। যাই বলো ভাই, ফুটসল বাংলার ফুটবল প্রেমিদের আকর্ষন করেনি, করবেও না।”
এই দুই প্রাক্তনদের কাছে আমাদের প্রশ্ন ছিল, আপনারা, জয়দীপকে কেন বলছেন না? নিজের নাম গোপন রেখেই বা বিবৃতি দিচ্ছেন কেন? উত্তরে সেই দুই প্রাক্তন বলেন, “কোনও কিছু বললেই তো বলবে প্রাক্তনরা বাধা দিচ্ছে। আমরা নাকি কিছুই করি না। আরে বাবা ফুটবলের জন্য কিছু করতে চাই বলেই তো জয়দীপের ডাকে যায়। কিন্তু যখন কিছু হয় না তখন খারাপ লাগে। এখনই নিজের নাম বলতে চাই না। সময় তো পড়ে আছে।”
উল্লেখ্য, ২০২০ সালেই এআইএফএফ ফুটসল ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নশিপ হওয়ার কথা ছিল শিলংয়ে। ভারতের মোট ১৬ টা দল নিয়ে এই ফুটসল টুর্নামেন্টের আয়োজক ছিল এআইএফএফ। কিন্তু করোনার জন্য স্থগিত হয়ে গিয়েছে। সেই জায়গায় আইএফএ ফুটসল করতে পারলে বাংলার ফুটবল প্রেমিরা কতটা গ্রহণ করবে তা সময়ই বলবে।