জয়দীপের মিথ‍্যাচার আমাকে কষ্ট দিয়েছিলঃ অজিত ব‍্যানার্জি

0

◆সন্দীপ দে◆

সাধারণত তিনি সংবাদমাধ‍্যম থেকে ১০০ হাত দুরে থাকেন। কোনও বিতর্ক চান না। ইস্টবেঙ্গল এবং মুখ‍্যমন্ত্রী যোগাযোগের সেতু তৈরি করে দিয়েও তিনি প্রচারের আড়ালেই নিজেকে রেখেছেন সচেতন ভাবে। তিনি মুখ‍্যমন্ত্রীর বড়দা অজিত ব‍্যানার্জি। আইএফএ-এর সভাপতি। প্রায় একমাস ধরে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর এই উটকো সাংবাদিকের অনুরোধ ফেলতে পারেননি ময়দানের ‘ষষ্ঠীদা’। অবশেষে অজিত ব‍্যানার্জির এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ ‘ইনসাইড স্পোর্টস’য়ে। পঞ্জাব স্পোর্টস ক্লাব তাঁবুতে বসে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন খোলা মনে।

প্রশ্নঃ IFA একটা অস্থিরতার মধ‍্যে দিয়ে চলছে। কিন্তু ফুটবলার, আম কর্তা থেকে ফুটবল দর্শকদের এখন একটাই প্রশ্ন জুন মাস চলছে। এবার পূর্ণ ফুটবল লিগ হবে তো?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ করোনার কারণে ২০২০ তে লিগ হয়নি। ২০২১ শুধু প্রিমিয়ার লিগ হয়েছিল। তাও মোহনবাগান,ইস্টবেঙ্গল ছাড়া। এটুকু বলতে পারি, এবার কিন্তু পূর্ণ লিগ হবে। জমজমাট ভাবেই হবে। তবে এবারের লিগ আমাদের কাছে বিশেষ চ‍্যালেঞ্জের লিগ।

প্রশ্নঃ চ‍্যালেঞ্জের লিগ কেন?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ দুই বছর পর এবার পূর্ণ লিগ হবে। আর জয়দীপ এমন একটা সময় চলে যাচ্ছে যখন লিগ শুরুর মুখে। তাই বলে বসে থাকলে তো চলবে না। সময়ের নিয়মে লিগ শুরু হবে,শেষও হবে। পাশাপাশি বড় চ‍্যালেঞ্জের কারণ হল, বয়স ভিত্তিক লিগ। শুরুতে একটু সমস‍্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু আমরা শক্তহাতেই সুষ্ঠুভাবে বয়স ভিত্তিক লিগটা সম্পন্ন করতে পারব।

প্রশ্নঃ শুনেছি,এই বয়স ভিত্তিক লিগ করার প্রথম প্রস্তাবটা আপনিই দিয়েছিলেন?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ উৎপল গাঙ্গুলি যখন সচিব ছিলেন তখন একটা মিটিংয়ে বয়স ভিত্তিক লিগ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিছু বাধা এসেছিল। পরে উৎপলবাবু রাজি হয়েও বলেছিলেন,’আমি তো আর কটা দিন আছি। তারপর না হয় করবেন।’ পরে জয়দীপ সচিব হওয়ার পর আমার বাড়িতে এসেছিল। তার কাছে আমার আর্জি ছিল,বয়স ভিত্তিক লিগ করা। জয়দীপ কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছিল। করোনার কারণে গত দুই বছর শুরু করা যায়নি। এবছর শুরু হবে।

প্রশ্নঃ হঠাৎ বয়স ভিত্তিক ফুটবল লিগ করার ভাবনা আপনার এলো কেন?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ আগে ভারতীয় দলে একাধিক বাংলার ফুটবলার থাকত। এখন কয়জন আছে? সামগ্রিক বাংলাকে লিগে ইনভলভড করাতে না পারলে আরও খারাপ অবস্থা হবে। বয়স ভিত্তিক লিগ হলে সারা পশ্চিমবঙ্গের কোচিং ক‍্যাম্পের গুরুত্ব বেড়ে যাবে। বড় মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ পাবে। উঠে আসবে বহু প্রতিভা। কোয়ান্টিটি না হলে কোয়ালিটি আসবে না। এসব মাথায় রেখেই বয়স ভিত্তিক লিগের ভাবনা এসেছিল।

প্রশ্নঃ বয়স ভিত্তিক লিগের পাশাপাশি আপনি আরও একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তা হল জেলার ফুটবলারদের কলকাতায় থাকার জায়গা ছিল না। এবার সেই ব‍্যবস্থাও করে ফেলেছেন। আইএফএ-এর ইতিহাসে যা প্রথম ঘটতে চলেছে। এটা কি করে সম্ভব হল?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ হয়তো ভেবেছি ঠিকই কিন্তু এর কৃতিত্ত্ব আমি দিতে চাই আমাদের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে। তাঁকে বলেছিলাম যদি যুবভারতীতে দুরের জেলার ফুটবলারদের থাকার ব‍্যবস্থা করা যায় তাহলে আইএফএ,ক্লাব,ফুটবলাররা – সবাই উপকৃত হবে। ক্রীড়ামন্ত্রী প্রস্তাব শোনার পর সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যায়। ক্রীড়ামন্ত্রীর সাহায‍্য ছাড়া সম্ভব হত না।

