জয়দা ভাল মানুষ, বাপীদা চায়লে এখনই চলে যাব : জয়দীপ

0

◆সন্দীপ দে◆

কিংবদন্তি ক্রীড়া প্রশাসক প্রদ‍্যোৎ দত্তর জৈষ্ঠ পুত্র অনির্বান (জয়) দত্তর আইএফএ আসার ইচ্ছা প্রকাশকে কেন্দ্র করে আইএফএতেই তুলকালাম কান্ড। এই অনির্বান আবার আইএফএ-এর চেয়ারম‍্যান ও এআইএফএফের সহ-সভাপতি সুব্রত দত্তর ভাই। কোষাধ‍্যক্ষ পদে নির্বাচনের মাধ‍্যমে আসতে চেয়েছিলেন জয় ওরফে অনির্বান দত্ত। ময়দান বলছে অনির্বানই নাকি আইএফএ-এর ভবিষ্যতের সচিব। সেই কারণেই কি অনির্বানকে আইএফএতে আসতে আটকে দিলেন বর্তমান সচিব জয়দীপ মুখার্জি? আইএফএ-এর বর্তমান সচিবের বিরুদ্ধে উঠছে নানান অভিযোগ। সেই সব অভিযোগের উত্তর “ইনসাইড স্পোর্টস”কে জানালেন আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জি।

অনির্বান দত্ত

প্রশ্ন :কোষাধ‍্যক্ষ পদে কোনও নির্বাচন হল না। আপাতত আপনার জয় হল।

জয়দীপ মুখার্জি : এখানে জয়-পরাজয়ের প্রশ্ন নেই। আমি ওভাবে সেটা দেখি না।

প্রশ্ন : আপনি এই বিষয়ে একদিন আমাকে বলেছিলেন, একজন ফুটবল কোচ, তার পছন্দের দল গড়ে। কাজ করার জন‍্য এখনও পযর্ন্ত নিজের পছন্দের প্রয়োগ পদ্ধতি লাগু করতে পেরেছেন। এটাকে অস্বীকার করতে পারবেন?

জয়দীপ মুখার্জি : সন্দীপ, তুমি যেভাবে বলছো, আমি বিষয়টা সেই ভাবে দেখছি না। কোভিড পরিস্থিতি মেনে গর্ভনিং বডির সদস‍্যরা, জেলা প্রতিনিধিরা যা চেয়েছেন সেটাকেই মান‍্যতা দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন : আইএফএ-এর নতুন কোষাধ‍্যক্ষ নিয়োগ ও অনির্বান (জয়) দত্তকে আটকানোর নিয়ে আপনার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে। অভিযোগ গুলির উত্তর দেবেন?

জয়দীপ মুখার্জি : আমি সব অভিযোগের উত্তর দিতে তৈরি আছি।

প্রশ্ন : আইএফএ-এর সংবিধান মেনে আপনি কাজ করছেন না। কোষাধ‍্যক্ষ পদে থাকা সদ‍্য প্রয়াত কৃষ্ণেন্দু ব‍্যানার্জির মৃত‍্যু হয়েছে ২৭ ডিসেম্বর। আইএফএ-এর সংবিধান মতে ৩০ দিনের মধ‍্যে নতুন কোষাধ‍্যক্ষ নিয়োগ করতে হয়। ৩০ দিন অতিক্রান্ত। কোষাধ‍্যক্ষ পদটি এখনও শূন‍্যই রাখলেন। সংবিধান মানলেন কোথায়?

জয়দীপ মুখার্জি : প্রথমত সংবিধানে ৩০ দিনের কথা উল্লেখ আছে ঠিকই। কিন্তু ৩০ দিনের মধ‍্যে কোষাধ‍্যক্ষ নিয়োগ না করতে পারলে কি হবে, সংবিধানে তার কোনও গাইড লাইন নেই। আমরা ইচ্ছে করে করিনি তা কিন্তু নয়। করোনা সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে এখন নতুন কোষাধ‍্যক্ষ নির্বাচন করা ঝুঁকি হয়ে যেত। এই ব‍্যাপারে সম্মতি দিয়েছে গর্ভনিং বডি ও জেলা সদস‍্যদের ৮০ শতাংশ।

জয় (অনির্বান)-কে কি বোঝাচ্ছেন জয়দীপ?

