জীবন বাঁচানোর ‘দৌড়েও’ শেষ রক্ষা হল না, চলেই গেলেন মিলখা সিং

0

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,১৯ জুন : গোবিন্দপুর গ্রামে তখন পাক সেনাদের তান্ডব চলছিল। গ্রামের মানুষদের খুন করছিল পাক সেনারা। ছোট্ট মিলখা সিংকে প্রাণ বাঁচাতে তার বাবা বলে উঠেছিল, “ভাগ,মিলখা ভাগ।” বাবার নির্দেশে নিজের প্রাণ বাঁচাতে সেই দৌড় শুরু করেছিলেন। বাবার সেই সংলাপ থেকেই কয়েক বছর আগে তাঁরই বায়োপিক তৈরি হয়েছিল, “ভাগ, মিলখা ভাগ।” তিন সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবারও যেন নিজের প্রাণ বাঁচাতে “দৌড়” শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। শুক্রবার রাত বারোটার পর (শনিবার) মিলখার সব দৌড় থেমে গেল। পাঁচদিন আগেই করোনাতে মৃত‍্যু হয়েছে মিলখা পত্নী নির্মলা কৌরের। এবার পত্নীর কাছেই চলে গেলেন “উরন্ত শিখ”।

মিলখার জন্ম তারিখ নিয়ে বিতর্ক আছে। কারণ নিজের আসল জন্ম তারিখ মিলখা নিজেই জানতেন না। নিজের আত্মজীবনী ‘‌দ্য রেস অফ মাই লাইফ’‌–এ সেই কথা স্বীকার করে লিখেছিলেন, পরিবারের কেউ মনে রাখেননি তাঁর জন্ম তারিখ। ‌ আসলে তখন তাঁর পরিবারের সবাই কঠিন সংগ্রামের মধ‍্যে ছিলেন। বতর্মান নিয়েই থাকতেন। জন্ম তারিখটা বাবা-মাও মনে রাখতে পারেননি।
মিলখার পাসপোর্টে একটা জন্ম তারিখ দেওয়া আছে ২০ নভেম্বর ১৯৩২। আবার গুগলে উইকিপিডিয়ায় আছে ১৯২৯।

মিলখার জন্ম অবিভক্ত ভারতের মুজাফ্ফরগড় জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে, যা এখন পাকিস্তানে মধ‍্যে পড়ে। অভিশপ্ত সেই বিকেলে পাক সেনার হাতে খুন হতে হয়েছিল মিলখার বাবা-মাকে। দৌড়ে পালিয়ে এসে প্রাণ বাঁচানোর পর নানান প্রতিকূলতার মধ‍্যে দিয়ে নিজেকে সফল অ‍্যাথলিট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। চূড়ান্ত ফর্মে থাকার সময় পাকিস্তানে এক বিশেষ দৌড় প্রতিযোগিতায় গিয়ে স্বপ্নের দৌড় দৌড়েছিলেন। পাকিস্তানের সেরা স্প্রিনটার আব্দুল খালেককে হারিয়েছিলেন। তাঁর সেই অবাক করা দৌড় দেখে পাকিস্তানের তৎকালীন এক মন্ত্রী (আয়ুব খান) মিলখার নাম দিয়েছিলেন “উরন্ত শিখ।” ১৯৬০ সালের ঘটনা। সেদিন মিলখার চমৎকার দৌড়ের সাফল‍্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছুটি ঘোষণা করেছিলেন।

মিলখা সিং ভারতকে প্রথম এনে দিয়েছিলেন কমনওয়েলথ গেমসের (১৯৫৮) সোনার পদক। উঠেছিলেন অলিম্পিকের ফাইনালে। অল্পের জন্য অলিম্পিক পদক পাননি। ১৯৫৮ টোকিও এশিয়ান গেমসে ৪০০ মিটার ও ২০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছিলেন। ১৯৬২ জাকার্তার এশিয়ান গেমসে ৪০০ মিটার দৌড় ও ৪×৪০০ মিটার রিলেতেও সোনা জিতেছিলেন তিনি। ১৯৫৯ পেয়েছিলেন “পদ্মশ্রী” সম্মান। এশিয়ান গেমসে ২০০ মিটার ও ৪০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছিলেন মিলখা।

দু’দিন আগেই মিলখাকে চণ্ডীগড়ের পিজিআইএমইআর-এর (PGIMER) কোভিড আইসিইউ থেকে সাধারণ আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। কিন্তু ফের মিলখার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। আচমকাই তাঁর জ্বর আসে ও সঙ্গে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করে। কোভিড পরবর্তী উপসর্গের জন্যই জীবনের ট্র্যাক থেকে ছিটকে গিলেন মিলখা। ভারতীয় ক্রীড়া জগতে এক বর্ণময় চরিত্র চলে গেল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here