প্রশ্নঃ আপনি সেই ১৯৭০ সাল থেকে মাঠ করছেন। প্রায় ৫২ বছর। আপনি কম কথা বলেন। ২০১১ সালে আপনার বোন মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় মুখ‍্যমন্ত্রী হলেন। আপনি তো ইচ্ছে করলেই ময়দানে একটা দল করতে পারতেন। পুরো ময়দানকে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারতেন। সেটা করলেন না কেন?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ দেখো, মাঠ করতে এসেছি ফুটবলকে ভালবেসে। আইএফএ একটা প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সবার সাহায‍্যে ফুটবলের উন্নয়ন হলে আর কি চায়? আমি কখনও দল করার কথা ভাবিনি। নিজের প্রচারও চাই না।

প্রশ্নঃ প্রচার চান না বলেই কি ইস্টেবঙ্গলের কঠিন সময়ে দেবব্রত সরকার ও মুখ‍্যমন্ত্রীর যোগাযোগের সেতুর কাজ করেও নিজেকে আড়ালে রেখে দিয়েছেন?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ এখানে আমার কোনও ভূমিকা নেই। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব মুখ‍্যমন্ত্রীর কাছে গিয়েছে। ভারতীয় ফুটবলে ইস্টবেঙ্গল,মোহনবাগান ও মহমেডান হল অলঙ্কার। সেই জায়গায় থেকে মুখ‍্যমন্ত্রী ইস্টবেঙ্গলের পাশে থেকেছে সে তো ভাগ‍্যের ব‍্যাপার। ইস্টবেঙ্গল যদি আজ পাড়ার কোনও বালক সংঘ ক্লাব হত,তাহলে নিশ্চয় মুখ‍্যমন্ত্রী এগিয়ে আসতো না। তাই আবার বলছি এখানে আমার কোনও ভূমিকা নেই। ইস্টেবঙ্গলের ইতিহাসই বড় ভূমিকা।

প্রশ্নঃ আপনার দুই ভাই কার্তিক ব‍্যানার্জি ও স্বপন ব‍্যানার্জিকে কখনও সখনও রাজনৈতিক মিটিং মিছিলে দেখা গিয়েছে। কিন্তু আপনাকে কখনও রাজনৈতিক মিটিং -মিছিলে দেখা যায়নি। আপনি রাজনীতিতে এলেন না কেন?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ আমি একটা রাজনৈতিক দলের পরিবারের সদস‍্য এটা ঠিক। কিন্তু কখনও সক্রিয় রাজনীতি করিনি। তবে যেহেতু আমার বোন একটা রাজনৈতিক দলের নেত্রী। রাজ‍্যের মুখ‍্যমন্ত্রী তাই বোনের সঙ্গে থাকতেই হবে। আফটার অল মমতা তো আমার বোন। কিন্তু এটাও তোমায় জানিয়ে রাখি,আমার পক্ষে সক্রিয় রাজনীতি করা সম্ভব নয়।

প্রশ্নঃ অজিতদা, আইএফএ সচিবের পদ থেকে জয়দীপ মুখার্জির চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কি প্রভাব ফেলবে?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ , লোক চলে যায়,প্রতিষ্ঠান থেকে যায়। ১২৯ বছরের প্রতিষ্ঠানে কত লোক এসেছে,আবার চলেও গিয়েছে। কেউ অপরিহার্য নয়। কোনও প্রভাব পড়বে না।

প্রশ্নঃ নাম না করে একটা প্রশ্ন করছি। ময়দানের জনৈক নবাগত এক সুদর্শন কর্তা একে অপরের বিরুদ্ধে কিছু মিথ‍্যে কথা বলে আপনার আর সুব্রত দত্তর সম্পর্ক খারাপ করতে চেয়েছিলেন। শোনা যায়,কোনও এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও এমনটা হয়েছিল। এই ধরনের কর্তার কাছে কি বার্তা দিতে চান?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ (কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকার পর) সন্দীপ,তোমার এই প্রশ্নর উত্তরে কাউকে বার্তা দিতে চাই না। একটা কথায় বলব,এই ধরনের কর্তাদের আমি ঘৃণা করি।

প্রশ্নঃ নিন্দুকেরা বলে থাকে সুব্রত দত্ত আর অজিত ব‍্যানার্জি একটা সময় দুজনে দুই মেরুতে অবস্থান করেন। এই অভিযোগ কতটা সত‍্যি?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ আমরা দুই মেরুতে অবস্থান করি? দেখো, এক সঙ্গে কাজ করতে হলে মত পার্থক‍্য হতে পারে। মতান্তর থাকতে পারে কিন্তু মনান্তর কোনওদিনই হয়নি। খোঁজ নিয়ে দেখো।

