চূড়ান্ত ব্যর্থতা, অবহেলায় নিষ্ক্রিয় ৮৫ বছরের জেলা ফেডারেশন

0

সন্দীপ দে

মুখ থুবড়ে পড়েছে ওয়েস্টবেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ফেডারেশন। চূড়ান্ত অবহেলা, ব্যর্থতায় ৮৪ বছরের জেলা ফেডারেশন (ওয়েস্টবেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ফেডারেশন ) পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। এই সংস্থায় কোনও টুর্নামেন্ট হয় না। এমনকি গত দুই বছর ধরে AGM হয় না। এমন একটা প্রাচীন সংস্থাকে (সমস্ত জেলার ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম) সক্রিয় করার কোনও ইচ্ছেই নেই জেলা ফেডারেশনের বর্তমান কর্তাদের।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,৪ বছর আগে বিতর্ক থাকলেও জেলা ফেডারেশনে টুর্নামেন্ট হত। AGM হত। কিন্তু এখন কিছুই হয় না। গত ৪ বছরে ২০২৩ সালে মালদায় U-15 ফুটবল টুর্নামেন্ট করতে পেরেছে। ওটাই শেষ।

২০২২ সালের ১৯ জুন মালদা শহরে নতুন কমিটি তৈরি হয়েছিল। সেই কমিটির সদস্যরা হলেন ——
সভাপতি- সুদীপ বিশ্বাস (উত্তর দিনাজপুর), কার্যকরী সভাপতি- বিশ্বজিৎ ভাদুড়ি (মুর্শিদাবাদ) সচিব- দেবব্রত সাহা (মালদা) – কোষাধ‍্যক্ষ – পার্থ মুখার্জি (পুরুলিয়া), সহ সভাপতি – সব‍্যসাচী দত্ত (জলপাইগুড়ি) সৌরভ ভট্টাচার্য (শিলিগুড়ি),মদন মোহন মারিক (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) ও তারাশঙ্কর বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় – লাইফ মেম্বার (বাঁকুড়া)। সহসচিব রতন সমাজদার (উত্তর ২৪ পরগনা), দেবাশিস বিশ্বাস (নদীয়া)। এই কমিটির মধ্যে লাইফ মেম্বার বাঁকুড়ার তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় ও সহ সচিব উত্তর ২৪ পরগনার রতন সমাজদারের মৃত্যু হয়েছে।

কেন এমন হাল? এই প্রশ্নের উত্তরে inside sports কে জেলা ফেডারেশনের সচিব দেবব্রত সাহা (বাবু) বলেন, “আমাদের ফান্ড নেই তাই খেলা করতে পারছি না।”
প্রশ্ন : খেলা করার জন্য আপনারা স্পনসর জোগাড়ের চেষ্টা করেছিলেন? তাছাড়া আপনি তো সচিব। এই জেলা ফেডারেশনের মুখ। সেই সচিব হয়ে গত দুই বছর ধরে AGMও করতে পারেননি। কোনও সমস্যা হয়েছে?
দেবব্রত সাহা: আমি রাস্তায় আছি সন্দীপ। পরে ফোন করছি। (বলেই ফোনের লাইন কেটে দেন দেবব্রত সাহা)।
যদিও পরে তাঁর ফোন আর আসেনি। এই প্রতিবেদক পরে ফোন করেলে তাকে পাওয়া যাইনি। আসলে বাবু ওরফে দেবব্রত সাহা মালদা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর খুব ঘনিষ্ট। তিনি DSA ও কালিতলা ক্লাবে (কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর ক্লাব ) যে যতটা সময় দেন তার সামান্য সময় জেলা ফেডারেশনে দিতেন তাহলে এই সমস্যা দেখা দিত না। দেবব্রত বাবু সচিব পদে বসে আছেন ঠিকই কিন্তু দায়িত্ব সামলাতে ব্যর্থ।

Oplus_131072

জেলা ফেডারেশনের বেহাল দশা নিয়ে এই প্রতিবেদক প্রশ্ন করেছিল সংস্থার প্রেসিডেন্ট সুদীপ বিশ্বাস (উত্তর দিনাজপুর) ও ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট বিশ্বজিৎ ভাদুড়ী (মুর্শিদাবাদ )কে। তাঁরা বলেন ——

সুদীপ বিশ্বাস – “ওয়েস্টবেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ফেডারেশন নিয়ে আমার বলার এক্তিয়ার নেই। যা বলার সচিব বলবেন।”
বিশ্বজিৎ ভাদুড়ী – “ঠিকই বলছেন, আমরা গত দুই বছর ধরে AGM করতে পারিনি। একটা খেলা ছাড়া আর কোনও টুর্নামেন্ট করতে পারিনি। এই ব্যর্থতা আমাদের সকলের ব্যর্থতা।”

জেলা ফেডারেশন আবার IFA এর আফিলিয়েটেড ইউনিট। জেলা ফেডারেশন থেকে IFA তে প্রতিনিধিত্ব করেন সচিব দেবব্রত সাহা। জেলা ফেডারেশন নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া নিয়ে IFA সচিব অনির্বান দত্তকে প্রশ্ন করলে বলেন, “খেলাধুলার উন্নয়নের জন্য যে কোনও এসোসিয়েশনের উচিত নিয়ম মেনে কাজ করা।”

Oplus_131072

ফুটবল টুর্নামেন্ট করার ক্ষেত্রে IFA এর সাহায্য পেয়ে এসেছে জেলা ফেডারেশন। কিন্তু নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে হলে সঠিক জায়গায় প্রস্তাব করতে হয়। সেটাই গত চার বছর ধরে হয়নি। জেলা ফেডারেশন সূত্রের খবর, কতিপয় সদস্য বলা সত্ত্বেও খেলা নিয়ে কোনও প্রস্তাব IFA কে জমাই দেননি সচিব দেবব্রত সাহা। ফলে কমিটির একাধিক সদস্য দেবব্রতর উপর বিরক্ত। এমন অভিযোগ উঠছে।

অতীতে সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিয়ে জেলা ফেডারেশনকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কিছু ক্রীড়া প্রশাসক। যেমন ২০১৬ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ওয়েস্টবেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ফেডারেশনের patron-in-chief হলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। একটা সময় জেলা ফেডারেশনকে মোটা টাকার স্পনসর এনে দিয়েছিলেন CAB এর তৎকালীন সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি। সাহায্য করেছেন এরিয়ান ক্লাবের কর্তা সমর পাল। আবার জেলা ফেডারেশনের U-15 ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য সমস্ত জেলা দলের ফুটবলারদের জার্সির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন বিশ্বরূপ দে।

আসলে সংস্থার জন্য স্পনসর জোগাড়ের চেষ্টা, ইচ্ছা কোনটায় নেই জেলা ফেডারেশন কর্তাদের। চূড়ান্ত অবহেলা। প্রখ্যাত ফুটবল কোচ প্রয়াত অমল দত্ত একটা কথা খুব বলতেন, “বাচ্চা না কাঁদলে মায়েরা দুধ দেয় না।” জেলা ফেডারেশনের স্বার্থে এই সংস্থার কর্তারা “কাঁদতেই” জানলেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here