ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : কয়েকদিন আগে ভার্চুয়াল পুজো উদ্বোধনের সময় আইএফএ সচিব অনির্বান দত্তকে পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কি সেই পরামর্শ? কুঁদঘাট এলাকায় অজয় সংঘতি ক্লাবের এক সামাজিক কাজে আইএফএ সচিব অনির্বানকে এগিয়ে আসার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অনির্বানকে সেই দিন মুখ্যমন্ত্রী বলছিলেন,’শুধু খেলাধূলা নিয়ে থাকলেই হবে না। সমাজের আরও অন্য কাজেও এগিয়ে আসতে হবে। তোমার বাবা প্রদ্যোৎদাও করতেন। প্রদ্যোৎদার সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। ওই সময় ‘সবুজ বাঁচাও’,’সুভাষ সরোবর বাঁচাও’ আন্দোলনে প্রদ্যোৎদা,কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় আমাকে ভীষনভাবে সাহায্য করেছিলেন। আমি তাঁদের প্রতি ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ। ওনাদের আত্মার প্রতি আমি সম্মান জানাই। অনির্বান তুমিও এই কাজগুলি করবে।” মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ ফেলে রাখেননি অনির্বান। এগিয়ে এসেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘটনার চারদিন পরে উত্তর কলকাতার বৌবাজারের ৮৮ বছরের পুরনো ‘চুনাপুকুর সার্ব্বজনীন সাবেকি দূর্গোৎসবের মন্ডপেও উঠে এল ফুটবল প্রশাসক প্রয়াত প্রদ্যোৎ দত্তর প্রসঙ্গ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানিয় বিধায়ক নয়না দাস, প্রাক্তন ফুটবলার প্রশান্ত ব্যানার্জির সঙ্গে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত। চুনাপুকুরের প্রাচীন এই পুজো মন্ডপে দাঁড়িয়ে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে স্মরণ করলেন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক প্রয়াত প্রদ্যোৎ দত্তকে।
অনির্বানকে মনে করিয়ে বিশ্বরূপের আবেদন,”প্রদ্যোৎদার মতো এত ভাল ক্রীড়া সংগঠক আমি দেখিনি। তিনি অনেক ভাল কাজ করে গিয়েছেন। তাঁর অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তাঁর অকাল প্রয়ানে ক্ষতি হয়েছে বাংলার ফুটবলের। প্রদ্যোৎদার যোগ্য সন্তান অনির্বানকে বলব,আপনি কনিষ্ঠ সচিব। ভাল কাজ করছেন। এবার বাবার অপূর্ণ কাজ আপনি পূরণ করুন। মায়ের সামনে আপনার কাছে এটাই আমাদের আবেদন।”
বিশ্বরূপবাবুর আবেদন মেনেই ভাল কাজ করা,বাবার অপূর্ণ কাজ পূরণ করার চেষ্টায় যে তাঁর ত্রুটি থাকবে না তা পরিস্কার জানিয়েছেন অনির্বান। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় পত্নী নয়না দাস চুনাপুকুরের পুজো উদ্বোধন করতে এসে তিনিও মোহনবাগান,ইস্টবেঙ্গল প্রসঙ্গে ঢুকে পড়েন।
নয়নার কথায়,”এই চুনাপুকরের পুজোটা অনেক পুরনো। থিমে বিশ্বাসী নয় পুজো কমিটি। পাড়ার সবাই একজোট হয়ে সুষ্ঠুভাবে পুজো করেন। এমন এক সাবেকি পুজোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাজির খেলাধূলোর জগতের ব্যক্তিত্বরা। দেখে ভাল লাগছে। আমিও এই এলাকায় বড় হয়েছি। আমরা বাঙাল। বাড়ির সবাই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। একমাত্র আমিই মোহনবাগানের সমর্থক। বাঙাল পরিবার থেকে আমাকে মোহনবাগানী করেছে এই ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষরা আর টুটু বসু।”
একদিকে মা শীতলা মননদির, অন্যদিকে শিব মন্দির, গীতা মন্দির। তারই মাঝে বিরাজ করছে চুনাপুকুর সার্ব্বজনীন দূর্গা মন্ডপ। পুরনো কলকাতার পুরনো পুজো। ঐতিহ্য আছে। বর্তমান থিম পুজোর তীব্র প্রতিযোগিতায় না গিয়ে সাবেকি ঘরানা ধরে রেখেছে এই চুনাপুকুর সার্ব্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি।
এদিন, সার্ব্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির সভাপতি বিশ্বরূপ দে’র উদ্যোগে কমিটির সদস্যরা এলাকার পাঁচ প্রবীন ব্যক্তিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত বলেন,”একটা সময় এই এলাকাতেই আমাদের পরিবার থাকত। এখন দক্ষিণ কলকাতায় থাকলেও এখানকার ঐতিহ্য সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। এখন থিম পুজোর ভিড়। তার মধ্যেও এমন এক সাবেকি পুজোর মন্ডপে এসে ভাল লাগছে। ৮৮ বছর ধরে এই পুজো চলছে। ভাবা যায় না। বিশ্বরূপদা দক্ষ প্রশাসক। আমি ক্রীড়া সংগঠকের কাজ করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে বিশ্বরূপদারও পরামর্শ নিই। আমার লক্ষ্য খেলাধুলা নিয়ে ভাল কাজ করা।”