প্রশ্নঃ জয়দীপ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন,রাজ‍্য ফুটবল নিয়ামক সংস্থার ঢাল-তরোয়াল নেই। নিজেদের মাঠ নেই। শুধুই দৈন‍্যতা। আইএফএ-এর থেকে ক্লাবের ক্ষমতা বেশি। সচিব পদে বসে আইএফএকে ছোট করাটা মানতে পারছেন?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ জয়দীপ তার ব‍্যক্তিগত মন্তব‍্য করেছে। শুধু বলব,জয়দীপ যখন আইএফএতে এসেছিল তখন তো সব জেনেশুনেই এসেছিল। ও যেটা বলছে সেটা সমর্থন করি না। আমি যখন পদে আছি তখন দৈন‍্যতা তুলে না ধরে আমার উচিত হবে দৈন‍্যতা ঘোচানো। সেই দৈনতা ঘোচাতে না পারলে নিজের দোষ আছে ধরে নিতে হবে।

প্রশ্নঃ জয়দীপ একাধিকবার অনুযোগ করছেন?কোচকে নিজের পছন্দের প্লেয়ার না দিলে সেই কোচ মাঠে নামবে কেন?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ কোচকে সব সময় নিজের পছন্দ মত কাজ করতে দেওয়া হয়। কিন্তু যদি দেখা যায় কোচের সেই টিমে ঘাটতি আছে তাহলে বাইরে থেকে অনুরোধ করতেই পারে। এটাই তো সিস্টেম।

প্রশ্নঃ আপনার ৫২ বছরের ময়দানের জীবনে সব থেকে দূঃখের দিন কোনটা? মানে আমি বলতে চাইছি,কোন ঘটনায় সব থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছেন?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ গত বছর যেদিন আমাকে দোষারোপ করে জয়দীপ পদত‍্যাগ করেছিল। বলা হয়েছিল আমি নাকি বিতর্কিত মহিলা ফুটবলারটির কাগছে সই করেছিলাম। আজও আমি দেখিয়ে দিতে পারি সইটা জয়দীপ করেছিল। জয়দীপের এমন মিথ‍্যাচার আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল। হয়তো জয়দীপ ভুল করেই সই করেছিল। বহু ফুটবলারের ক্ষেত্রে সচিবকে সই করতে হয়। ভুল হতেই পারে। কিন্তু আমি যেখানেই সই করিনি অথচ আমাকে দোষারোপ করা হয়েছিল। ওই সময় অনেকেই অনেক কথা লিখেছিল। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি,সত‍্যিটা একদিন প্রকাশ পাবেই। সময় কথা বলে।

প্রশ্নঃ এবারের আইএফএ-এর কোষাধ‍্যক্ষ পদে অনির্বান দত্তকে সমর্থন করেছেন। অনির্বানের মধ‍্যে কি এমন দেখলেন যে তাঁকে সমর্থন করলেন?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ প্রদ‍্যোৎ দত্তকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমি যখন মাঠে ঘুরতাম। একদিন বললেন,”ষষ্ঠী,তুই আইএফএতে যাস না কেন?” তারপর থেকে কারণে অকারণে আইএফএ যাতায়াত শুরু করলাম। আর অনির্বান দত্ত প্রদ‍্যোৎদার ছেলে। কাজের ছেলে। অনির্বানকে ছাড়া আমার আর কাউকে মনে হয়নি সংশ্লিষ্ট পদে বসতে পারে। শোনো সন্দীপ,হিম সাগর গাছে হিমসাগর আমই হয়।”

অনির্বান দত্তর সঙ্গে অজিত ব‍্যানার্জি

প্রশ্নঃ এবার আইএফএ সচিব হিসেব আপনি কাকে চাইবেন?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ আমি অনির্বান দত্তর নামই প্রস্তাব করব। এই মুহূর্তে অনির্বানই একমাত্র ফিট ক‍্যান্ডিডেট। আমি চাই অনির্বান দত্তই সচিব হোক।

প্রশ্নঃ ময়দানে গুঞ্জন, আপনার ছোট ভাই বাবুন ওরফে স্বপন ব‍্যানার্জি নাকি আইএফএ সচিব পদে লড়াই করবেন?

অজিত ব‍্যানার্জিঃ সচিব পদ নিয়ে ভাই এমন ভাবনা চিন্তা করবে আমি তা বিশ্বাস করি না।

প্রশ্নঃ শনিবার আপনার জন্মদিন। ‘ইনসাইড স্পোর্টস’ -এর পক্ষ থেকে আপনাকে আগাম শুভেচ্ছা। খুব ভাল থাকবেন।

অজিত ব‍্যানার্জিঃ তোমরাও ভাল থেকো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here