ডালহৌসির সচিব পদে হ‍্যাটট্রিক লাল্টুর, নতুন সভাপতি পার্থ সারথী গাঙ্গুলি

0

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : শতাব্দী প্রাচীন ডালহৌসি অ‍্যাথলেটিক ক্লাবের সচিব পদের নির্বাচনে জিতে হ‍্যাটট্রিক করলেন লাল্টু দাস। ক্লাব নির্বাচনে পর পর তিনবার সচিব পদে প্রার্থী হয়ে অনায়াস জয় লাভ করে হ‍্যাটট্রিক করলেন মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার লাল্টু। এই ক্লাবে প্রথম সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আইএফএ-এর প্রাক্তন সহসভাপতি ও উদ‍্যোগী বাঙালি পার্থসারথী গাঙ্গুলি।

গত রবিবার ডালহৌসি ক্লাবের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। মোহনবাগান,ইস্টবেঙ্গল ক্লাব নির্বাচন ঘিরে বাংলার ক্রীড়া মহলে উত্তেজনা শুরু থেকেই থাকে। সেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা ময়দানে। ডালহৌসি ১৪৩ বছরের ক্লাব। তাদের নির্বাচন ঘিরে বাংলার ক্রীড়া মহলে সেই উত্তেজনা থাকে না ঠিকই,কিন্তু গড়ের মাঠে ভয়ঙ্কর একটা চাপা উত্তেজনা থাকেই। এবারও ছিল। নির্বাচনের প্রায় দুই তিন মাস আগে থেকেই নির্বাচনের লড়াইয়ে নেমে পড়েন শাসক-বিরোধী গোষ্ঠীরা। এবারও তার ব‍্যতিক্রম হয়নি।

এবারের ডালহৌসি ক্লাবের নতুন চমক অবশ‍্যই পার্থসারথী গাঙ্গুলির সভাপতি হওয়া। ২০২১ সালে তিনি ক্লাবের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে সভাপতি প্রার্থী পদে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়েছিলেন পার্থবাবু। এবছর তৈরি হয়েই নির্বাচনের আসরে নেমেছিলেন ক্রীড়া সংগঠক পার্থসারথী গাঙ্গুলি। গত বছর যার কাছে তিনি হেরেছিলেন সেই নীলাদ্রি দাসকে হারিয়েই বাজিমাত করে এবার সভাপতি পদে নির্বাচিত হলেন পার্থবাবু।

অন‍্যদিকে লাল্টু দাস গত আট বছর ধরে কমিটিতে আছেন। ২০২১,২০২২ এবং এই বছর (২০২৩) পরপর তিন বছর ডালহোসির সচিব হলেন। তাঁর বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়েছিলেন সেই জয়দীপ মিত্র ও রজত কুমার সিংকে বড় ব‍্যবধানে হারিয়ে বাজিমাত করলেন লাল্টুবাবু। প্রসঙ্গত, এবছরই সচিব হিসেবে তাঁর শেষ টার্ম।

এবারের ডালহৌসি ক্লাবের নতুন কমিটি হল – ▪সভাপতি -পার্থসারথী গাঙ্গুলি ▪সহসভাপতি – সুপ্রিয় কুমার বাগচি, ▪সচিব – লাল্টু দাস,▪ কোষাধ‍্যক্ষ – প্রণবেন্দ্রনাথ মৈত্র, ▪সহসচিব – কৌশিক সেনগুপ্ত। এছাড়াও চার কমিটি সদস‍্য হলেন, সিদ্ধার্থ রায় (পপ),পি ভি বৈদ‍্যনাথন,ডঃ রাজু বিশ্বাস এবং অমিতাভ চ‍্যাটার্জি।

এক ঘরোয়া আড্ডায় প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য বলছিলেন,”ডারহৌসি ক্লাবে আমি খেলিনি ঠিকই, তবে এই ক্লাবের ইতিহাস,ঐতিহ‍্য বিরাট।” তিনি ঠিকই বলেছেন। সত‍্যিই বিরাট ইতিহাস। ১৪৩ বছরের ডালহৌসি কলকাতা ফুটবল লিগ জিতেছে ৪ বার(১৯১০.১৯২১.১৯২৮.১৯২৯)।
ডালহৌসি সাহেবদের ক্লাব ছিল। আর সেই কারণেই এই ক্লাবে আছে বিরাট দুটি লন টেনিস কোর্ট। আছে ক্রিকেট টিমও। এই ক্লাবেই ইন্ডোর গেমে আছে বিলিয়র্ডস, ডার্ট,ব‍্যাডমিন্টন খেলার চল। আর আছে সুন্দর গোছানো বার। সাহেব কালচারটাও ধরে রাখার চেষ্টা।

কলকাতার পুরনো ক্লাব কোনটা? ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে পুরনো ক্লাব হল সিসিএফসি। ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত। ঠিক সেই সময় আজকের মহাকরণের উল্টোদিকে লালদীঘির ধারে আড্ডা মারতেন কিছু ইংরেজ যুবক। তাদের কাছে ফুটবল খেলা ছিল একটা বিনোদন মাত্র। ১৮৭৮ সালে সেই ইংরেজ যুবকরা তৈরি করেছিলেন ডালহৌসি ইনস্টিটিউট। দুই বছর পর,১৮৮০ সালে ক্লাবটি ভাগ হয়ে গেল। ডালহৌসি ইনস্টিটিউট চলে গেল ঝাউতলা রোডে। আর মেয়ো রোডের মুখে তৈরি হয়েছিল ডালহৌসি অ‍্যাথলেটিক ক্লাব। এগিয়ে চলেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, নিজের মতো করে।

তবে গত বছর ফুটবলে প্রিমিয়ার ‘বি’ গ্রুপে উঠলেও এই বছর লিগে মুখ থুবড়ে পড়েছে ডালহৌসি অ‍্যাথলেটিক ক্লাব। কোচ মৃদুল ব‍্যানার্জিকে কোচ করে আনা হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত ব‍্যর্থ হয়েছেন। কোচিং করার থেকে কর্তাদের সমালোচনা, ফুটবলারদের সমালোচনা আর সারাক্ষণ দল নিয়ে ‘কান্নাকাটি’ করা নেতিবাচক মানসিকতার কোচ রাখলে, দল যে বেশি দুর এগোতে পারে না, তার জন‍্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন হয় না। যার জন‍্য এই ক্লাব আজও মেয়ো রোডের মুখে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সেই খেলা (ফুটবল, ক্রিকেট)কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেটাই হবে ডালহৌসি অ‍্যাথলেটিক ক্লাবের নতুন কমিটির কাছে নতুন পরীক্ষা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here