প্রশ্ন : তাই যদি হয়, তাহলে ১৪ দিন আগে স্পেশাল জেনারেল মিটিং ডাকলেন কি করে? তখন তো রাজ‍্য সরকারের করোনা বিধি নিষেধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। ওই মিটিংয়েই তো কোষাধ‍্যক্ষের ম‍্যানডেটোরি সাইনিং অথরিটির ক্ষমতা খর্ব করে সংবিধান বদলে ফেলতে চেয়েছিলেন।

জয়দীপ মুখার্জি : কোষাধ‍্যক্ষের ম‍্যানডেটোর সাইনিং অথরিটি ব‍্যাপারটা বদলে ফেলতে চেয়েছি এটা ঠিক। নিয়মটা ভুল। আমরা অফিস বেয়ারার্স মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার একার সিদ্ধান্ত নয়। করোনা বিধিনিষেধ উঠে গেলে আমরা আবার এই বিষয়ে মিটিং করব। শুধু মাত্র কোষাধ‍্যক্ষই সই করবে, এটা ঠিক নয়। নিয়ম বদলের প্রয়োজন।

প্রশ্ন : আপনি যখন ২০১৯ সালে সচিব পদে বসলেন, তখন তো কোষাধ‍্যক্ষর এই ‘ভুল’ প্রয়োগ পদ্ধতি বদল করতে চাননি? এখন অনির্বান আসছিলেন বলেই কি সংবিধান বদলের চেষ্টা?

জয়দীপ মুখার্জি : তখন কোষাধ‍্যক্ষ বেঁচে ছিলেন। কৃষ্ণেন্দু ব‍্যানার্জি বহু পুরনো মাঠ করা মানুষ। ওই সময় নিয়ম বদলালে কৃষ্ণেন্দুদা অসম্মানিত হতেন। তাই করিনি। এখানে জয়দার (অনির্বান দত্ত) আসার জন‍্য নিয়ম বদল করা হচ্ছে তা ঠিক নয়।

প্রশ্ন : অ‍্যাসোসিয়েশনের ব‍্যাঙ্কিং অপারেশনের জন‍্য আপাতত চার পদাধিকারীর মধ‍্যে তিন জন সই করবে। কিন্তু যতদুর জানি, কোষাধ‍্যক্ষ অসুস্থ হলে অথবা শহরের বাইরে থাকলে এই ভাবে চেকে সই করা যায়। এখানে কিন্তু কোষাধ‍্যক্ষের মৃত‍্যু হয়েছে। সেখানে নতুন কোষাধ‍্যক্ষ নিয়োগ না করে ঝুলিয়ে রাখলেন?

প্রশ্ন : নির্বাচন করলে ব‍্যালটের ব‍্যবস্থা করতে হত। আর এটা আইএফএতেই করতে হত। আমাদের কনফারেন্স রুমে সিটিং ক‍্যাপাসিটি মাত্র ৪৮। সেক্ষেত্রে রাজ‍্য সরকারের করোনা বিধিনিষেধ মেনে ৫০ শতাংশ সদস‍্য নিয়ে ভোট করা যেত না। তাই কিছু দিনের জন‍্য চার পদাধিকারীর মধ‍্যে তিন জনের সই নিয়ে কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সব থেকে বড় কথা গর্ভনিং বডির ৮০ শতাংশ সদস‍্য সম্মতি দিয়েছেন।

সহ সভাপতি পার্থ সারথী গাঙ্গুলির সঙ্গে জয়দীপ মুখার্জি

প্রশ্ন : ইচ্ছে থাকলে সুবর্ন বনিক সভায় এই ভোট করা যেত না?

