জেলার ফুটবলারদের কলকাতায় থাকার ব‍্যবস্থা করছেন অজিত-অরূপ

0

◆সন্দীপ দে◆

প্রতিক্ষার অবসান। জেলার ফুটবলারদের কাছে সুখবর তো বটেই। আসন্ন কলকাতা লিগে যারা খেলার সুযোগ পেয়েছেন তারা বিনামূল‍্যে কলকাতা শহরে থেকে খেলতে পারবেন। অতীতে জেলার বহু ফুটবলার কলকাতা লিগে খেলার সুযোগ পেয়েও থাকার অভাবে নিজের জেলায় ফিরে গিয়েছেন। পরে হতাশায় কেউ খেলা ছেড়ে দিয়েছেন। আবার কেউ ফুটবলটা ধরে রাখতে চাইলেও ব‍্যর্থ হয়েছেন। এভাবেই প্রতি বছর হারিয়ে গিয়েছে বহু বাঙালি ফুটবলার। এবার সেই সমস‍্যা মিটতে চলেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে কলকাতা শহরে থেকেই আসন্ন কলকাতা ফুটবল লিগে খেলতে পারবেন জেলার ফুবলাররা। আর মুস্কিল আসান করতে চলেছেন আইএফএ সভাপতি অজিত ব‍্যানার্জি এবং ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। অতীতে আইএফএ-এর অন‍্য কোন কর্তাকে এমন উদ‍্যোগ নিয়ে গঠন মূলক কাজ করতে দেখা যায়নি। এবার সেটাই করে দেখালেন আইএফএ-র বর্তমান সভাপতি ও ক্রীড়ামন্ত্রী।

জেলার ফুটবলার (ফাইল ছবি)

এবারের কলকাতা লিগে জেলার যে সমস্ত ফুটবলাররা খেলার সুযোগ পেয়েছেন তাদের থাকার ব‍্যবস্থা করা হচ্ছে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন স্টেডিয়ামের ঝকঝকে ডরমেটারিতে। যুবভারতীতে মোট ৬ টি ডরমেটারি রুম আছে। প্রতিটি ডরমেটারি রুমে ৩৮টি করে বেড আছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২২৮ জন ফুটবলার থাকতে পারবেন। তার জন‍্য কোনও টাকা লাগবে না। ক্রীড়ামন্ত্রী লিগ চলাকালীন দুরের জেলার ফুটবলারদের বিনামূল্যে থাকার ব‍্যবস্থা করছেন। তবে কোনও ফুটবলার সরাসরি এই ডরমেটারিতে ঢুকতে পারবেন না। তাদের আসতে হবে আইএফএ-এর মাধ‍্যমে। যে সব ফুটবলাররা যে যে ক্লাবে সই করবেন, সেই ক্লাব নিজেদের জেলার ফুটবলারদের থাকার জন‍্য আইএফএতে আবেদন করতে হবে। তারপর আইএফএ-এর অনুমতি নিয়ে তবেই যুবভারতীর ডরমেটারিতে থাকতে পারবেন ফুটবলাররা।

এই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনেই থাকবেন জেলার ফুটবলাররা

জেলার খেলার খবর তুলে ধরার জন‍্য বিভিন্ন জেলায় পৌঁছনোর চেষ্টা করছে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’। আমরা জেলায় গিয়ে কর্তা থেকে ফুটবলারদের কাছে অভিযোগ শুনেছি বারবার। তাদের একটাই অভিযোগ, “ভাল খেলে কি করব? কলকাতায় আমাদের থাকার জায়গা নেই।” কলকাতা ফিরে জেলার ফুটবলারদের বার্তা, অভিযোগ আইএফএ, ক্লাব কর্তাদের পৌঁছনোর চেষ্টা করেছি। এক বছর আগে আইএফএ-এর এক সভায় ইউনাইটেড স্পোর্টসের কর্তা নবাব ভট্টাচার্য দাবি করেছিলেন,”বিধায়কদের জন‍্য যদি এমএলএ হস্টেল থাকতে পারে তাহলে খেলোয়াড়দের জন‍্য স্পোর্টস হোস্টেল থাকবে না কেন?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দুরের জেলার ফুটবলারদের কলকাতা শহরে থাকার প্রথম ভাবনা শুরু করেন কিন্তু আইএফএ সভাপতি অজিত ব‍্যানার্জি। ভাবনার সঙ্গে কাজে বাস্তবায়িত করাটা সহজ নয়। অজিতবাবু জেলার ফুটবলারদের থাকার সমস‍্যা নিয়ে আলোচনা করেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে। সূত্রের খবর,অরূপবাবুরও নাকি জেলার ফুটবলারদের পাশে থাকতে পেরে খুশি হয়েছেন। তিনিও এই বিষয়টা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছিলেন। তারপরেই মুস্কিল আসান।

ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস

আইএফএ-এর একটা সূত্র ‘ইনসাইড স্পোর্টস’ কে জানিয়েছে,কলকাতা লিগকে বয়স ভিত্তিক ফরম‍্যাটে আনাটাও আইএফএ সভাপতি অজিত ব‍্যানার্জির মস্তিষ্কপ্রসূত। তিনিই নাকি গত চার বছর ধরে বয়স ভিত্তিক লিগ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অবশেষে অজিতবাবুর দুটি প্রস্তাব বাস্তবে রূপ পেতে চলেছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অজিত ব‍্যানার্জি ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে জানান,”কলকাতায় জেলার ফুটবলারদের থাকার সমস‍্যা বহু বছরের। অবশেষে সমস‍্যার সমাধান হতে চলেছে। এর জন‍্য ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের বিরাট ভূমিকা আছে। অরূপের সহযোগিতা ছাড়া জেলার ফুটবলারদের থাকার ব‍্যবস্থা করা সম্ভব হত না। ধন‍্যবাদ জানাতে হলে ক্রীড়ামন্ত্রীকে জানান।” বয়স ভিত্তিক ফুটবল লিগ চালু হওয়ার ক্ষেত্রেও তো আপনার ভূমিকা আছে। উত্তরে অজিতবাবু বলেন,”ফুটবলের উন্নয়নের জন‍্য বয়স ভিত্তিক হওয়াটা খুব জরুরি ছিল। এটা হওয়াতে বাংলার কোচিং ক‍্যাম্পের গুরুত্ব বেড়ে যাবে। ফুটবলারদের মধ‍্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। এক ঝাঁক ফুটবলার উঠে আসার সুযোগ পাবে। কোয়ান্টিটি না বাড়লে কোয়ালিটি আসবে না। আইএফএ-এর সকলেই চেয়েছে বলেই কিন্তু এই বয়স ভিত্তিক লিগ শুরু করা যাচ্ছে। ”

আইএফএ-র নতুন কোষাধ‍্যক্ষ অনির্বান দত্তর সঙ্গে সভাপতি অজিত ব‍্যানার্জি

অজিতবাবু ও অরূপবাবুর এমন প্রচেষ্টা দেখে জেলার কর্তা থেকে ফুটবলার – সবাই চমকে গিয়েছেন। ‘ইনসাইড স্পোর্টসে’র মাধ‍্যমে অভিনন্দন জানাচ্ছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা। কিছু জেলার কর্তার প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হল।

◆বিশ্বজিৎ ভাদুরি (সচিব, মুর্শিদাবাদ জেলা ক্রীড়া সংস্থা) “ফুটবলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ এক অসাধাণ পদক্ষেপ। জেলার ফুটবলারদের কলকাতা শহরে থাকার জায়গা ছিল না। ফলে হারিয়ে যাচ্ছিল ফুটবল প্রতিভা। বিরাট সমস‍্যার সমাধান হল। এর জন‍্য আপনাদের ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর মাধ‍্যমে অজিত ব‍্যানার্জি ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে আন্তরিক ভাবে ধন‍্যবাদ জানাচ্ছি।”

