ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিদিন : মোহনবাগান ক্লাবে অমর একাদশের মূর্তি উন্মোচন প্রশংসনীয়। তবে তার মধ্যেও বিতর্কর সৃষ্টি হয়েছে। দুই একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণেই এই বিতর্কর সৃষ্টি হয়েছে। নাম না করে মোহনবাগানের বর্তমান সচিব দেবাশিষ দত্তর বিরুদ্ধেই অভিযোগটা উঠছে।
চুনী গোস্বামীর পর শিশির ঘোষ হলেন মোহনবাগানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। ১০ বছর মোহনবাগানে খেলেছেন মাথা উঁচু করে। চারবার অধিনায়ক ছিলেন। অসীম মৌলিক, চুনী গোস্বামী,সুভাষ ভৌমিকদের পর সফল বাঙালি স্ট্রাইকার শিশির। শিশিরের পর আর কোনও বাঙালি স্ট্রাইকার সেই ভাবে দাগ কাটতে পারেননি। অমর একাদশ মূর্তি উন্মোচনের অনুষ্ঠানে সেই শিশির ঘোষ ব্রাত্য। কোনও আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়ে সৌজন্য টুকু দেখাননি মোহনবাগানের বর্তমান কর্তারা।
এই ব্যাপারটাই মেনে নিতে পারছেন না শিশির ঘোষ। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা যায়নি। কেন এলেন না তিনি?প্রশ্ন করলে শিশির ঘোষ ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে জানান,”আমাকে মোহনবাগান থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বিনা নিমন্ত্রণে আমি যাব কেন?” কিন্তু অনুষ্ঠানের শেষে মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কাশীনাথ দাস নাকি আপনাকে ফোন করে অনুষ্ঠানে আসতে বলেছিলেন? এবার যেন সেই পুরনো শিশিরকে দেখা গেল। “কেউ একজন ডাকলেই যেতে হবে? ক্লাবের কোনও পদাধিকারী তো আমাকে আমন্ত্রণ পত্র পাঠায়নি? অনেককেই তো পাঠিয়েছে। ক্লাবের শতবর্ষে আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম, চারবার ক্যাপ্টেন হয়েছি। চুনীদার পর আমিই ক্লাবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। আরও একটু সম্মান আমার প্রাপ্য। যারা ক্লাবের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত নয়, কোনও ভূমিকা নেই তারাই দেখছি মঞ্চ আলো করে আছেন। খারাপ লাগে। আমি যতদুর জানি ক্লাবের সভাপতি পদে থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার জন্য টুটুদা ক্লাব প্রশাসনে সক্রিয় নয়। অঞ্জনদা বেঁচে নেই। টুটুদা,অঞ্জনদার সময় এই অনুষ্ঠান হলে এমনটা ঘটত না। তাঁরা যোগ্য ব্যক্তিত্বদের যোগ্য সম্মান জানাতেন।” বেশ বিরক্ত হয়েই কথা গুলি বলছিলেন ক্ষুব্ধ শিশির ঘোষ।
নাম মুখে না নিলেও শিশির ঘোষের অভিযোগ যে দেবাশিস দত্তর দিকেই তা পরিস্কার। শুধু তায় নয়, অমর একাদশের মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, গায়িকা লোপামুদ্রা মিত্র এবং এক মহিলা সাহিত্যিককে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ শিশির ঘোষের মত ফুটবলারকে ডাকাই হল না। তাই নিয়ে মোহনবাগানের একটা বড় অংশ ভাল ভাবে নিচ্ছে না।
গত বুধবার দুপুরে পার্ক স্ট্রিটের এক রেস্তোরাঁয় একান্ত আলাপচারিতায় এই প্রতিবেদককে সুব্রত ভট্টাচার্য বলেছিলেন,”মোহনবাগান কর্তাদের এই অমর একাদশের মূর্তি উন্মোচন করার সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু শুধু সৌরভ গাঙ্গুলিকে দিয়ে উদ্বোধন করাটা ঠিক সিদ্ধান্ত নয়। সৌরভ আমাদের আইকন। ওঁর সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক। সৌরভের তো এতে দোষ নেই। ক্লাব কর্তাদের ভাবনার বিষয় এটা। মোহনবাগান পরিচিত ফুটবলের জন্যই। এটা ভুলে গেলে চলবে না।”
সৌরভকে দিয়ে কেন অমর একাদশ মূর্তি উন্মোচন? এই নিয়ে বিস্তর সমালোচনা চলছিলই। সেই সমালোচনায় জল ঢেলে দিয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। বৃহস্পতিবার পর্দা সরিয়ে অমর একাদশের মূর্তি উন্মোচনের জন্য রিমোটটি সৌরভের হাতে দেওয়া হয়। বুদ্ধিমান সৌরভ সেই রিমোর্ট দিয়ে দিলেন পাশে থাকা সুব্রত, প্রসূন,গৌতম সরকারদের। একক ভাবে সৌরভ অমর একাদশের উন্মোচন করেননি। মোহনবাগানের এক ঝাঁক প্রাক্তনদের সঙ্গে নিয়েই উন্মোচন হয় শুধু মাত্র সৌরভের জন্যই। মোহনবাগান মানেই ফুটবল। সেটা জানেন বলেই সৌরভ গাঙ্গু, সুব্রত-গৌতমদের সম্মান জানিয়ে উন্মোচন পর্ব সারেন। এই সুক্ষ্ম পালসটা সৌরভ বুঝলেন। দেবাশিস দত্ত বুঝলেন না!
এদিকে, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানের শেষে মোহনবাগান সচিব দেবাশিষ দত্ত সাংবাদিকদের জানান,”বিতর্ক করতে চায়লে বিতর্ক করতেই পারেন। আমার কিছু করার নেই। আমাদের কাশীনাথ দাস শিশিরকে ফোন করে আসতে বলেছিলেন। তার কাছে কার্ড গিয়েছে। হয়তো ব্যক্তিগত কারণে আসতে পারেনি। শিশিরের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল।”
অন্যদিকে শিশির জানান,”আমার কাছে কোনও আমন্ত্রণ আসেনি। যে কেউ ফোন করলে যাব কেন?”