জয়দীপ মুখার্জি : না করা যেত না। আইএফএ-এর সংবিধানে যা আছে তাতে ব‍্যালটের ব‍্যবস্থা করতে হলে আইএফএ অফিসেই করতে হত।

প্রশ্ন : এমনটা সংবিধানে আছে কিনা আমার জানা নেই। আপনি যখন বলছেন তখন নিশ্চয় জেনেই বলছেন। তবে ময়দানে একটা বড় অংশের মত, অনির্বান দত্তর জয় নিশ্চিত জেনেই নাকি আপনি নির্বাচন স্থগিত করে দিলেন। অনির্বানকে নাকি আপনি আইএফএতে চান না। তাঁকে আটকাতেই নাকি এত কিছু পদক্ষেপ করেছেন। অনির্বানকে ভয় পাচ্ছেন? ভয় পেয়ে থাকলে, কেন ভয় পাচ্ছেন?

প্রশ্ন : সন্দীপ, তোমাকে জানিয়ে রাখি, জয়দার (অনির্বান) সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল। ভয় করব কেন? কেনই বা তাকে আটকাবো। জয়দাকে আমিই বলেছিলাম, প্রয়োজন হলে এই বছরই সচিব পদ তাকে ছেড়ে দেব। আমি এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি হব। জয়দা বলেছিল সরাসরি সচিব হতে চায় না। তার আগে কাজটা করতে চায়, কাজ শিখতে চায়। সহ সভাপতিও হতে পারে। সমস‍্যা নেই। জয়দা মানুষ হিসেবে খুবই ভাল। কিন্তু কিছু মানুষ ওকে ভুল পরামর্শ দিচ্ছে। খারাপ লাগে।

প্রশ্ন : কোষাধ‍্যক্ষ পদটা এখন শূন‍্য। এই পদে আসতে চেয়ে অনির্বান কী ভুল করেছেন? আর কিছু মানুষ বলতে আপনি কাদের ইঙ্গিত করছেন?

জয়দীপ মুখার্জি : ময়দানের বিভিন্ন ক্লাবে যাও। তুমিও খোঁজ খবর ভালই রাখো। জয়দাকে কারা ভুল পরামর্শ দিচ্ছে সেটা খুঁছলেই পাবে। কোনও সমস‍্যা, ভুল বুঝে থাকলে জয়দা আমাকে বলতেই পারে। সেটা না করে জয়দা সোসাল মিডিয়ায় আগে জানাচ্ছে। খারাপ লাগে, যখন ট্রেজার ছিল না,তখন কেউ আসতে চায়নি। আর এখন সবাই আসতে চাইছে। এটাই আমার প্রাপ্তি। আর জয়দা কোষাধ‍্যক্ষ পদে আসতেই পারে। কিন্তু যারা দীর্ঘদিন মাঠ করছে তাদের কেউ কেউ তো ডিসার্ভ করে। এটা অস্বীকার করতে পারবে? আর বাপীদা (সুব্রত দত্ত) আমার ময়দানের গুরু। বাপীদাই ময়দানের দলের নেতা। সঙ্গে আছেন অজিত ব‍্যানার্জি। আমি সেই দলের সৈনিক। কোষাধ‍্যক্ষ নির্বাচন নিয়ে দল কোনও নাম ঘোষণা করেনি। দলই শেষ কথা।

চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত ও সভাপতি অজিত ব‍্যানার্জি

প্রশ্ন : আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনি সচিব হওয়া সত্বেও অনির্বান দত্তর সম্ভাব‍্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রবীন ঘোষের সঙ্গে একাধিকবার মিটিং (ময়দানের পাঞ্জাব স্পোর্টস ক্লাবে) করেছেন। যা অনেকেই ভাল চোখে নেয়নি।

জয়দীপ মুখার্জি : হ‍্যাঁ, গিয়েছি। রবীনদা, শঙ্করদা ময়দানের বহু পুরনো মানুষ। আমাকে ডেকেছি গিয়েছি। জয়দা ডাকলেও যায়। সন্দীপ, তুমি নিজেও দেখেছো আমি খিদিরপুর ক্লাব, সিটি ক্লাবে যায়। সমস‍্যা নেই।

প্রশ্ন : আপনার কথায়, সুব্রত দত্ত দলের নেতা। আপনি সেই দলের সৈনিক। অনির্বান দত্ত হলেন সুব্রত দত্তর ভাই। দত্ত পরিবারের সদস‍্য। অনির্বানও তো আপনাদের দলের! আপনার সচিব নির্বাচন হওয়ার পর থেকে ময়দানে সবাই জানে জোড়াগানের “শঙ্করদা” সুব্রত দত্তর বিরোধী। প্রকাশ‍্যেই এখনও সুব্রতবাবুর সমালোচনা করেন। রবীন ঘোষ আবার শঙ্করবাবুর দলের লোক। আর আপনাদের দলের বিরোধীদের (শঙ্করবাবু, রবীনবাবু) সঙ্গেই মিটিং করলেন? আপনার দল কিছু বলেনি?

