ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,১০ নভেম্বর : ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ছায়াছবির গুনময় বাগচির কথা মনে পড়ে? কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিত রায় তাঁর ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এ তুলে ধরেছিলেন বাংলার একদা প্রিয় ব্যায়াম ও বডি বিল্ডিংকে। সত্যজিতবাবু ব্যায়ামবীর হিসেবে গুনময় বাগচি নামে যে চরিত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁর আসল নাম মলয় রায়। তিনি প্রকৃত অর্থেই ব্যায়ামবীর ছিলেন। আট বার ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’খেতাব জিতেছিলেন। তাঁর আর একটা পরিচয় আছে। মলয় রায় হলেন মনোতোষ রায়ের পুত্র।
কে এই মনোতোষ রায়? বডি বিল্ডিংয়ে মনোতোষবাবুই এশিয়ার প্রথম বডি বিল্ডার যিনি প্রথম ব্রিটেনে “বিশ্বশ্রী” খেতাব জিতেছিলেন। বাংলার বডি বিল্ডিংকে এক ধাক্কায় অনেক উপরে তুলে ধরেছিলেন। তিনি বাংলার গর্ব।
বডি বিল্ডিংয়ের শুরু নাকি গ্রীক ও মিশরে হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এই বডি বিল্ডিংয়ের চল শুরু হয়েছিল বিষ্ণু চরণ ঘোষ,মনোতোষ রায়দের হাত ধরে। এমনটাই শোনা যায়। পরবর্তীকালে মনোহর আইচ, কমল ভান্ডারি, হীতেন রায়,মলয় রায়,তুষার শীলরা বাংলার বডি বিল্ডিংকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। বর্তমানে বাংলার বডি বিল্ডিংয়ে তারকা কে? এই প্রজন্ম জানে না। খোঁজও নেয়না কেউ। বর্তমানে সমীর ঘোষ বাংলার মুখ। কিন্তু আমরা কয়জন জানি তাঁর কথা?
ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে বাংলার বডি বিল্ডিং। বডি বিল্ডিংয়ের রাজ্য সংস্থা একটা সময় “বেঙ্গল কাপ” প্রতিযোগিতা করত। যোগাসনে ৩২ বছর ও বডি বিল্ডিংয়ে ১৬ বছর ধরে এই বেঙ্গল কাপ হয়েছে। এখন সেটাও গত ছয় বছর ধরে বন্ধ হয়ে গেছে।
কেন পিছিয়ে পড়ছে? পাড়ায় পাড়ায় এখন জিমনাসিয়ামে জিম করতে যায় তরুণ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা। তাহলে বডি বিল্ডিংয়ে আসছে না কেন? উত্তর দিতে গিয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল বডি বিল্ডিংয়ের সভাপতি তুষার শীল ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-কে বলছিলেন,”ঠিকই বলেছেন। এখন বহু ছেলে-মেয়ে জিম করে। কিন্তু বডি বিল্ডিংয়ে আসছে না। সত্যি বলতে কি, বাংলায় এখন প্রতিযোগিতা কমে গিয়েছে। “বঙ্গবীর”,”মিস্টার বেঙ্গল”-এর মতো দু-তিনটে প্রতিযোগিতা হয়। আসলে কোনও কিছুতেই ধারাবাহিক ভাবে চলে না। এখানেও তাই হয়েছে। আমাদের সেই পুরনো দিন ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদেরকেই। এবার বরনগরে ভাল একটা প্রতিযোগিতা হবে। এভাবেই আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে।”
বিটি রোডের “হ্যাবিট ক্লাসিক”-এর পরিচালনায় বরনগরের প্রগতি ময়দানে আগামী ২৭ ও ২৮ নভেম্বর বডি বিল্ডিংয়ের জমকালো প্রতিযোগিতা শুরু হতে যাচ্ছে। বাংলায় বহু দিন পর ফের এক উচ্চমানের বাংলায় হতে যাওয়া এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে আছে ওয়েস্ট বেঙ্গল বডি বিল্ডিং সংস্থা ও ফিজিক স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন। পাঁচ লক্ষ টাকার বাজেটের এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন পাবেন এক লক্ষ টাকা। বাকি প্রতিযোগীদেরও অর্থ প্রাপ্তিযোগ থাকছে। এমনটাই দাবি প্রতিযোগিতার সংগঠকদের। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,আসন্ন ১৩ তম ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপের সিলেকশনও এই প্রতিযোগিতায় হবে বলে জানা গিয়েছে।
বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে প্রতিযোগিতার ঘোষণা অনুষ্ঠানে এসে বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্বপন (বাবুন) ব্যানার্জি বলেন,”বডি বিল্ডিং হল বাংলার গর্ব। কত কিংবদন্তি এই বডি বিল্ডিংকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাকে তুলে ধরেছেন। এই প্রতিযোগিয়ায় উপস্থিত থাকার জন্য আমি রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীকে অনুরোধ করব। আমরা সবাই এক হয়ে বাংলার বডি বিল্ডিংয়ের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে চাই।”