সন্দীপ দে ◆
আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জির ইস্তফাকে ঘিরে বিদ্রুপে ভরে গিয়েছে ময়দান। এবার এই সচিবকে ব্যঙ্গ করে পোস্টার পড়ল খোদ আইএফএ অফিসের চত্বরেই। প্রমাণ সাইজের পোস্টারে জয়দীপের ছবি। তার নিচে লেখা -“আর একবার সাধিলেই থাকিবো।” পোস্টারটি দেখা যায় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে। বাস্তব সত্যটাই এই পোস্টারের মধ্যে উঠে এসেছে, যা এতদিন ‘ইনসাইড স্পোর্টস’ বলে এসেছে।
গত রবিবার আইএফএ সচিব পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর দু তিন জন রিপোর্টারকে সচিব বলেছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ফোন করে তাকে থেকে যেতে বলেছেন। অনেকের অনুরোধ ফোন আসছে বলেই সচিব পদে ফিরে আসছি, সেটাই একটা সময় বলবেন। সুতরাং জয়দীপের এই উদ্দেশ্যটা খুব সহজে বোঝা গিয়েছে বলেই পোস্টার পড়েছে ধরে নেওয়া যায়। জয়দীপের ইস্তফা দেওয়াটাই পুরোটাই নাটক। সেটা ক্রমশ প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। এর ফলে জয়দীপের নীরবতার আর কোনও দাম থাকল না। পদত্যাগ করেও যে, সচিব পদ ছাড়বে না তাতে এই উটকো সাংবাদিকের লেখাতেই প্রমাণ হতে যাচ্ছে।
জয়দীপের সচিব পদে ইস্তফা দেওয়ার নাটক ময়দানের কেন মনে হল? ৪টি কারণ আছে।
১) জয়দীপ গত রবিবার পদত্যাগ করার পর বললেন,তিনি নাকি স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারছেন না। অন্যায়ের আচরনের বিরুদ্ধে তাঁর নাকি প্রতিবাদ। ‘বিদ্রোহী’ সচিব প্রতিবাদ করলেন বটে কিন্তু সেই প্রতিবাদে ভাষা ছিল না। কে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না? কি অন্যায় আচরণ? তার ব্যাখ্যা করেননি জয়দীপ। এই প্রতিবাদ ভাষাহীন প্রতিবাদ ছাড়া আর কি।
২) ‘বিদ্রোহী’ সচিব ইস্তফা দিলেন। আর তা কার্যকর হবে চারমাস পর। ভাবা যায়? তিনি নাকি আই লিগ শেষ করে তবে দায়িত্ব ছাড়বেন। চূড়ান্ত হাস্যকর। এআইএফএফ কি জয়দীপকে আইলিগ ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে নাকি আইএফএকে দিয়েছে? আসলে পতদ্যাগের নাটক করে ‘বিদ্রোহী’ সচিব চারমাস সময়টা নিজের হাতে রাখলেন। জয়দীপ, নিজেকে সবার থেকে চালাক ভাবছেন ঠিক আছে কিন্তু ময়দানের অন্যদের বোকা ভেবে ভুল করছেন।
৩) ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা নীতু ওরফে দেবব্রত সরকার গত রবিবারই জয়দীপকে ওপেন চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,জয়দীপের অনুরোধেই পুলিশের বিরুদ্ধে রিপ্লে ম্যাচ খেলেছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলন করা হোক। সেখানে আইএফএ ও ইস্টবেঙ্গল ক্লাব থাকবে। কে ভুল, কে ঠিক সাংবাদিকরাই বিচার করবে। এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারেননি ‘বিদ্রোহী’ সচিব জয়দীপ। গোটা ময়দান দেখতে চেয়েছিল নীতু সরকারের চ্যালেঞ্জ জয়দীপ নিতে পারেন কিনা। প্রত্যাশা মতোই এড়িয়ে গিয়েছেন আইএফএ সচিব। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলে ধরা পড়ে যেতেন জয়দীপ।
৪) ‘বিদ্রোহী’ সচিবের পদত্যাগের পর কতিপয় ব্যক্তি আইএফএ অফিসে গিয়ে জয়দীপকে যেভাবে থেকে যাওয়ার জন্য অতি সক্রিয়তা দেখিয়েছেন, তাতে গড়ের মাঠে ঘুরে বেড়ানো গাধা গুলোও নাকি হেঁসে ফেলেছে। ময়দানের একটা বড় অংশ সেটা বুঝতে পেরেছে বলেই খোদ আইএফএ অফিস চত্বরেই পাল্টা পোস্টার পড়ল -“আর একবার সাধিলে থাকিবো।” এই পোস্টারের ফলে বোঝা গেল, সবাই জয়দীপের পাশে আছে’-এই কৌশলী বার্তা ঠিক তথ্য নয়। এত তাড়াতাড়ি পদত্যাগের নাটক করে চালে ভুল করে ফেলেছেন জয়দীপ।
জয়দীপ শুধু চারটি বছর নয়, তিনি পরের টার্ম অর্থাৎ সব মিলিয়ে টানা আরও সাত বছর আইএফএ সচিব পদে থাকতে চাইছেন। সমস্যা একটাই, ময়দানের একটা অংশ জয়দীপে মোহভঙ্গ হয়েছে।
কেন তিনি আরও সাত বছর থাকতে চাইছেন? কি ভাবে তিনি নেটওয়ার্ক সাজানোর চেষ্টা করছেন? কি তার উদ্দেশ্য? এর উত্তর বা ব্যাখ্যা “ইনসাইড স্পোর্টস” ঠিক সময়ে আলোকপাত করবে। শুধু এটুকুই জানিয়ে রাখি, সচিবের চেয়ারের স্বাদ বড়ই মধুর – “এ স্বাদের যে ভাগ হয় না।”