জিয়াগঞ্জে মায়ের নামে গায়ক অরিজিতের স্পোর্টস কমপ্লেক্স শুরু

0

◆মাঠ ও মায়ের সঙ্গে অরিজিৎ সিং (ফাইল ছবি)◆

◆সন্দীপ দে◆

মুর্শিদাবাদ জেলার ছোট্ট শহর জিয়াগঞ্জ থেকে উঠে এসে আজ তিনি বলিউডের সঙ্গীত জগতে বড় তারকা হয়ে উঠেছেন। বলিউড কাঁপানোর পাশাপাশি কয়েক মাস আগেও স্পেনের ন‍্যু ক‍্যাম্প স্টেডিয়ামে রিয়াল মাদ্রিদ – বার্সেলোনার ‘এল ক্লাসিকো’ ম‍্যাচের আগে ডিজিটাল বোর্ডে একমাত্র ভারতীয় গায়ক হিসেবে আরিজিৎ সিংয়ের ‘বইরিয়া’ হিন্দি গান বেজে উঠেছিল। অথবা এবারের আইপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অরিজিতই ছিলেন মূল আকর্ষণ।

সাদামাঠা অরিজিৎ সিং। জিয়াগঞ্জের রাস্তায়

এমন এক সেলিব্রিটি তিনি অথচ মাটিতে পা রেখেই চলেন। সোসাল মিডিয়ার মাধ‍্যমে আজ সবাই জানেন, জিয়াগঞ্জে থাকলে স্কুটি নিয়ে ঘুরে বেড়ান অরিজিৎ। আর পাঁচটা সেলিব্রিটির মতো তিনি প্রচারলোভী নয়। বরং প্রচারের আড়ালে থেকে নিজের কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন। সেই প্রচারের আড়ালেই জিয়াগঞ্জ শহরে একটা বড় স্পোটর্স কমপ্লেক্স তৈরি করে ফেলেছেন। প্রয়াত মায়ের নামে প্রায় সাত একর জমির উপর ফুটবল ও ক্রিকেট নিয়ে একটা আস্ত স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরি করেছেন। যে স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন সেই রাজা বিজয় সিংহ স্কুলের জমিতেই গড়ে তুলেছেন ADITI INSTITUTION OF SPORTS।

অরিজিতের স্পোর্টস অ‍্যাকাডেমির মাঠ

জিয়াগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে অটো,টুকটুক বা রিকশা করে কদবেলতলা মোড়ে পৌঁছলেই পেয়ে যাবেন অরিজিৎ সিংয়ের স্বপ্নের স্পোর্টস কমপ্লেক্স। অরিজিতের আর একটা ভাল গুন হল, তাঁর ছেলে বেলার বন্ধুদের নিয়েই তাঁর যাবতীয় কর্মকাণ্ড। কোভিডের সময় তাঁর মা অদিতি দেবীর মৃত‍্যু হয়। তারপর নিজের মায়ের নামেই এই স্পোর্টস কমপ্লেক্স করার ভাবনা শুরু। প্রথমদিকে স্থানীয়দের কেউ কেউ আপত্তি করেছিল। তাদের ধারণা ছিল অরিজিৎ মাঠ গড়ে ব‍্যবসা করবেন। কিন্তু পরবর্তীকালে অরিজিতের সৎ উদ্দেশ্য জানতে পেরে সেই স্থানীয়রায় দু হাত তুলে অরিজিৎকে আর্শীবাদ করছেন। তবে প্রথম থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ অরিজিতের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। অরিজিতকে রাজা বিজয় সিং স্কুল কর্তৃপক্ষ সভাপতি করে দিয়েছেন। নিজের স্কুলের চেহারাটাই পাল্টে দিয়েছেন।

অরিজিতের স্কুল

এই স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ক্রিকেটের জন‍্য পাঁচটি উন্নতমানের পিচ তৈরি করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়ে যাবে।
তবে ফুটবল অ‍্যাকাডেমির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তিন সপ্তাহ ধরে ট্রায়াল হওয়ার পর ফুটবলারদের বেছে নেওয়া হয়েছে। দেড় মাস আগে যখন ফুটবল শুরু হয় তখন কোচের দায়িত্বে ছিলেন ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার মনোজিৎ দাস। পরে তাঁকে আর দেখা যায়নি। পরে পাকাপাকি ভাবে অরিজিৎ সিংয়ের এই ফুটবল অ‍্যাকাডেমির চিফ কোচ হিসেবে যুক্ত হয়েছেন ভারতের প্রাক্তন গোলরক্ষক তনুময় বসু। তাঁর ‘এ’ লাইসেন্স করা আছে। সঙ্গে আছে গোলকিপারের লেভেল -৩ লাইসেন্স।