◆সব‍্যসাচি (কুমার) দত্ত (সচিব,জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থা) -“আমাদের প্রত‍্যন্ত জেলার ফুটবলারদের কাছে সত‍্যিই দারুন খবর। উত্তরবঙ্গে খুব ভাল মানের ফুটবলার আছে। এবছরই দুজন সন্তোষ ট্রফিতে খেলেছে। কিন্তু কলকাতা শহরে থাকার সমস‍্যাটাই বড় বাধা ছিল। অজিত ব‍্যানার্জি, ক্রীড়ামন্ত্রীকে অনেক ধন‍্যবাদ জানাচ্ছি। এতদিনে একটা খুব ভাল কাজ হল।”
◆ কুন্তল গোস্বামী (সচিব, শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ) -“আইএফএ-এর সভাপতি অজিত ব‍্যানার্জি ও ক্রীড়ামন্ত্রীর এই উদ‍্যোগকে কুর্ণিশ জানাই। প্রান্তিক জেলার ফুটবলারদের বিরাট সুবিধা হল। এই উদ‍্যোগ সত‍্যিই প্রশংসনীয়।”

◆পার্থ মুখার্জি (অন‍্যতম কর্তা,মানভূম জেলা ক্রীড়া সংস্থা,পুরুলিয়া) -” এতদিন দুরবর্তী জেলার ফুটবলাররা কলকাতা ফুটবলের সুযোগ সুবিধা পেত না। কারণ থাকার জায়গা ছিল না। এবার সেটা হচ্ছে। অনেক প্রতিভা কলকাতা শহরে থেকে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবে। অজিতবাবু ও অরূপবাবুকে বিশেষভাবে ধন‍্যবাদ জানাচ্ছি।”

◆ সুব্রত দত্ত (সচিব, কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থা) -“জেলার ফুটবলারদের কাছে এটা দারুন খবর। এতদিন যা হয়নি এবার সেটাই হচ্ছে। প্রশংসনীয় উদ‍্যোগ। আমরা উপকৃত হব।”

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন সচিব ও সিএবির অ‍্যাপেক্স কাউন্সিল মেম্বার গৌতম গোস্বামী বহু বছর ধরে জেলার খেলোয়াড়দের কলকাতায় থাকার জন‍্য দাবি জানিয়ে এসেছেন। এমনকি গতবছর জেলার ক্রিকেটাররাও যাতে কলকাতা শহরে থাকার সুযোগ পায় সেই প্রস্তাব সিএবিতে জানিয়েছিলেন। সে গৌতমবাবু ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বালুরঘাট থেকে ফোনে জানালেন,” অসম্ভব ভালো খবর। ক্রীড়া মন্ত্রী এবং আইএফএ সভাপতি সারা ভারতবর্ষে একটা উদাহরন সৃষ্টি করলেন। সিএবি একই ব্যবস্থা করার পথে। তবে আশাবাদী খুব শীঘ্রই করে উঠবে। এতদিন কিছু ক্রীড়া প্রশাসক কলকাতাকেই পশ্চিমবঙ্গ ভাবতেন। জেলা ছাড়া বাংলার ক্রীড়ার সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। জেলাকে যে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হল তার জন‍্য কোনও প্রশংসা যথেষ্ট নয়।”

ফুটবলারদের জন‍্য যিনি স্পোর্টস হস্টেলের দাবি করেছিলেন সেই নবাব ভট্টাচার্য বলছিলেন,”দুই দিনে দুটি ভাল খবর পেলাম। সন্তোষ ট্রফি খেলে এখনও চাকরি পাওয়া যায় তা দেখিয়ে দিয়েছেন মাননীয়া মুখ‍্যমন্ত্রী। আর অজিতদা,অরুপদা জেলার ফুটবলারদের থাকার ব‍্যবস্থা করে দিয়ে বিরাট সমস‍্যার সমাধান করে দিলেন। জেলার ফুটবলারদের কলকাতায় থাকার দাবি আমি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছিলাম। গ্রামের প্রতিভাবান ফুটবলাররা উঠে আসার আগেই হারিয়ে যাচ্ছিল। এবার সেই সুযোগ পাবে। মুখ‍্যমন্ত্রী,ক্রীড়ামন্ত্রী এবং অজিতদাকে ধন‍্যবাদ দিয়ে ছোট করব না। আপনারা এভাবেই খেলোয়াড়দের পাশে থাকুন।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here