◆সন্দীপ দে◆
বাংলার জিমন্যাস্টিক্সে দুই প্রণতি সাফল্যের হাত ধরে দৌড়চ্ছেন। একজন মেদিনীপুরের প্রণতি নায়েক অপর জন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জয়নগরের প্রণতি দাস। সব কিছুই ঠিক ছিল। কিন্ত এবারের ন্যাশনাল গেমস থেকে দুই প্রণতি এখন দুই রাজ্যের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন। অলিম্পিয়ান প্রণতি নায়েক বাংলা ছেড়ে ওড়িশার হয়ে এবার ন্যাশনাল গেমসে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। জিতেছেন চারটি সোনা ও একটি রূপোর পদক। পদক জিতে ভুবনেশ্বরে পৌঁছতেই পূর্ব ঘোষণা মতো ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক প্রণতি নায়েকের হাতে তুলে দিয়েছেন ২৩ লক্ষ টাকার চেক।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,ওড়িশা সরকার আগেই ঘোষণা করেছিল,ন্যাশনাল গেমসে সোনা জিতলে ৫ লক্ষ টাকা,রুপো জিতলে ৩ লক্ষ টাকা এবং ব্রোঞ্জ জিতলে ২ লক্ষ টাকা দেবে। প্রণতি নায়েক চারটি সোনা ও একটি রুপো জেতায় ২৩ লক্ষ টাকা পেয়ে গিয়েছেন। আর জিমন্যাস্টিক্স থেকেই বাংলার হয়ে দুটি সোনা ও তিনটি রুপো জিতে কি পেলেন প্রণতি দাস? পদক ও বাংলা রাজ্য জিমন্যাস্টিক্স সংস্থা, বিওএ-এর উষ্ণ অভিনন্দন।
পুরো ঘটনায় প্রণতি দাস বিরক্ত এবং অভিমানী। জিমন্যাস্টিক্সের ইভেন্ট শেষ করে গোয়া থেকে ট্রেনে ফিরছেন প্রণতি দাস। প্রতিক্রিয়া জানতে চায়লে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে নিজের ভয়েস রেকর্ড পাঠিয়ে অভিমানের কথা শোনালেন প্রণতি। “কি বলব বলুন। বাংলার হয়ে আমরা সাফল্য পেলে সরকার থেকে কেউ অভিনন্দনও জানায় না। আর্থিক পুরস্কারের কথা ছেড়ে দিন। প্রণতি নায়েকের ঘটনা আপনারা জানেন। এই বাংলায় সুযোগ,সুবিধা না পেয়ে ওড়িশা চলে গেল। সোনা,রুপো জিতে ওড়িশা সরকার থেকে আর্থিক পুরস্কার পেল ২৩ লক্ষ টাকা। আমাদের বাংলা থেকে কিন্তু কোনও কিছুই দেওয়া হয় না। আগামী দিনে দেখবেন প্রতিভাবান জিমন্যাস্টরাও বাংলা ছেড়ে চলে যাবে। আমার সুযোগ এলে আমি চলে যেতাম।” বলছিলেন প্রণতি দাস।
প্রসঙ্গত, বাংলার হয়ে এবারের ন্যাশনাল গেমসে ব্যক্তিগত ইভেন্টে একটি সোনা ও তিনটি রুপো জেতা ছাড়াও টিম ইভেন্টেও সোনা জিতেছেন প্রণতি দাস। গত বছর ন্যাশনাল গেমসেও অলরাউন্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। সিনিয়র ন্যাশনালে জিতেছিলেন তিনটি সোনা। এই সাফল্যে, অভিমানের মধ্যেও নিজের দুই কোচের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি প্রণতি দাস। তাঁর কথায়,”জয় স্যারের (জয় প্রকাশ চক্রবর্তী) মৃত্যুর পর ভেবেছিলাম খেলায় ছেড়ে দেব। কিন্তু টুম্পাদির (টুম্পা দেবনাথ) কাছে অনুশীলন করি বলেই খেলাটা আর ছাড়িনি। জয় স্যারের সঙ্গে যেমন মনের মতো করে অনুশীলন করে তৈরি হয়েছি। টুম্পাদিও খুব যত্ন করে আমাকে আগলে রাখেন। আজ আমার এই সাফল্যের পিছনে জয় স্যার ও টুম্পাদির বিরাট অবদান আছে।”
জিমন্যাস্টিক্স কোচ জয় প্রকাশ চক্রবর্তীর কাছেই আগে অনুশীলন করতেন প্রণতি। পরে বাংলার জিমন্যাস্টিক্সের অন্যতম সফল খেলোয়াড় ও কোচ টুম্পা দেবনাথের কাছে থেকে নিজেকে তৈরি করে সাফল্যের সরণীতে প্রণতি দাস। প্রণতি সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর ফোকাসটা কি নষ্ট হতে পারে? উত্তরে প্রণতি দাস বলেন,”বিয়ের পরই আমার সাফল্যের গ্রাফটা বেড়েছে। আমার বর,শ্বশুড় বাড়ির প্রত্যেকে উৎসাহ যোগায়। জিমন্যাস্টিক্সে ভাল কিছু করার জন্যই আমি সাইয়ের হস্টেলে থাকি। দুই বেলা অনুশীলন করি। বিয়েটা আমার কাছে কোনও সমস্যা নয়। সমস্যা,বিরক্তি,অভিমান – যা কিছুই বলুন সেটা হয় বাংলা আমাদের জন্য কিছুই ভাবেনা। কিছু করলও না।”