জয়দীপ মুখার্জি : আমি সচিব হিসেবে গিয়েছিলাম। কোনও ক্লাব কর্তা ডাকলে দলের উর্ধ্বে শুধু সচিব হিসেবে আমি যেতেই পারি।

প্রশ্ন : আপনার বিরুদ্ধে আরও একটা মারাত্মক অভিযোগ আছে। এই কোষাধ‍্যক্ষ নির্বাচন প্রস্তুতিতে জেলার ভোট কেনার জন‍্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস অ‍্যাসোসিয়েশেন এজিএম দিঘা থেকে কলকাতার রাজারহাট-নিউটাউনের নবহোটেলে ব‍্যবস্থা করা হয়েছিল। যদিও জেলা প্রতিনিধিদের আপত্তিতে সেই মিটিং হয়নি। শুধু তাই নয়, জেলা প্রতিনিধিদের থাকা,খাওয়া এবং প্রত‍্যেককে একটি করে ব্লেজার দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পুরো ঘটনার নেপথ‍্যে নাকি আপনিই ছিলেন?

জয়দীপ মুখার্জি : খোঁজ নিয়ে দেখলেই জানতে পারবে, ২০১৯ সালে জলপাইগুড়িতে WBDSA -এর এজিএমে ব‍্যক্তিগত ভাবে আমি টি-শার্ট দিয়েছিলাম। ওই বছরেই আমি সচিব হওয়ার পরে সিনিয়র জেলা চ‍্যাম্পিয়নশিপে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। এগুলো কি ভোটের জন‍্য দিয়েছিলাম? ২০২০ সালে শিলিগুড়িতে সংস্থার এজিএমেও আমি কিছু কনট্রিবিউট করেছি। তখন কি ভোট ছিল? যদি ভোট কেনাটাই উদ্দেশ‍্য থাকতো,তাহলে শুধু ৯ জন ভোটারের সঙ্গে আলাদা বসলেই তো হত। সবাইকে গিফ্ট দেওয়ার দরকার ছিল না।

প্রশ্ন : বুঝলাম। কোষাধ‍্যক্ষের পদে আপনি নাকি আপনার ঘনিষ্ট সহ-সভাপতি পার্থ সারথী গাঙ্গুলিকেই চেয়েছিলেন এবং এখনও চাইছেন। এটা কি সত‍্যি?

জয়দীপ মুখার্জি : হ‍্যাঁ, চেয়েছি। পার্থদা যোগ‍্য লোক। মুনও (রাকেশ ঝাঁ) খারাপ নয়। কিন্তু দল যেটা চাইবে সেটাই হবে। আবার বলছি দলই শেষ কথা। দল চাইলে, বাপীদা (সুব্রত দত্ত) চাইলে আমি সঙ্গে সঙ্গে আইএফএ থেকে চলে যাব।

প্রশ্ন : শেষ প্রশ্ন, আপনি বিভিন্ন জনকে বলছেন, সামনের বছর জুন মাসে আপনার টার্ম শেষ হলেই চলে যাবেন। সত‍্যিই চলে যাবেন? নাকি এটা আপনার কৌশল?

জয়দীপ মুখার্জি : সচিব হওয়ার পর তুমিই আমার প্রথম ইন্টারভিউ নিয়েছিলে। তুমি লিখেছিলে,১৬ কোটি টাকার দেনা নিয়ে সচিব পদে বসেছি। বড্ড ঝুঁকি। সন্দীপ, তখন তোমাকে বলেছিলাম, চার বছরের জন‍্য আমি সচিব থাকবো। তারপর চলে যাব। আর যাওয়ার সময় বেশিরভাগ দেনা মিটিয়ে যাব। সেদিনের বক্তব‍্য থেকে আমি সরছি না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here