চিফ কোচ তনুময় বসু

এই মুহুর্তে অ‍্যাকাডেমিতে প্রায় ৭০ জন ফুটবল শিক্ষার্থী আছে। অনূর্ধ্ব-১৪,অনূর্ধ্ব-১৮ এবং ৬ থেকে ১২ বছরের গ্রাসরুট লেভেলের ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তনুময়। প্রথমে অরিজিৎ ভেবেছিলেন বিনামূল‍্যে ফুটবল প্রশিক্ষণ দেবে তাঁর অ‍্যাকাডেমি। কিন্তু তাঁকে বোঝানো হয়, বিনামূল‍্যে প্রশিক্ষণ দিলে তার গুরুত্ব থাকবে না। সেই কারণেই একটা ফিজ নেওয়া হয়। তবে অরিজিৎ ফুটবলারদের জন‍্য ৭০ জোড়া বুট কিনে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, অ‍্যাকাডেমির যেসব ছেলেদের আর্থিক অবস্থা খারাপ তাদের কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া হয় না। প্রসঙ্গত, এই অ‍্যাকাডেমিতে নিজের দুটি ছেলেকে ভর্তি করিয়েছেন অরিজিৎ। তবে তাঁর নির্দেশ,অ‍্যাকাডেমির অন‍্য ছেলেরা যে সুযোগ সুবিধা পায় তার বেশি সুবিধা যেন তাঁর দুই ছেলে না পায়।

জিয়াগঞ্জে গঙ্গার ধারে মনোজ তিওয়ারির সঙ্গে

গায়ক অরিজিতকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। যিনি এই স্পোর্টস কমপ্লেক্সের দায়িত্বে আছেন সেই সানুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,”কিছু মনে করবেন না, আমি কোনও মন্তব‍্য করতে পারবো না।”
এত ভাল একটা উদ‍্যোগ নিয়েছেন,কিছুই কি বলা যাবে না? উত্তরে সানু বলেন,”এই স্পোর্টস কমপ্লেক্স সবে শুরু হয়েছে।মিডিয়ায় এখনই লেখালেখি হোক,অরিজিৎ চান না। আমি কেন, কোচ থেকে সকল স্টাফ কেউ সরকারি ভাবে আমরা কিছু বলতে পারবো না। প্লিজ কিছু মনে করবেন না।” কোচ তনুময় বসুর গলাতেও এক সুর। ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে তিনিও বলেন,”আমি এখানে কোচিং করাচ্ছি ঠিকই। তবে এর বেশি কিছু বলতে পারবো না। সরি।”

জিয়াগঞ্জের এক যুবক। তিনি অরিজিতের বাল‍্যবন্ধু। তাঁর নাম না লেখার শর্তে কিছু কথা বলেছেন। অরিজিতের সেই বন্ধুটি ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলছিলেন,”অরিজিত একটা লক্ষ‍্য নিয়ে এগোচ্ছে। এই মুর্শিদাবাদ থেকে ভারতী ফুটবল ও ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছনোর লক্ষ‍্য আছে। আমাদের জেলায় অনেক প্রতিভা আছে তাদের টপ লেভেলে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ‍্য নিয়েই এই স্পোর্টস কমপ্লেক্স করেছে অরিজিৎ। ও নিজে মাঠে এসে ছেলেদের অনুশীলন দেখে। কোচের সঙ্গে কথা বলে। পরিকাঠামো ঢেলে সাজাতে উদ‍্যোগ নিয়েছে।”

তাঁর কাছেই জানা গেল, কল‍্যাণীর এক মাঠ তৈরির বিশেষজ্ঞকে দিয়ে তিন মাস ধরে মাঠ তৈরি করিয়েছেন অরিজিৎ। মাঠ রক্ষণাবেক্ষণের জন‍্য ১০ জন মালি রেখেছেন। পাঁচ জন টেকনিক্যাল স্টাফ রয়েছে। সব মিলিয়ে নবাবের দেশে খেলাধূলার জগতে বিরাট কর্মকাণ্ড শুরু করে দিয়েছেন অরিজিৎ সিং। নীরবে,নিঃশব্দে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here