তিন দশক পর ফের ইস্টবেঙ্গলে আসলাম,ঘাউস,মুন্না পত্নী

0

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : সোমবার ঘরের মাঠে ইস্টবেঙ্গল-উয়াড়ী ম‍্যাচ দেখছিলেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য,বিকাশ পাঁজি। সঙ্গে গাল ভর্তি দাড়ি,মাথায় সাদা টুপি এক মুসলিম ভদ্রলোক। ইস্টবেঙ্গল মাঠে আসা নতুন প্রজন্ম বুঝতেই পারল না সেই ভদ্রলোক কে? তিন দশক আগে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন আসলাম,মুন্না,রুমি। ১৯৯১ সালে ইস্টবেঙ্গল অপরাজেয় ভাবে লিগ জিতেছিল শুধু তাই নয়, সেই বছর লিগে একটাও গোল খায়নি ইস্টবেঙ্গল। এই লিগ জয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এই ত্রয়ীর বড় ভূমিকা ছিল।

১৯৯১ সালে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুর লনে আসলাম,মুন্না ও রুমি (ফাইল ছবি)

মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ১০৪ তম প্রতিষ্ঠা দিবস। আর এই দিনটাকে স্মরণীয় করতে বাংলাদেশের এই ফুটবলার ও তাদের পরিবারের সদস‍্যদের সংবর্ধনা দিতে চলেছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। আর প্রতিষ্ঠা দিবসের একদিন আগেই ইস্টবেঙ্গল শিবিরে যেন মিলন মেলা। অনেক বছর আগেই মুন্নার মৃত‍্যু হয়েছে। তাই তাঁর স্ত্রী ও পুত্রকে কলকাতায় নিয়ে এসেছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। রুমি আসতে পারেননি। তবে আসলামের সঙ্গে সপরিবারে এসেছে আর এক ফুটবলার ঘাউস। এঁদের প্রত‍্যেককে বরণ করে নেন ক্লাব কর্তারা।

ইস্টবেঙ্গল-উয়াড়ী ম‍্যাচের শেষে বিকাশ, মনোরঞ্জনের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন আসলাম

কত স্মৃতি মনে পড়ছিল আসলামের। মাঠে দাঁড়িয়ে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে আসলাম বলছিলেন,”আমার যতদুর মনে পড়ছে, জর্জটেলিগ্রাফের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে ওদের গোলকিপার আমাকে এমন মারল যে রক্তাত হয়ে হাসপাতালে যেতে হল।” পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আসলামের স্ত্রী বলতে শুরু করলেন,”জানেন তো, সেই বছর ইস্টবেঙ্গলে খেলতে এলেন। আমি মা হলাম। তারপরেই খবর এলো আসলাম চোট পেয়ে বেলভিউ নার্সিং হোমে ভর্তি। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই বাংলাদেশ আসেননি। লিগ জেতার পর বাংলাদেশ এসে ২১ দিন পর প্রথম নিজের সদ‍্যজাত কন‍্যা সন্তানের মুখ দেখেছিলেন। তখন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের উপর খুব রাগ হয়েছিল। এখন ভাবি আসলাম ঠিক করেছিল। দলকে চ‍্যাম্পিয়ন করে তবে দেশে ফিরেছিল। ভাল লাগছে এত বছর পরও ইস্টবেঙ্গল আমাদের ভুলে যায়নি।”

ম‍্যাচের সেরার উপহার তুলে দেওয়ার দায়িত্ব আসলামকেই সামলাতে হল

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ গিয়ে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন এই প্রতিবেদক ও সিনিয়র চিত্র সাংবাদিক বিকাশ সাধু। সস্ত্রীক আসলামকে স্মরণ করাতেই বলে উঠলেন ‘মনে পড়েছে। কিন্তু আর কেন আসছেন না? বিকাশদা কোথায়? আমাদের কোনও ছবিই বাদ দিতেন না। অসাধারণ মানুষ ছিলেন তিনি।” বিকাশ সাধুর মৃত‍্যুর খবর দেওয়ার পর গম্ভীর হয়ে গেলেন সস্ত্রীক আসলাম। প্রসঙ্গত,বিকাশ সাধুর তোলা ছবি আসলামের ড্রয়িং রুমে এখনও শোভা পায়।

ততক্ষনে তাঁর কাছে পৌঁছে গিয়েছেন ভাস্কর গাঙ্গুলি, বিকাশ পাঁজি,মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। তারও পরে পৌঁছে যান অমিত ভদ্র,অলোক মুখার্জি, প্রশান্ত ব‍্যানার্জি, অমিত দাসরা। কলকাতার ফুটবল নিয়ে বলতে গিয়ে আসলাম বলছিলেন, “বিদেশিহীন লিগ করে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন দারুন একটা কাজ করেছে। এটা আমাদের দেশে করা উচিত।”

বাংলাদেশের ফুটবল উন্মাদনা কি আগের মতোই আছে? ঢাকা মহমেডান, আবহনী, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, মুক্তিযোদ্ধার খবর কি? উত্তরে আসলাম হতাশ হয়ে বলছিলেন,”আমাদের দেশের ফুটবলকে ঘিরে আগের মতো উন্মাদনা নেই। নতুন প্রজন্মরা সব ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকছে। তরুণ সমাজকে ফুটবল মুখী করার জন‍্য সেই ভাবে পদক্ষেপ করছে না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। আরও খারাপ খবর হল,আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে আমাদের ফুটবল সংস্থাও ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এসবের মধ‍্যে একমাত্র বসুন্ধরা এগিয়ে চলেছে সবাইকে টেক্কা দিয়ে।”

মনোরঞ্জনের সঙ্গে হারুন রশিদ, গায়িকা মেহেরিন মাহমুদ এবং প্রয়াত মুন্নার স্ত্রী ইয়াসমিন মোনেম

প্রয়াত মুন্নার স্ত্রী ইয়াসমিন মোনেম বলছিলেন,”আমার স্বামী যখন কলকাতায় খেলতে আসেন তখন আমাদের বিয়ে হয়নি। আমাদের বিয়ের বয়স মাত্র ১২ বছর। তারপরেই ও চলে গেলেন। আমার স্বামী কতবড় ফুটবলার ছিলেন সেটা বুঝেছি ওর মৃত‍্যুর পরে। বিশ্বাস করুন,এত বছর ইস্টবেঙ্গল,
এখানকার সংবাদমাধ‍্যম আমাদের মনে করছেন, সম্মান দিচ্ছেন এটা ভাবতেই পারছি না। ”

এঁদের সঙ্গেই এসেছেন হারুন রশিদ। পল্টু দাসের খুবই ঘনিষ্ট। আবাহনী ক্লাবের প্রাক্তন সচিব। ইস্টবেঙ্গলের যেমন পল্টু দাস ঠিক তেমনি আবাহনীতে হারুন রশিদ। তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে এসেছেন শুধু ইস্টবেঙ্গল কর্তারা ডেকেছেন বলেই। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বলছিলেন,”আমি,ভাস্কর আর চিমা একবার বাংলাদেশে খেলতে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশের মানুষ আতিথেয়তায় ভরিয়ে রেখেছিলেন। সেই সব স্মৃতি কখনও ভুলব না।”

আসলামের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রশান্ত ব‍্যানার্জি ও অলোক মুখার্জি

মঙ্গলবার বিকেল আরটের সময় ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে শুরু হবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ১০৪ তম প্রতিষ্ঠা দিবসের মূল অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানেই বাংলাদেশের মেহমানদের সংবর্ধনা দেবেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। এই অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের গায়িকা মেহেরিন মাহমুদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here